Advertisement
E-Paper

ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ইঙ্গিত, সানি আত্মঘাতী

গত মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ নস্করহাটের বাসিন্দা শত্রুঘ্ন চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সানির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পড়শিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
সানি চৌধুরী

সানি চৌধুরী

কসবার নস্করহাটের বাসিন্দা, ষষ্ঠ শ্রেণির সানি চৌধুরীর মৃতদেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আত্মহত্যার দিকেই জোরালো ইঙ্গিত করছে বলে দাবি পুলিশের। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যার কথা উঠে এলেও বছর বারোর সানি ভাত খেতে খেতে উঠে গিয়ে কেন আত্মহত্যা করল, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। এ দিকে, এই ঘটনায় তৃতীয় অভিযুক্ত গৌরী সেনকেও শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ নস্করহাটের বাসিন্দা শত্রুঘ্ন চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সানির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পড়শিরা। তার পরেই সানির পরিবারের লোকজন কসবা থানায় প্রতিবেশী রঞ্জন সেন, তাঁর স্ত্রী গৌরী এবং ছোট ছেলে রণজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ছেলের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জানান, সানি ছুটির দিনগুলিতে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে রঞ্জনের বাড়িতে তাঁর নাতির সঙ্গে খেলতে যেত। কারণ, ওই বাড়ির ছাদে প্রচুর পোষা পায়রা রয়েছে। রয়েছে অনেক হাঁস-মুরগি এবং রঙিন মাছে ভর্তি অ্যাকোয়ারিয়াম।

মঙ্গলবার রঞ্জনদের সেই পোষা পায়রারই একটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। যেটিকে পরে সানি ও তার এক বন্ধু ফিরিয়ে দিয়ে যায় এবং জানায়, তারা ওই পায়রাটিকে স্থানীয় ধোপার মাঠে পেয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, রঞ্জন এবং তাঁর পরিবার পায়রা উড়ে গিয়েছে বলে সানিরা যে দাবি করেছিল, তা মানতে চাননি। উল্টে সানিকে ওই মাঠে নিয়ে গিয়ে সকলের সামনে বকাঝকা এবং মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।

সানির পরিবারের দাবি, মারধরের ফলে তার কান থেকে রক্ত পড়ছিল। পুরো ঘটনায় সানি এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, ওই দিন ধোপার মাঠ থেকে একা বাড়ি ফিরতে পারেনি সে। কারণ, বাড়ি ফিরতে গেলে রঞ্জনের বাড়ির উপর দিয়ে যেতে হত তাকে। সানি ভয় পাচ্ছিল, তাকে দেখলেই আবার মারধর করা হবে। এ কথা জানিয়েছে সানিরই এক বন্ধু। পরে ধোপার মাঠের কয়েক জন মিলে সানিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যান। কিন্তু সেই সময়ে সানির বাবা-মা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।

এর পরে বোন ভাত বেড়ে দিলে সানি খেতে বসে। অভিযোগ, এরই মধ্যে সানিদের বাড়িতে আসেন রঞ্জনের স্ত্রী গৌরী। তিনি এসে চিৎকার করে সানির নামে বিষোদ্গার করতে থাকেন। সানির পরিবার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে। চিৎকারে বাড়িওয়ালারাও বেরিয়ে আসেন। অভিযোগ, সকলের সামনে সানিকে চোর বলে অপমান করে গৌরী চলে যান। এর পরেই সানি ঘরে ঢুকে যায়। কিছু ক্ষণ পরে ঘরের পিছনের ছোট জানলা দিয়ে তার বোন দাদাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

সানির পরিজনেরা রঞ্জন, গৌরী ও রণজিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। যার ভিত্তিতে বুধবার রঞ্জন ও রণজিৎকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পলাতক গৌরীকে ধরা হয় শুক্রবার। পুলিশ মনে করছে, মারধর, শাসানি ও অপমানের চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছে সানি। যদিও সানির বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনেরা কেউ আত্মহত্যার কথা মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, সানি চুরি করেনি। ফলে তার আত্মঘাতী হওয়ারও কোনও কারণ নেই। সানিকে সবার আগে ঝুলন্ত অবস্থায় যে দেখেছিল, সানির সেই ছ’বছরের বোন অঞ্জলি ভয়ে-আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছে। মূক-বধির শিশুটি কোনও কিছু পরিষ্কার করে বলতে পারছে না ঠিকই, কিন্তু অন্য সময়ে সে যে ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করে, সেটাও বলছে না। দাদার ছবি দেখালে মাথা নেড়ে মায়ের পিছনে মুখ লুকিয়ে ফেলছে বারবার। আত্মীয়স্বজনেরা তাকে ইশারায় নানা ভাবে সে দিনের ওই সময়ের কথা জিজ্ঞাসা করে চলেছেন। কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা।

আর সানির মা-বাবা? একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বিধ্বস্ত দম্পতি যেন শোকে বাক্যহারা। তাঁদের মুখে একটাই কথা, ‘‘দাদু বলে ডাকত যাঁকে, তিনি কী করে আমার ছেলের সঙ্গে এ রকম করলেন!’’

Sunny Chowdhury সানি চৌধুরী Autopsy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy