প্রতীকী ছবি।
সামান্য কয়েকটা কোড। অপরিচিতের কথা মতো সেই সব কোড নিজের ডায়াল প্যাডে পর পর বসিয়ে কেউ হারিয়েছেন নিজের ফোনের দখল, কেউ খুইয়েছেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা। কেউ তো আবার বুঝতেই পারেননি যে, তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে গিয়েছে। যত ক্ষণে বুঝেছেন, তত ক্ষণে সেই সব তথ্য ব্যবহার করে হয় ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকার ঋণ নেওয়া হয়ে গিয়েছে, নয়তো তাঁর নাম করে টাকা ধার করা হয়েছে তাঁরই ‘ফোন বুকে’ থাকা পরিচিতদের থেকে।
শুধু কলকাতা নয়, গত কয়েক বছর ধরে দেশের সব বড় শহরের পুলিশবাহিনীই এমন কোড নম্বরে জেরবার হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’মাসে এমন কোডের ফাঁদে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই প্রেক্ষিতেই এখন কোড নম্বর নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দিতে চাইছে লালবাজার। সম্প্রতি একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারা জানিয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তির কথা মতো যে কোনও ধরনের কোড নিজেদের ফোনে টাইপ করা চলবে না। কেউ এমন করতে বললে দ্রুত পুলিশকে জানাতে হবে।
কী এই কোড?
পুলিশ সূত্রের খবর, *#@-& এই ধরনের বিশেষ চিহ্ন পর পর বসিয়ে কোড তৈরি হয়। কোডগুলির এক একটির ব্যবহার এক-এক রকমের। কোনওটি দিয়ে ফোনের সম্পূর্ণ দখল নেওয়া যায়। কোনওটি ক্যামেরা, স্পিকার, মাইক্রোফোনের আলাদা করে দখল নিতে সাহায্য করে। আবার কিছু কোড এমন রয়েছে যা ব্যবহার করলে ফোনটি বিকল করা যেতে পারে। এমন কোড বসিয়ে ফোনের লক খোলা কোনও ব্যাপারই নয়।
পুলিশ জানাচ্ছে, মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারেরাই এক সময়ে নিজেদের প্রয়োজনে এই কোডগুলি তৈরি করেছিলেন। মূলত মোবাইল ফোন সার্ভিসের ক্ষেত্রে এগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের এক-একটি কোড যে কোনও মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থার নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তু ডার্ক ওয়েবের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে এই কোডের তালিকা ফাঁস হয়ে যায়। মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থার সার্ভার হ্যাক করে হ্যাকারেরাই ডিজিটাল বাজারে কোডগুলিকে বিক্রি করার জন্য তুলে দেয়। এই মুহূর্তে ভিডিয়ো নির্ভর সোশ্যাল মিডিয়া সাইটেও এমন কোড নির্ভর ভিডিয়োর ছড়াছড়ি।
কোডগুলিকে প্রতারণার কাজে লাগানো হচ্ছে কী ভাবে?
পুলিশ জানাচ্ছে, সব থেকে বেশি ব্যবহার হচ্ছে *২১* এবং *৪০১* কোড সংখ্যা দু’টি। কোনও একটি ফোনের ডায়াল প্যাডে এই কোড বসিয়ে কয়েকটি ধাপ পেরোলেই ওই ফোনের সব কল চলে যেতে থাকবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া মোবাইল নম্বরটিতে। প্রতারকেরা নিজেদের টেলি অপারেটিং সংস্থার কর্মী দাবি করে কখনও জানাচ্ছে, এগুলি বসালেই ব্যবহারকারীর ফোনের ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যাবে। কখনও ব্যবহারকারীকে বলছে, তাঁর দায়ের করা পুরনো অভিযোগ এখনও অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। এই টোপ গিলে কোড বসানোর পরে আরও কিছু লিখে ডায়াল করতে হবে। তাতেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে নিজের ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবে প্রতারক। ওই সময়ে নম্বরটি ব্যবহার করার জন্য দু’ভাবে ওটিপি পাঠানো হয়। একটি মেসেজে, অন্যটি ফোন কলে। যে হেতু কল ফরওয়ার্ডিং চালু হয়ে গিয়েছে, ফলে ফোন কলেই ওটিপি শুনে নিচ্ছে প্রতারক। একই ভাবে ফোন কলের মাধ্যমে শুনে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত ওটিপি বা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের পাসওয়ার্ড। হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশাল মিডিয়ার সাইটকে হাতিয়ার করে প্রতারিত ব্যক্তির পরিচিতদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে টাকা।
তা হলে উপায়?
লালবাজারে সাইবার শাখার এক আধিকারিক বললেন, ‘‘আগে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে ফোনের দখল নিয়ে প্রতারণা চলছিল। এ নিয়ে মানুষ সচেতন হওয়ায় ওই পদ্ধতিতে সমস্যা হচ্ছে প্রতারকদের। ফলে এখন কোড বসিয়ে ফোনের দখল নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষের সচেতনতাই প্রতারণা রোখার ক্ষেত্রে বড় অস্ত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy