Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Cyber Crime

সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের হাতিয়ার কি শুধুই সচেতনতা

কলকাতা পুলিশের এলাকাতেই গত এক বছরে সাইবার অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬২ শতাংশ। কিন্তু চার্জশিট পেশ করে শাস্তির ব্যবস্থা করার সংখ্যা অভিযোগের থেকে অনেক কম।

সাইবার অপরাধীদের বড় অংশেরই নাগাল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা?

সাইবার অপরাধীদের বড় অংশেরই নাগাল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা? প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১০:০৩
Share: Save:

ধরপাকড় যত না হচ্ছে, তার চেয়েও কি বেশি হচ্ছে প্রতারিতের ‘বোকামি’ নিয়ে আলোচনা? কড়া ধারা প্রয়োগ করে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা যত না হচ্ছে, তার চেয়েও কি বেশি হচ্ছে শুধুমাত্র সচেতনতা প্রচার করেই ‘কার্যোদ্ধারের’ চেষ্টা? গত কয়েক বছরে দ্রুতবাড়তে থাকা সাইবার অপরাধ এবং তার সমাধানের হার দেখে এই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে। তাঁদের আরও প্রশ্ন, মানুষ তো সচেতন হবেনই, কিন্তু পুলিশই বা অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কী করছে? তবে কি এখনও সাইবার অপরাধীদের বড় অংশেরই নাগাল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা?

এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে পুলিশেরই একটি পরিসংখ্যান থেকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশের এলাকাতেই গত এক বছরে সাইবার অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬২ শতাংশ। কিন্তু চার্জশিট পেশ করে শাস্তির ব্যবস্থা করার সংখ্যা অভিযোগের থেকে অনেক কম। মাত্র ১২ শতাংশ ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পেরেছেন। রাজ্য পুলিশে চিত্রটা আরও খারাপ। সেখানে গত এক বছরে ৭২ শতাংশ বেশি অভিযোগ জমা পড়লেও গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে মাত্র নয় শতাংশ ক্ষেত্রে। এই প্রেক্ষিতেই কিছু দিন আগে তদন্তে সুবিধা হবে ধরে নিয়ে সিআইডি-তে সাইবার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এলাকার ১৮টি থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসিদের নিয়ে সাইবার অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এর পরেও পরিস্থিতি যে বদলাচ্ছে না, তা মানছেন বাহিনীর একটি বড় অংশই। তাঁদের দাবি, এই মুহূর্তে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ আসছে অত্যন্ত বেশি। একটি মামলা নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট নথিভুক্ত করতে করতেই অভিযোগ আসছে অন্তত আরও তিনটি। ফলে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা মামলা বুঝে এগোনোর নির্দেশ দিচ্ছেন। লালবাজারের সাইবার শাখার এক তদন্তকারী অফিসার বললেন, ‘‘প্রথমেই বলা হচ্ছে, মামলা বুঝে অগ্রাধিকার দিতে হবে। খুব বেশি টাকার প্রতারণা না হলে বা সমাজের প্রভাবশালী অংশের তরফে অভিযোগ না এলে সেগুলি রাখা হচ্ছে পরে দেখার তালিকায়। এর পরেও যে বড় অভিযোগগুলি নিয়ে বসা হচ্ছে, সেগুলিও সংখ্যায় যথেষ্ট বেশি। যে সংখ্যক পুলিশকর্মী নিয়ে এই কাজ করতে হচ্ছে, তাতে খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো অবস্থা হচ্ছে।’’ আর এক তদন্তকারী অফিসারের মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের প্রতারকেরা এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা ভেদ করে তাদের ট্র্যাক করতে গেলে উঁচু মহলের অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি পাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার আগেই অপরাধীরা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তা ছাড়া, এরা যে কোনও জায়গা থেকে প্রতারণা চালায়। তাই ট্র্যাক করেও অনেক সময়ে লাভ হয় না। খোঁজ গিয়ে শেষ হয় ফাঁকা প্রান্তরে!’’

সাইবার গবেষক তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘রাখে প্রযুক্তি, অপরাধীদের মারে কে?’’ তিনি জানান, ‘টর ব্রাউজ়ার’ নামে ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেশির ভাগ প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। সাইবার অপরাধীকে ধরা সম্ভব তার আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করার মাধ্যমে। কিন্তু টর ব্রাউজ়ারে যে হেতু সেই আইপি অ্যাড্রেসই গোপন থাকে, সে হেতু সহজে অপরাধীর হদিস মেলে না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেউ নাকতলায়, না কি নাইজিরিয়ায় বসে অপরাধ করছে, তা বোঝাই যায় না। মোবাইল নম্বরের মাধ্যমেও এদের ধরা কঠিন। কারণ, অনলাইনে সহজেই পাওয়া যায় যেমন খুশি ‘ভার্চুয়াল মোবাইল নম্বর’। সেই নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে বা ফোন করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা যায়। ধরতে গেলে হদিস মেলে না সেই মোবাইল ফোন নম্বরের ব্যবহারকারীর। পুলিশও মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের মতো অভিযোগ বেছে নিয়ে এগোয়।’’

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা যদিও বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ দমনের কাজে সুবিধা হতে পারে, এমন বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা এবং সেই সংক্রান্ত নিয়োগের আবেদন প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেটা হয়ে গেলেই অপরাধ দমন সহজ হবে।’’ কিন্তু তত দিন কী উপায়? সেই ঘুরে-ফিরে নাগরিক সচেতনতার কথাই বলছেন পুলিশকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE