মায়ের কাছে রয়েছে প্রচুর টাকা। পারিবারিক সেই টাকার পরে প্রতি মাসে মা ঘরভাড়া বাবদ টাকাও পান। কিন্তু ছেলে কোনও ব্যবসাতেই কিছু করে উঠতে পারছে না দেখেও মা তাঁকে সেভাবে সাহায্য করেন না। এই ধারণা থেকেই মায়ের উপরে ছেলের শারীরিক নিগ্রহ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা! তেমনই নিগ্রহের সময়েই মা-কে বেধড়ক মারধর করেন ছেলে। তাঁর মুখ ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে। আঘাত লাগে মাথায়ও। এর জেরেই শুক্রবার গভীর রাতে বেলেঘাটার কবি সুকান্ত সরণিতে মৃত্যু হয় পঁয়ষট্টি বছরের নন্দিতা বসুর। এই ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত এমনই তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। রবিবার ওই প্রৌঢ়ার ছেলে, পঁয়ত্রিশ বছরের মৈনাক বসুকে আদালতে তোলা হলে আগামী ২৭ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ হয়।
ধৃতের আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মৈনাক তেমন কোনও কাজ করে না। সম্প্রতি মোটরবাইক কিনে অনলাইনে খাবার আনানোর একটি সংস্থার হয়েকাজ করছিল। কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই গন্ডগোল লাগত তার। রাগের মাথায় মাকেমারধর করার কথা পুলিশি জেরায় মৈনাক স্বীকারও করেছে বলে পুলিশের দাবি। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, পুলিশকে মৈনাক জানিয়েছে, সে অনুশোচনায় ভুগছে। মারধর করার সময়ে এই ভাবে যে মায়ের লেগে যাবে, তা সে বোঝেনি। তবে মৈনাকের আত্মীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে সে মানসিক রোগে ভুগছে। সেই রোগ থেকেই মায়ের কাছে প্রচুর টাকা রয়েছে বলে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল তার। মায়ের উপরে সন্দেহ থেকেই হিংস্র হয়ে উঠত সে।
যদিও সরকারি আইনজীবী এ দিন আদালতে ধৃতকে পুলিশি হেফাজত পাঠানোর আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘‘আদালতে হাজির করার আগে সরকারি হাসপাতালে মৈনাকের শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর মানসিক অসুস্থতার কোনও লক্ষণ পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৈনাক আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’’ তদন্তকারীদেরও দাবি, জেরায় প্রাথমিক ভাবেমৈনাকের মানসিক সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়নি। তবু এই ঘটনায় সরাসরি খুনের মামলা না করে পুলিশ অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোরধারায় মামলা করেছে। পুলিশের দাবি, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হবে।
মৈনাকের হয়ে এ দিন মামলা লড়েন আইনি সহায়তার আইনজীবী। তিনি মৈনাকের জামিনের আবেদন করে প্রশ্ন তোলেন, নন্দিতাকেমারধর করা হলে আগে কেন পুলিশকে তা জানানো হয়নি? বিচারক অবশ্য এই দাবি উড়িয়েদেন। সওয়াল-জবাবের পরে বিচারক ধৃতের জামিনের আর্জি খারিজ করে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোরইনির্দেশ দেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)