আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে আফ্রিকা। কুমোরটুলি থেকে দুর্গা প্রতিমা এখন সাগরপাড়ি দিচ্ছে ঘন ঘন।
চলতি বছরেই যেমন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের কাছে নিউ জার্সি থেকে ফোন এসেছিল জানুয়ারি মাসে। চাই ছ’ফুটের দুর্গা প্রতিমা। মিন্টু জানান, শুধু নিউ জার্সি নয়, আমেরিকার বিভিন্ন শহরে যেখানে আগে পুজো হতো না, সে সব জায়গা থেকেও বাঙালি পুজো উদ্যোক্তারা ফোন করে বরাত দিচ্ছেন। বিদেশে পুজোর সংখ্যা বাড়ায় খুশি কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। স্টুডিয়োয় মিন্টু বলেন, ‘‘নিউ জার্সিতে প্রতিমা জুন মাসেই পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বার সাতটি প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়েছি।’’
ভারত থেকে আমেরিকায় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক জটিলতায় চিন্তিত ছিলেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। শুল্ক বাড়ায় দুর্গা প্রতিমার যদি দাম বেড়ে যায়, তা হলে বরাত কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন অনেকেই। তবে মিন্টু বলেন, ‘‘শুল্ক বাড়ার জটিলতায় এখনও পর্যন্ত প্রতিমা পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়েনি। এটা একটা স্বস্তি।’’
কুমোরটুলির অলিগলিতে ঘুরে জানা গেল, কয়েক বছর আগে হাতে গোনা কয়েক জন শিল্পী বিদেশে প্রতিমা পাঠাতেন। এখন সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। প্রতিমা যাচ্ছে লন্ডন, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চিন, উগান্ডা, কেনিয়ায়। এমনকি, যে সব জায়গায় পুজো হত না কয়েক বছর আগে, সেই দুবাই আর শারজাতেও। শিল্পী অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘কলকাতার পুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ায় বিদেশের বাঙালিরা দুর্গাপুজো করতে আরও উৎসাহিত হচ্ছেন বলে মনে হয়। এ বার আমি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে প্রতিমা পাঠিয়েছি।’’
বেশ কয়েক জন শিল্পী জানাচ্ছেন, বিদেশে যে সব প্রতিমা যায়, তার কাজ ডিসেম্বর বা জানুয়ারি থেকে শুরু করতে হয়। সেগুলি বেশির ভাগই হয় ফাইবারের। প্রতিমার বিভিন্ন অংশ খুলে রাখা যায়। প্রতিমা বাক্সবন্দি করে জাহাজে ভাসিয়ে দেওয়া হয় মে বা জুন মাস নাগাদ। আমেরিকা, কানাডার মতো দেশে জাহাজে যেতেও দু’-তিন মাস সময় লাগে। মিন্টুর মতে, বিদেশে পাঠানোর প্রতিমার দাম এক বা দেড় লক্ষ টাকা থেকে শুরু হয়।
যে সব প্রতিমা বিদেশে যাচ্ছে, সেগুলি পাঠানোর ছবি মোবাইলে রেখে দেন শিল্পীরা। কুমোরটুলির এক শিল্পী বলেন, ‘‘বিদেশের যাঁরা প্রতিমা নেন, তাঁরা তো এখানে আসতে পারেন না। আগের প্রতিমা, যেগুলো বিদেশে গিয়েছে, তার ছবি পাঠাই আমরা। কী ভাবে বাক্সবন্দি করে পাঠানো হবে, তার ছবিও পাঠাতে হয়। প্রতিমার সাজসজ্জার ছবিও দিই। সব কিছু পছন্দ হলে তবেই মেলে বরাত।’’ সুবল পাল নামে আর এক শিল্পী বলেন, ‘‘আমি এ বার তিনটি প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়েছি। এ বার অন্তত শুল্ক বেড়ে যাওয়ার কোনও প্রভাব পড়েনি।’’ শিল্পীরা জানালেন, থিম নয়, সাবেক প্রতিমাই পছন্দ করেন বিদেশের বাঙালিরা।
শুধুমাত্র প্রতিমা যাওয়াই নয়, কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা সাজানোর জন্য শিল্পীদেরও বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানালেন মিন্টু। তিনি বলেন, “আমি দুবাই, শারজা গিয়েছি প্রতিমা সাজানোর জন্য। এই বছর পাঠানো হয়েছে ঢাকও। প্রতিমার মতো বাক্সবন্দি করেই ঢাক যাচ্ছে বিদেশে।”
বিদেশের পুজোয় হয়তো কাশফুল নেই। তবে কুমোরটুলির প্রতিমা, ঢাকের আওয়াজের বন্দোবস্ত করতে পেরেছেন প্রবাসীরা। আগামী বছরগুলিতে আরও বেশি বরাত পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)