Advertisement
E-Paper

৬২ ঘণ্টা পার করে অবশেষে এফআইআর, মালিকেরা বেপাত্তা, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী মহল

পরিকাঠামোর অভাবে আগুন নেভাতে নাস্তানাবুদ হওয়া তো আছেই! আগুনের পিছনে কার গাফিলতি, তা চিহ্নিত করে অভিযোগ দায়ের করতেই  তিন দিন গড়িয়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৯
পুড়ে খাক: বাগড়ি মার্কেটের বিপজ্জনক অংশ। মঙ্গলবার। ছবি: আর্যভট্ট খান।

পুড়ে খাক: বাগড়ি মার্কেটের বিপজ্জনক অংশ। মঙ্গলবার। ছবি: আর্যভট্ট খান।

পরিকাঠামোর অভাবে আগুন নেভাতে নাস্তানাবুদ হওয়া তো আছেই! আগুনের পিছনে কার গাফিলতি, তা চিহ্নিত করে অভিযোগ দায়ের করতেই তিন দিন গড়িয়ে গেল।

শনিবার গভীর রাতে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার প্রায় ৬২ ঘণ্টা বাদে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা দেয় দমকল। তাতে ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর পাঠক বাগড়ি মার্কেটের দুই মালিক রাধা বাগড়ি, তাঁর ছেলে বরুণরাজ বাগড়ি এবং বাগড়ি এস্টেটের চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার কৃষ্ণকুমার কোঠারির বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন। দমকলের দাবি, আগুন নেভানোর ব্যবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবে খামতি রেখেছিলেন মালিকেরা। তাঁদের বিরুদ্ধে আগুন লাগানোর ষড়যন্ত্র, ধ্বংসের জন্য দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক রাখা, রক্ষণাবেক্ষণ না করা-সহ দমকল আইনের একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

পাশাপাশি, শনিবার রাতে আগুন লাগার পরে একটি মোটরবাইকে চড়ে দুই যুবকের পালিয়ে যাওয়ার ভিডিয়ো ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। ওই যুবকদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

তিন অভিযুক্ত

• রাধা বাগড়ি

• বরুণরাজ বাগড়ি

(ডিরেক্টর, বাগড়ি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড)

• কৃষ্ণকুমার কোঠারি

• (সিইও, বাগড়ি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড)

এফআইআর

• ৪৩৬ ধারা (ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন বা বিস্ফোরক দিয়ে অনিষ্ট করা)

• ১২০বি (ষড়যন্ত্র)

• দমকল আইনের ১১সি, ১১জে ও ১১এল ধারা

(আগুন নেভানোর পরিকাঠামো না থাকা, শাস্তি ও জরিমানা)

তবে অভিযোগ দায়ের করে তদন্তে নামতে দেরি হওয়া নিয়ে বিপর্যস্ত ব্যবসায়ীদের কারও কারও ক্ষোভ, আগুন লাগার পর থেকে প্রতি পদক্ষেপে দেরিটাই কি দমকলের সংস্কৃতি? দমকল-পুলিশের সমন্বয়ের অভাব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

ব্যবসায়ীদের কারও কারও অভিমত, প্রভাবশালী অভিযুক্তদের পালানোর সুযোগ করে দিতে ইচ্ছে করেই অভিযোগ দায়ের করতে দেরি করেছে দমকল। পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের আগুনের পরে বাড়ির মালিক সঞ্জয় বাগারিয়াকে ধরতেও নাস্তানাবুদ হয়েছিল পুলিশ। প্রায় এক বছর বাদে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদ থেকে তাঁকে ধরা হয়।

বাগড়ি মার্কেটের মালিকরাও বেপাত্তা। তদন্তকারীদের একাংশ জানান, পুলিশের একটি দল রাধা বাগড়িদের বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়ি এবং অফিসে গিয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তদের খোঁজ মেলেনি। বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশুতোষ বাগড়ি বলেন, ‘‘শুনেছি রাধা বাগড়ি ইউরোপে চলে গিয়েছেন। বরুণরাজ ও কৃষ্ণ কুমার পরে পালিয়ে গিয়ে‌ছেন।’’ রাধা বাগড়ি বিদেশে গিয়ে থাকলে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার আগে না-পরে কবে গিয়েছেন, পুলিশের কাছে তার উত্তর মেলেনি। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের খোঁজ না-মিললে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। ব্যবসায়ীদের অনেকেরই ধারণা, সঞ্জয় বাগারিয়ার তুলনায় রাধা বাগড়িদের ধরার প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। তাঁদের বক্তব্য, আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাধা বাগড়ির ভূমিকা নিয়ে দমকল এবং পুলিশকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউই গা করেনি।

এর আগে বাগড়ি মার্কেটের উপরে নজরদারিতে দমকলের ভূমিকা নিয়ে সরকারের ভিতরেই একটি অংশে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি কারও দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আগুন নেভাতে চাই, জ্বালাতে চাই না। আগুন আগে নিভুক, পরে দোষীদের সাজা দেওয়া হবে।’’ দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমরা এত দিন আগুন নেভানোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছিলাম।’’

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠি এ দিন জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, মালিকের গাফিলতি নিছক উদাসীনতা নয়। ভাড়াটে-ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্নি-সুরক্ষা বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা করে নিলেও গোটা ব্যবস্থাটাই কেন অকেজো করা ছিল, সেটাই প্রশ্ন। এমনিতেই প্রশাসন বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও গোটা বাজারের দোকানে দোকানে দাহ্য পদার্থ ছড়ানো ছিল। জলাধার থাকা সত্ত্বেও জল না-থাকা, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কাজ না-করার মতো বিষয়গুলি খুব ‘স্বাভাবিক’ বলে পুলিশ মনে করছে না।

Bagri Market Fire Kolkata fire Fire বাগড়ি FIR
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy