দমকলকর্মী স্নেহাশিস রায়। —ফাইল চিত্র।
দমকলকর্মী স্নেহাশিস রায়কে খুন করতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই নেমেছিল দুষ্কৃতীরা। মাস দুয়েক ধরে স্নেহাশিসকে কার্যত ছায়ার মতো অনুসরণ করা হয়। তাঁর যাবতীয় গতিবিধি, তিনি কোন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন, ফ্ল্যাটের নীচে কোথায় মোটরবাইক রাখেন, সব কিছুই নজরে রাখা হচ্ছিল।এমনকি, আলাদা করে প্রতিটি জায়গার স্কেচও আঁকা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা তাদের এ-ও জানিয়েছে, বাইক থেকে নামার পরে স্নেহাশিসের ১১ বছরের মেয়ের ফ্ল্যাটে ঢুকতে কত ক্ষণ লাগে, সেই হিসাবও করে রেখেছিল তারা। যাতে গুলি চললে মেয়েটির কোনও ক্ষতি না হয়। খুনের ঘটনায় ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই সব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার আকাশ মল্লিক নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে লেক টাউন থানা। বৃহস্পতিবার রাতে আয়ুষ শর্মা ও আফরোজ আনসারি নামে দুই ভাড়াটে খুনিকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, আকাশ খুনের ঘটনার সময়ে দুষ্কৃতীদের স্নেহাশিসকে চিনিয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর যাতায়াতের রাস্তার স্কেচও এঁকেছিল। জেরার মুখে আকাশ সব কথা স্বীকার করেছে বলেও দাবি পুলিশের। তাকে সোদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দমদমে গত বছরও স্নেহাশিসকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলদুষ্কৃতীরা। পুলিশের দাবি, স্নেহাশিস সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, মোটরবাইকে ধাক্কা লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হামলা হয়েছিল। তবে তাঁর মৃত্যুর পরে বিধাননগর পুলিশ মনে করছে, বাইকে ধাক্কা উপলক্ষ মাত্র। আসলে দুষ্কৃতীরা যে কোনও কারণেই হোক, তাঁকে মারতেচাইছিল। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘দু’টি বাইকে ধাক্কা লাগায় এক জন মানুষকে খুন করে দেওয়া হবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না।দু’পক্ষের মধ্যে তার চেয়েও বড় কোনও শত্রুতা ছিল। যে কারণে গত বছর গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পরেও স্নেহাশিসকে খুনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়নি।’’
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, গত বছর ওই হামলার পরে স্নেহাশিস সম্ভবত নিজের বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই রাস্তাবদল করে যাতায়াত করতেন। সেই কারণে তাঁকে খুন করতে ফ্ল্যাটের নীচে বাইক রাখারজায়গাটিকেই বেছে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কারণ, তারা জানত, রাস্তা বদলালেও ওই জায়গাটি স্নেহাশিস বদলাতে পারবেন না। এত রকম তথ্য জানা সত্ত্বেও কে বা কারাস্নেহাশিসকে খুন করাল, এখনও পর্যন্ত তা জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। ধৃতেরা যা যা জানিয়েছে, তা-ওখতিয়ে দেখা হবে বলে জানায় পুলিশ। তাদের মতে, একটি বড় অপরাধের ঘটনা যে ভাবে সংঘটিত হয়, স্নেহাশিসকে খুনের পরিকল্পনাও সে ভাবেই করা হয়েছিল। এমনটাই দাবি করেছে ধৃতেরা। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, এক লক্ষ টাকায় স্নেহাশিসকে খুনের চুক্তি হয়েছিল। যার মধ্যে মাত্র ছ’-সাত হাজার টাকা তারা পেয়েছে।
এক আধিকারিক জানান, ধৃতেরা আদালতে স্বীকার করেছে যে, তারাই গুলি চালিয়েছে। কিন্তু কে বা কারা ‘সুপারি’ দিয়েছিল, তা তারা জানে না বলেই পুলিশের কাছে দাবি করেছে। প্রত্যেকেই দাবি করেছে, তাদের এক জন করে পরিচিত খুনের প্রস্তাব দিয়েছিল। এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েক জন জড়িত বলেই বিশ্বাস পুলিশের। তাদের খোঁজেই এখন হাতড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy