পথে নেমেছে মোবাইল এটিএম। কার্ড সোয়াইপ করলেই মিলছে ১০ টাকার কয়েন থেকে ১০০ টাকার নোট সবই। এ ক্ষেত্রেও অবশ্য টাকা তোলার সীমা বাঁধা সেই আড়াই হাজারেই। মঙ্গলবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষণা করেছিলেন ৮ নভেম্বর। সেই ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে দু’সপ্তাহ। প্রথম কয়েক দিন আমজনতার মূল সমস্যা ছিল, হাতে থাকা অচল পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট নিয়ে তাঁরা কী করবেন। এর পরে ২০০০ টাকার নোট আসায় নতুন সমস্যা দাঁড়াল, ওই নোট কোথায় ভাঙানো যাবে। সেই জন্য একশোর নোটের জন্য শুরু হয়েছিল হাহাকার। আর, রবিবার বিকেলে কলকাতার কয়েকটি এটিএমে পাঁচশোর নতুন নোট ঢোকার পর সাধারণ মানুষ এখন তার সন্ধানে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন।
এর একটি কারণ, এখন বহু এটিএম থেকেই ১০০ টাকার নোংরা, ছেঁড়া নোট বেরোচ্ছে। সেটা রাস্তাঘাটে কেউ নিচ্ছেন না। একমাত্র উপায় ব্যাঙ্কে গিয়ে ফের লাইনে দাঁড়িয়ে ওই নোট বদলানো। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক চা-দোকানি ছেঁড়া একশোর নোট নিয়ে ক্রেতাকে বললেন, ‘‘আমাকে আরও দশটা টাকা দিন। এই নোট বদলাতে ব্যাঙ্কে যেতে হবে, তার গাড়িভাড়া।’’ আবার, ডালহৌসির পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষী হীরালাল বিশ্বাস ব্যাঙ্ক লাগোয়া এটিএম থেকে টাকা তুলে দেখেন, পাঁচটি পুরনো একশোর নোটের তিনটিই ছেঁড়া।
বহু এটিএমের সামনে গিয়ে টাকা তুলে ফেরা লোক কিংবা নিরাপত্তারক্ষীকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘দাদা, ৫০০ বেরোচ্ছে?’’ এক সপ্তাহ আগে প্রশ্নটা ছিল, ‘‘দাদা, বেরোচ্ছে?’’ মানে এটিএমে নগদ আদৌ আছে কি না। তখন ছিল বৈধ নোটেরই সঙ্কট। এখন সেটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে খুচরোর সঙ্কটে।
মঙ্গলবার বি বা দী বাগ এলাকায় চারটি আলাদা ব্যাঙ্কের এটিএমে ঘুরেও কাজ হয়নি নৈহাটির বাসব মণ্ডলের। শেষমেশ তিনি জানতে পারলেন, তাঁর কাজ হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পাশে এসবিআইয়ের এটিএমে। সেখানে তখন লম্বা লাইন। প্রায় ৪০ মিনিট লাইনে দাঁড়ানোর পরে কাজ হল বাসববাবুর।
কাজ মানে এটিএম থেকে টাকা তোলা। তবে এসবিআইয়ের এটিএমের লাইনে দাঁড়ানোর আগে বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাসববাবু যে চারটি এটিএমে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন, তাতে টাকা থাকলেও ছিল না ১০০ ও ৫০০-র নোট। এর মধ্যে আপাতত চাহিদা বেশি পাঁচশোর নোটেরই।
এ দিন বড়বাজার, ডালহৌসি তল্লাটের অধিকাংশ এটিএম চালু থাকলেও ৫০০ টাকার নোট ছিল না। অল্প কিছু জায়গায় ছিল ১০০ টাকার নোট। তবে অধিকাংশ এটিএমে গেলেই নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়ে দিচ্ছিলেন, শুধু ২০০০ টাকার নোট আছে। পাঁচশোর নতুন নোট ঢুকেছে, শুধু এই খবরেই বহু এটিএম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে একশোর নোট।
এর ফলে আরও একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটিএম থেকে দিনে নগদ তোলার সর্বোচ্চ সীমা আড়াই হাজার টাকা হলেও শুধু ২০০০-এর নোট থাকার কারণে বহু এটিএম থেকেই গ্রাহক ৫০০ টাকা কম পাচ্ছেন।
এর উপরে, ছোট ও পাতলা ২০০০-এর একটি মাত্র নোট বেরোতে গিয়ে অনেক সময়েই মেশিনে আটকে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ দিন সন্ধ্যায় চাঁদনি চক চত্বরে এইচডিএফসি-র একটি এটিএম থেকে টাকা তুলতে যাওয়া এক গ্রাহক বলছিলেন, ‘‘জোর বেঁচে গিয়েছি। ২০০০-এর নোটটা বেরোতে গিয়ে ভাঁজ হয়ে প্রায় আটকে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আমি নোটটা না-ও পেতে পারতাম। অথচ নথিতে থাকত, আমি টাকা তুলে নিয়েছি!’’
পেশায় গাড়িচালক, হাওড়ার বাসিন্দা সুশান্ত পাল আড়াই হাজার টাকা তুলতে গিয়ে ডালহৌসি পাড়ায় এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের এটিএমে ২০০০ টাকার একটি নোট পান। ওই এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘সকালে নতুন ৫০০ টাকার নোট এসেছিল। দুপুরের দিকেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন ২০০০ টাকার নোট আছে।’’
সব মিলিয়ে, নোট বাতিলের দু’সপ্তাহ পরে পাঁচশোর নতুন নোটেরই চাহিদা বেশি। এইচএফডিসি-র স্টিফেন হাউস শাখার এটিএম বুথে মঙ্গলবার দুপুর ২টো পর্যন্ত ৫০০ টাকার নোট ছিল। ফলে সকাল থেকে সেখানে দীর্ঘ লাইন। দুপুর ২টোর পর আবার লাইন ফাঁকা। তখন এটিএমে টাকা আছে ঠিকই। কিন্তু সবই ২০০০ টাকার নোট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy