Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লাগামহীন দাদাগিরিতেই হোম যেন নরক

অভিযোগ উঠেছে, সংশোধনের মতো পরিবেশ না থাকার কারণেই আবাসিকেরা বারবার পালিয়ে যায় এবং বিদ্রোহ শুরু করে এই হোমে। আর তার পিছনে শুধু কর্তৃপক্ষের অত্যাচার নয়, রয়েছে হোমের কয়েক জন আবাসিকের ‘দাদাগিরি’ও।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া নাবালকেদের আশ্রয়স্থল এটি। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট মেনে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড নাবালকদের অপারাধের মাত্রা বিচার করে এই হোমে পাঠায় সংশোধনের জন্য। কিন্তু সম্প্রতি আড়িয়াদহে উপস্থিত এ রাজ্যের সব থেকে বড় জিসিএল হোম ধ্রুবাশ্রমে গোলমাল-মারপিট, জিনিসপত্র ভাঙচুর করে ২৫ জন আবাসিকের পালানোর পিছনে উঠে এসেছে সেখানে চলা জঙ্গলরাজের ছবি।

অভিযোগ উঠেছে, সংশোধনের মতো পরিবেশ না থাকার কারণেই আবাসিকেরা বারবার পালিয়ে যায় এবং বিদ্রোহ শুরু করে এই হোমে। আর তার পিছনে শুধু কর্তৃপক্ষের অত্যাচার নয়, রয়েছে হোমের কয়েক জন আবাসিকের ‘দাদাগিরি’ও।

অভিযোগ, এর ফলে এই হোমে কেউ এক বার এলে সংশোধন নয়, বরং বেশির ভাগই দাগি অপরাধী হয়ে বেরোয়। আর প্রতিকার হিসেবে দফতরের একাংশের দাবি, সুপার বা অ্যাসিট্যান্ট সুপারকে বদলি করে কোনও সমাধান হবে না। জঙ্গলরাজ সাফাইয়ের জন্য দরকার সেখানকার গ্রপ-ডি থেকে শুরু করে রাধুঁনিকেও বদলি করা। না হলে ধ্রুবাশ্রমে এমনটা চলতেই থাকবে বলে অভিযোগ দফতরের একাংশের। যদিও ডিরেক্টরেট অধিকর্তাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি এসএমএস-এরও। আর রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, পুরো অভিযোগের তদন্ত করে একটি রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীন হলেও হোম সংক্রান্ত দেখভাল ও নজরদারি দায়িত্ব দফতরের ডিরেক্টরেটরেটের উপরে। কিন্তু অভিযোগ, হোমের ভিতরে কী কী ঘটছে, তা ডিরেক্টরটের অধিকর্তা বা সচিবের কাছে পৌঁছয় না। অথচ সকলেই জানেন, ‘‘ধ্রুবাশ্রমে হোমের নামে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে!’’ কারণ খাতায়-কলমে সুপার, অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার থাকলেও রোজ তাঁদের হোমে দেখা মেলে না। এলেও হোম পরিচালনা নিয়ে কোনও মাথা ঘামান না তাঁরা। বরং এই হোম চলে আবাসিক দুই ভাইয়ের অঙ্গুলি-হেলনে। যার পিছনে রয়েছে হোমের এক রাঁধুনির হাত, যিনি এক সময়ে এই হোমের আবাসিক ছিলেন! ফলে দুই ভাই নজরদারিতে থাকার নির্দেশে হোমে আশ্রয় পেলে তারা আরাম ভোগ করে বাড়ির মতো! অনেক সময়েও বাইরে রাত কাটিয়ে সকালে হোমে ফিরে কোনও দিন কর্তৃপক্ষ কোনও বারণ করেননি, পদক্ষেপও করেরনি। সেখানেও হাত রাঁধুনির।

অভিযোগের খতিয়ান এখানেই শেষ নয়। কোনও বাবা-মা ছেলেদের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে এই দুই ভাই, যারা নিজেরাও জুভেনাইল আইনে অভিযুক্ত! অথচ আবাসিকের বাবা-মা ছেলেদের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ পান বোর্ড থেকে। কিন্তু সেই নির্দেশ এনেও তাঁরা ছেলেদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। আগে এই দুই আবাসিক ভাইকে টাকা না দিলে ছেলের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ খোদ অভিভাবকদের।

কিন্তু এমনটা চলে কী করে?

দফতরের একাংশ জানাচ্ছে, সংশোধনের জন্য রয়েছে বেশ কিছু পদ্ধতি ও প্রকল্প। কিন্তু তার কোনওটাই এ হোমে নেই। এই হোমে যারা আসে, তাদের বেশির ভাগই নাবালক অবস্থায় অপরাধ করে ফেলে। ফলে একটি জেলে থাকা বন্দি আবাসিকদের আর হোমের আবাসিকদের সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এখানে খাওয়া আর আশ্রয় ছাড়া আর কোনও কিছুর পরিষেবা মেলে না। পড়াশোনা, খেলাধুলো কিংবা কাউন্সেলিংয়ের কোনও কোনও ব্যবস্থাই বাস্তবে নেই। ফলে অনেকেরই মতে, অভিভাবক ছাড়া লাগকামহীন জীবনে ঢুকে পড়ার আদর্শ জায়গা ধ্রুবাশ্রম! তার একাধিক প্রমাণও রয়েছে। যারা নাবালক হয়ে আসার পরে যখন ছাড়া পেয়েছে, তাদের কোনও সংশোধন তো হয়নি। ফের অপরাধে যুক্ত হয়ে জেলের ভিতরে ঢুকতে হয়েছে।

দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, শুধু সুপার এবং অ্যসিট্যান্ট সুপার নন, ধ্রুবাশ্রমে বদল আনতে প্রয়োজন সেখানকার আমূল পরিবর্তন। না হলে এই হোম দাগি অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE