Advertisement
E-Paper

টাকার গেরো, কমছে বাংলাদেশি রোগী

এক ধাক্কায় তলানিতে! নোট-ভোগান্তির গোড়ার দিকে বাংলাদেশি রোগীরা এ রাজ্যে চিকিৎসায় এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। এ বার বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে যাওয়ায় কিছুটা মার খাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির ব্যবসাও।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
প্রতীকী চিত্র। ছবি: ইন্টারনেট।

প্রতীকী চিত্র। ছবি: ইন্টারনেট।

এক ধাক্কায় তলানিতে!

নোট-ভোগান্তির গোড়ার দিকে বাংলাদেশি রোগীরা এ রাজ্যে চিকিৎসায় এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। এ বার বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে যাওয়ায় কিছুটা মার খাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির ব্যবসাও।

চলতি সপ্তাহে বাইপাসের এক হাসপাতালে পায়ের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল জহিরা বেগমের। ঢাকার বাসিন্দা জহিরা আগে একাধিক বার ওই হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখিয়েছেন। আগের বার এসেছিলেন অক্টোবরের শেষে। তখনই ঠিক হয়, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হবেন তিনি। কিন্তু দিন তিনেক আগে তাঁর ছেলে শাহাদাত হাসপাতালে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আসছেন না।

কেন? শাহাদাত জানিয়েছেন, টাকা নিয়ে যা চলছে তাতে তাঁরা এখনই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাঁদের এক প্রতিবেশী দু’দিন আগে কলকাতা থেকে চিকিৎসা করিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কোনওমতে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারলেও গেস্ট হাউসে থাকা-খাওয়া নিয়ে যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে, তা শুনেই দমে গিয়েছেন তাঁরা। তাই আপাতত কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসার পরিকল্পনা মুলতুবি রাখা হয়েছে।

তিনি একা নন, অহরহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এমন ফোন, ই-মেল আসছে। বাতিল হচ্ছে বুকিং। শুধু ইন্ডোরে নয়, আউটডোরেও। নোট-বাতিলের পরে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে ডলার নেওয়া হচ্ছিল। নোট বাতিলের পরেও নেওয়া চলছিল পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটও। যেই তা নেওয়া বন্ধ হল, সঙ্গে সঙ্গেই রোগী ভর্তি তলানিতে। বাংলাদেশের রোগীতে যে সব বেসরকারি হাসপাতাল কার্যত ভরে থাকত, সেখানে প্রায় কোথাওই নতুন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁদের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এ দেশে চিকিৎসা করাতে এসে নতুন করে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউই। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির ব্যবসায় বড় ধাক্কা লেগেছে।

বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা গত সপ্তাহ পর্যন্ত পুরনো নোট নিচ্ছিলেন। এখন তা বন্ধ করে দিয়েছেন। পুরনো নোট চলছে শুধু তাঁদের ফার্মেসিতে। ২৪ তারিখের পরে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁরা মূলত কার্ডে টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু নতুন রোগী ভর্তি একদমই কমে গেছে। আউটডোরে বাংলাদেশের রোগীতে ভরে থাকত। এখন সেটা একেবারেই খালি।’’

বাইপাসেরই আর এক হাসপাতালের তরফে শুভাশিস দত্ত জানান, আগে প্রতি দিন আউটডোরে গড়ে পাঁচ জন করে বাংলাদেশি রোগী আসতেন। ৯ তারিখের পরে কোনও দিন এক জন আসছেন, কোনও দিন আসছেনই না। মুকুন্দপুরের এক হাসপাতালের কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদেরও নতুন বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে।

সল্টলেকের এক হাসপাতালে হার্টের অস্ত্রোপচারের কথা ছিল সোহেল খানের। তাই গত কয়েক দিন এই শহরেই সপরিবার থাকছিলেন তিনি। শুক্রবার তিনিও দেশে ফিরে গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, নোটের সমস্যায় জেরবার হয়েছেন তাঁরা। মানি এক্সচেঞ্জার-এর মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। তা ডাক্তার দেখাতে আর কিছু পরীক্ষা করাতে খরচ হয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের খরচ যদি ক্রেডিট কার্ডেও দেন, তা হলেও থাকা-খাওয়া বাবদ আরও বেশ কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে। নিউ মার্কেটে এক জন ২০০০ টাকা ভাঙিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে অনেকেই আসছেন। এক সঙ্গে বেশি নোট ভাঙানো সম্ভব নয়। তাই সঙ্গে ৫০০ আর ১০০০ টাকার প্রচুর নোট থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাঁকে। ওই হাসপাতালের কর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি রোগীর ভিড়ে তাঁদের আউ়টডোর, রিসেপশন গমগম করত। এখন প্রচুর খুঁজলে দু’-এক জনকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র।

অনেকেই জানিয়েছেন, একে টাকার সমস্যা। তার উপরে বহু ক্ষেত্রে দালালের হাতে পড়ে নাকাল হতে হচ্ছে। ‘‘রোগ না হয় ক’দিন পরে সারালাম, আগে তো স্বস্তিতে থাকি’, বললেন তহমিনা বিবি।

প্রতি মাসে কয়েকশো বাংলাদেশি রোগী এই শহরে চিকিৎসার জন্য আসেন। মূলত বাইপাসের কয়েকটি হাসপাতাল এবং আলিপুরের কয়েকটি হাসপাতালে এঁদের ভিড়টা হয়। এঁরা নগদ টাকা নিয়ে আসেন। তাই ৫০০-১০০০ টাকার গোলমালে পড়ে আপাতত আসাটাই বন্ধ রেখেছেন অনেকে। বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটানের রোগীরাও তাঁদের কাছে আসেন। কিন্তু ভুটানের ক্ষেত্রে সরাসরি সরকারের তরফ থেকে পাওনাগণ্ডা মেটানো হয়, তাই সে ক্ষেত্রে রোগীর ভিড়ে খুব বেশি হেরফের হয়নি।

Patient Demonetization Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy