Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হরতাল নয়, শহরের বেশি দুর্ভোগ মিছিলেই

আজ, সোমবার রাজ্যে বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার হরতালের বিরোধিতা করছে শাসক তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার। সরাসরি হরতালের বিরোধিতা না করলেও কংগ্রেস নেতৃত্বের কৌশলী বক্তব্য, ‘‘বন্‌ধ আমরা ডাকিনি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

আজ, সোমবার রাজ্যে বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার হরতালের বিরোধিতা করছে শাসক তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার। সরাসরি হরতালের বিরোধিতা না করলেও কংগ্রেস নেতৃত্বের কৌশলী বক্তব্য, ‘‘বন্‌ধ আমরা ডাকিনি।’’ নোট-বাতিলের প্রতিবাদে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় দু’টি দল তৃণমূল এবং কংগ্রেসের এই অবস্থানের পরে বামেদের হরতাল কতটা সফল হবে, সে সংশয় রয়েছেই। কিন্তু বড় প্রশ্ন হল— এর পরেও আজ জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে কি না। কারণ কেন্দ্রের নোট বাতিলের প্রতিবাদে কলকাতায় আজ তিনটি মিছিল হবে। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মিছিল করবে তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস— তিন পক্ষই।

কলেজ স্কোয়্যার থেকে আজ তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল শুরু হবে বেলা ১২টায়। যাবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে যোগ দেবেন। ফলে সকাল ১০টা থেকেই তৃণমূল কর্মীরা জমায়েত হতে শুরু করবেন কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে কর্মীরা ওই মিছিলে আসবেন। ফলে ভিড়ের চাপে সকাল থেকেই উত্তর ও মধ্য কলকাতা লন্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বামেদের মিছিল শুরু হবে বেলা ১১টায় মৌলালি থেকে। তার ফলে শিয়ালদহ সংলগ্ন রাস্তায় যানজট হবে। কংগ্রেসের মিছিল বেলা ২টোয় বিধান ভবন থেকে শুরু হয়ে যাবে পার্ক সার্কাস। সুতরাং, মৌলালি থেকে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় পর্যন্ত এলাকাও হাঁসফাঁস করবে যানজটে।

আজ হরতাল ঠেকিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস আগেই দিয়েছে রাজ্য সরকার। সড়ক ও জলপথে পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরকারি যান চলবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশি বাস চালানো হবে। কলকাতায় ১২০০ এবং জেলাগুলিতে ১৩০০ বাস চলবে। কর্মীদের ছুটি বাতিল হয়েছে।

বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা ধর্মঘটের সমর্থন বা বিরোধিতা কোনওটাই করছেন না। চালক ও কন্ডাক্টররা যদি কাজে যোগ দেন, বাস চলবে। তবে কত বাস চলবে, তা বলা সম্ভব নয়। পরিবহণে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতাদের দাবি, এখন বেশির ভাগ বাসের ইউনিয়নই তাঁদের দখলে। কাজেই অন্য দিনের মতো সারা রাজ্যে হাজার পঞ্চাশেক বেসরকারি বাস চলবে। মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, ‘‘আমরা বন্‌ধ সমর্থন করছি না। রাজ্যের সব জায়গাতেই মিনিবাস চলবে।’’ সংখ্যাটা সব মিলিয়ে অন্তত ৭ হাজার। বিভিন্ন অটো ইউনিয়নও গাড়ি বের করবে। রাজ্যের পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অরূপম দত্ত জানান, অন্য দিনের মতোই পুলকার চালানো হবে। তবে গাড়ি আটকে গেলে অভিভাবকদের খবর দিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

তবে প্রশ্ন হল— এত বাস, মিনিবাস, অটো, পুলকার চলবে কোথায়? তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেসের মিছিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তই তো যানজটে স্তব্ধ থাকবে শহরের সিংহ ভাগ এলাকা! অনেকে অবশ্য বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে যেটা দুর্ভোগ, বামেদের কাছে আজ সেটাই আশীর্বাদ হতে পারে। তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল, মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিলে এমনিতেই আজ শহর স্তব্ধ হবে। সুতরাং, তৃণমূলের ঘাড়ে চেপেই দাবি করা যাবে, তাদের হরতাল সফল, চাকা নড়েনি। তার উপর কংগ্রেসেরও মিছিল থাকায় সেটা সোনায় সোহাগা হয়েছে। সঙ্গে তারা নিজেরাও মিছিল ডেকে দিয়ে শহর স্তব্ধ করার ব্যবস্থা পাকা করেছে।

তবে তৃণমূল হরতালের বিরোধিতা করায় বামেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, ওদের মিছিলের জন্য কি মানুষের দুর্ভোগ হবে না? বামেদের হরতালে শ্রমদিবস নষ্ট হচ্ছে বলে সমালোচনা করেছে বিজেপি-ও। তার জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, মানুষকে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, তাতে আরও বেশি শ্রমদিবস নষ্ট হচ্ছে। কংগ্রেস, তৃণমূল হরতাল সমর্থন করছে না! এই নিয়ে সূর্যবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘হতে পারে আমরা একা, কিন্তু সত্যিটা তো কাউকে বলতে হবে!’’ ব্যাঙ্ক, এটিএম ও ডাকঘরগুলিকে অবশ্য ধর্মঘটের আওতা থেকে রেহাই দিয়েছে বামেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bandh protest rally Traffic jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE