চার দিন পর আগুন নিভলেও, সহারা মরুভূমির থেকে তেতে রয়েছে বাগড়ি মার্কেট। যেখানে সাহারা মরুভূমিতে গরমকালেও তাপমাত্রা থাকে ৪৭ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি মধ্যে, সেখানে বাগড়ি মার্কেটে আগুন নিভে যাওয়ার পর তাপমাত্রা রয়েছে প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড! আগুন লাগার প্রথম দিনে তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ১৭৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। চার দিন পর সেই তাপমাত্রা কমে ৬০-এ নেমেছে বলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি।
গনগনে আগুনের জেরে এতটাই তেতে রয়েছে মার্কেটের দেওয়াল যে, বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদেও চিড় ধরেছে। এমনকি স্তম্ভগুলো খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসনের চিন্তা, বাগড়ি মার্কেট ভেঙে পড়বে না তো? আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে গিয়েছে বাগড়ি মার্কেটের ছয়টি তলাই। ক্যানিং স্ট্রিটের মাঝে যেন একটা আস্ত পোড়়ো বাড়ির চেহারা নিয়েছে এই মার্কেট। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, “আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আর নতুন করে আগুনের ফুলকি দেখার সম্ভাবনাও নেই।”
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই এ দিন সকালে বাগড়ি মার্কেটে পৌঁছয় ফরেন্সিক বিভাগ। ছ’তলা ওই বহুতলের বিভিন্ন অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন অফিসারেরা। রাস্তার বাইরের দিকের বিভিন্ন জায়গা থেকেও নমুনা নেওয়া হয়েছে। তবে, কী কারণে আগুন লেগেছে? কোথা থেকে আগুন লেগেছে? এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে দমকল ও পুলিশ। ফরেন্সিক বিভাগের রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য মিলবে বলে আশা প্রশাসনের। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অন্তর্ঘাত বলেও ব্যবসায়ীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন। ফরেন্সিক রিপোর্ট এলে সেটাও ম্পষ্ট হয়ে যাবে। আপাতত ফরেন্সিক বিভাগের এই রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে বড়বাজার থানা।
আরও পড়ুন: একাধিক অভিযোগ থাকলেও বাগড়িদের নিয়ে ‘উদাসীন’ পুলিশও!
আরও পড়ুন: ছাইয়ের তলায় এখনও চোখ রাঙাচ্ছে আগুন
পুলিশ সূত্রে খবর, মার্কেটের বাইরে একটি মিটার বক্স থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল বলে প্রাথমিক অনুমান। যদিও নমুনা সংগ্রহের পর এক ফরেন্সিক অফিসার বলেন, “বাগড়ি মার্কেটের ভিতরের তাপমাত্রা এখন ৬০-৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি। প্রচণ্ড উত্তাপ থাকলেও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসছে মার্কেট চত্বর। বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। এখনই আগুন লাগার কারণ বলা যাবে না। ল্যাবরেটরিতে সেই নমুনা অ্যানালিসিস করার পরই আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
বাগড়ি মার্কেটের অন্যতম মালিক রাধা বাগড়ি ও তাঁর ছেলে বরুণ এবং এস্টেটের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার কৃষ্ণকুমার কোঠারির বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে দমকল। তাঁদের বিরুদ্ধে আগুন লাগানোর ষড়যন্ত্র, ধ্বংসের জন্য দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক রাখা, রক্ষণাবেক্ষণ না করা-সহ দমকল আইনের একাধিক ধারায় মামলাও হয়েছে বড়বাজার থানায়। পুলিশ ইতিমধ্যেই আদালতে গিয়ে ধৃতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জুরও করেছে। এ বার লুক-আউট নোটিসের আবেদনও জানানো হয়েছে। বাগড়ি মার্কেট ইতিমধ্যেই সিল করে তার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা।