Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিপদ হলেই তৈরি নয়া কমিটি, কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে কি!

আট বছর আগের সুপারিশ এখনও কার্যকর হয়নি!

১৩৮, ক্যানিং স্ট্রিটের ঘুপচি প্রবেশপথের সামনেই মিটার বক্সের সারি

১৩৮, ক্যানিং স্ট্রিটের ঘুপচি প্রবেশপথের সামনেই মিটার বক্সের সারি

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

আট বছর আগের সুপারিশ এখনও কার্যকর হয়নি!

শনিবার মাঝ রাতে ক্যানিং স্ট্রিটের বাগড়ি মার্কেটে লাগা আগুন মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাগড়ি মার্কেট থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা তিনটি বাড়ির বিপজ্জনক দশা নিয়ে আট বছর আগে তৈরি ‘বিপজ্জনক বাড়ি পরিদর্শন সমন্বয় কমিটি’ সতর্ক করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের পরে গড়া কমিটির সুপারিশ যে কার্যত ‘বাক্সবন্দি’ হয়ে পড়ে থাকে তা ফের পরিষ্কার হল।

২০১০ সালের ২৩ মার্চ পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ৪৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তার পরে শহরের বিপজ্জনক বাজার, ভবনগুলির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের তরফে গঠিত হয়েছিল ‘বিপজ্জনক বাড়ি পরিদর্শন সমন্বয় কমিটি’। কলকাতা পুলিশ, পুরসভা, সিইএসসি-র প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি বাগড়ি মার্কেট থেকে মেরেকেটে একশো মিটার দূরে ১৩৮ ক্যানিং স্ট্রিট পরিদর্শন করে একাধিক সুপারিশ করেছিল।

১৩৮ ক্যানিং স্ট্রিটের চারতলা বাড়িটির পুরোটাই ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়। ছোট-বড় দোকান, অফিস মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো ঘর রয়েছে ওই বাড়িটিতে। এ ছ়়াড়াও রয়েছে একাধিক গুদাম। মঙ্গলবার সকালে ১৩৮, ক্যানিং স্ট্রিটের চারতলা বাড়ি ঘুরে দেখা গেল,

আট বছর আগে ওই কমিটি যে সব সুপারিশ করেছিল তার বেশির ভাগ কার্যকর হয়নি। তৎকালীন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার বাণীব্রত বসুর নেতৃত্বে ওই কমিটি বহুতল বাড়িটির খোলা ছাদে বেআইনি ভাবে থাকা প্রায় সাড়ে চারশো অফিস ভাঙতে সুপারিশ করেছিল। ওই বহুতলে একটিমাত্র সিঁড়ি রয়েছে। জরুরিকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওই বা়ড়িতে অতিরিক্ত একটি সিঁড়ি তৈরির সুপারিশ করেছিল কমিটি।

১৩৫, ক্যানিং স্ট্রিট বহুতলটির ভগ্নদশা। মঙ্গলবার, বড়বাজারে। নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলবার দুপুরে ১৩৮ ক্যানিং স্ট্রিটের প্রবেশপথে ঢুকতেই হোঁচট খেতে হল। সরু ঘুপচি গলিপথের বাঁ দিকে সার দিয়ে মিটার বক্স। পাশেই একাংশে মালপত্র বোঝাই করা রয়েছে। বাড়িটির উপরের বিভিন্ন অংশেও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তার। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেল, ওই বাড়িটির এখন কোনও মালিকানা নেই। ভাড়াটেরাই একজোট হয়ে যাবতীয় বিষয় দেখভাল করেন। এক ব্যবসায়ী রাহুল মুন্দ্রা বললেন, ‘‘২০১০ সালে পরিদর্শন কমিটি ঘুরে দেখার পরে আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ী নিজের নিজের অফিসে অগ্নি-নির্বাপক বসিয়েছি। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ব্যবসায়ীরা নিয়মিত বৈঠকও করেন।’’ তবে বাড়ির ছাদে থাকা বেআইনি ঘর এখনও পর্যন্ত কেন ভাঙা হল না সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ওই বিল্ডিংয়ের পাশেই রয়েছে ১৩৫ ক্যানিং স্ট্রিট। শতাব্দীপ্রাচীন এই চারতলা এই বাড়িটির বাইরে থেকে ভগ্নদশা চোখে পড়ার মতো। বাড়িটির উপরের বিভিন্ন জায়গায় আগাছা জন্মেছে। একটি মাত্র সিঁড়ি। দোতলার প্যাসেজে দখলদার রয়েছেন। মূল দরজার পাশে মান্ধাতার আমলের মিটার বক্স। এ ছাড়াও বাড়িটির বিভিন্ন তলায় বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। ওই বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার মহম্মদ নাসিমের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের বিল্ডিংয়ের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে। প্রতিটি তলায় ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে।’’ চোখের সামনে বাগড়ি মার্কেটকে দাউদাউ করে পুড়তে দেখেছেন নাসিম। নাসিমের অভিযোগ, ‘‘আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনের ফুটপাতে ব্যবসায়ীরা অবৈধ ভাবে ডালা নিয়ে বসে ব্যবসা চালাচ্ছেন। টিভি দেখতে জানতে পারলাম, বাগড়ি মার্কেটের সামনে ডালা বিস্ফোরণ হয়েই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে হকারদের ডালা সরাতে পুলিশকে চিঠি লিখব।’’

আট বছর আগের সুপারিশ এখনও কেন কার্যকর হল না? এ প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তাঁর ফোন বে়জে গিয়েছে। জবাব মেলেনি এসএমএস-এরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE