এক জনের বৃদ্ধা মায়ের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা। আর সেটাই এক ধাক্কায় সাহসী করে তুলল বাগুইআটি-সাতগাছি রুটের বাকি ১২৯ জন অটোরিকশা চালককে। এতটাই যে, তাঁরা একযোগে তোলাবাজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন।
সেই তোলাবাজদের নেতা আবার শাসক দলের এক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী মহিলা সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। তবু রবিবার দুপুরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার আগে দু’বার ভাবেননি তাঁরা। ঘটনাচক্রে ওই অটোরিকশা চালকেরাও নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলে জানাচ্ছেন।
শনিবার রাতে অগ্নিদগ্ধ বৃদ্ধা রেণুকা বিশ্বাস (৬২) সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ মারা যাওয়ার পরে অটোরিকশা চালকদের ক্ষোভের আগুনও বেরিয়ে আসে। প্রকাশ্যেই তাঁরা মন্ত্রী ও সাংসদের নাম উল্লেখ করে জানান, তাঁদের প্রশ্রয়েই ওই তোলাবাজের বাড়বাড়ন্তের কথা।
অন্য দিকে, বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশকেও তোলাবাজদের বিরুদ্ধে পরপর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে। আট মাস আগে দায়ের হওয়া একটি তোলাবাজির অভিযোগের ভিত্তিতে দশদ্রোণ এলাকা থেকে প্রশান্ত সামন্ত, অভিজিৎ দাস এবং অনুপ সিংহরায় নামে তিন জনকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। অভিযুক্তেরা বিধাননগর পুর নিগমের ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল ওরফে ডাম্পির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ধৃতদের বিরুদ্ধে একটি নির্মাণ সংস্থার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে ডাম্পির বক্তব্য, ‘‘ওটা আমার ওয়ার্ড নয়। এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।’’
রবিবার রাতেই বিমানবন্দর থানা রাজু কুণ্ডু ও সঞ্জীব সরকার নামে দু’জনকে তোলাবাজির অভিযোগেই গ্রেফতার করে। এদের বিরুদ্ধে একটি ক্লাবের পক্ষ থেকে তোলা চেয়ে বহুতল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরে ডাম্পির নিজের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটে বলে অভিযোগ।
আর বাগুইআটি-সাতগাছি রুটের অটোরিকশা চালকেরা তোলাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ওই রুটের অচোটালকদের সংগঠনের সম্পাদক, বঞ্চু বিশ্বাসের মা রেণুকাদেবীর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায়। ওই সংগঠনও কিন্তু শাসক দল প্রভাবিত। কিন্তু ‘বহিরাগত’ তোলাবাজদের দাপটে সপ্তাহ দুয়েক পাড়া ছাড়া ছিলেন বঞ্চু। শনিবার মা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন শুনে সব ভয় ঝেড়ে ফেলে ছুটে এসে ছেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। বঞ্চুর বন্ধু-সহকর্মীদের একাংশের সন্দেহ, দিনের পর দিন ছেলের অনুপস্থিতি, তার ফলে অভাব, আতঙ্ক সব মিলিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তবে এই ব্যাপারে পুলিশ এখনও অভিযোগ পায়নি।
রবিবার থানায় জমা করা অটোরিকশা চালকদের অভিযোগে সাধন সরকার নামে তোলাবাজের নাম রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শাসক দল প্রভাবিত সংগঠন করলেও সেটা সাধনের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর। সেই জন্য চালকদের অনেকের ভোটার কার্ড, গাড়ির পারমিট কেড়ে নেওয়া হয়। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ৪৩টি অটো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সাতগাছি-বাগুইআটি অটো রুট রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভার অন্তর্গত। ওই বিধানসভা এলাকার বাইরে বসবাসকারী কিন্তু ওই রুটের চালকদের প্রত্যেকের কাছে আবার ২০০০ টাকা চাওয়া হয়। ক্ষুব্ধ অটো চালকেরা জানান, গাড়ি পিছু ২ লক্ষ টাকা করে তোলা নিয়ে বাগুইআটি-সাতগাছি রুটে বাইরের পারমিটহীন অটোরিকশা চালানো হচ্ছিল।
বঞ্চু বলেন, ‘‘স্ট্যান্ডে এসে রোজ আমাকে মারধরের হুমকি দিচ্ছিল সাধনের লোকজন। আমি ভয়ে বেশ কিছু দিন পাড়া ছাড়া ছিলাম।’’ বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের অভিযোগ, ‘‘সাধনের বিরুদ্ধে সাংসদ দোলা সেনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। অটো বন্ধ থাকায় আমাদের আর্থিক সমস্যার কথা জানাতে মাকে সঙ্গে নিয়ে সাংসদের কাছে গেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দেন।’’
যদিও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের বক্তব্য, ‘‘মিথ্যে কথা। আমরা দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিই না।’’ মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুরও দাবি, ‘‘সাধন নামে কারও সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। সবটাই অপপ্রচার।’’
সাধনের নামে পুলিশের খাতায় শুধু তোলাবাজি নয়, অস্ত্র আইন ও পুলিশ-নিগ্রহেরও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এমন এক জনকে পুলিশ ধরছে না কেন? বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ বলেন, ‘‘সাধনের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy