Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আমার পাড়া: বীরেন রায় রোড (পূর্ব)

এখন তো পাড়াময় সৌরভ

পাড়ার নাম বীরেন রায় রোড। তবে আপামর বাঙালির কাছে এ পাড়াটা পরিচিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে মহারাজের পাড়া বলে। ‘আমার পাড়া’ কথাটার মধ্যেই মিশে আছে অনেকটা ভাল লাগা, স্বস্তি আর নিরাপত্তা বোধ।

মশগুল: জমাটি আড্ডায়। ছবি: সুমন বল্লভ

মশগুল: জমাটি আড্ডায়। ছবি: সুমন বল্লভ

ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

পাড়ার নাম বীরেন রায় রোড। তবে আপামর বাঙালির কাছে এ পাড়াটা পরিচিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে মহারাজের পাড়া বলে। ‘আমার পাড়া’ কথাটার মধ্যেই মিশে আছে অনেকটা ভাল লাগা, স্বস্তি আর নিরাপত্তা বোধ। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন সব কিছুই তো এখানে। সৌরভেরও তাই। এমন নিশ্চিন্ত পরিবেশ আর পরিচিত-অপরিচিতের আন্তরিকতা আর কোথায় পাব?

এ পাড়াটা কিন্তু ব্লাইন্ড লেন! বেহালা চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়েছে আমাদের পাড়াটা। সব মিলিয়ে মাত্র বাইশ-তেইশটা পরিবারের বসবাস। অথচ তারই মাঝে আছে সম্পর্কের এক অটুট বন্ধন। বিপদ-আপদে প্রয়োজনে সকলেই পাশে আছেন। একে অপেরের খোঁজও রাখেন। তাই এক-এক সময়ে মনে হয় পাড়াটাই এক বৃহৎ পরিবার। সকলেই সকলের চেনা, পরিচিত। আছেন পাড়াতুতো কাকা-জেঠা, অভিভাবকেরা। এখনও কোনও কারণে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, ‘এত রাত হল কেন?’ এর থেকেই তাঁদের স্নেহ প্রবণ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিংবা অনেক রাত পর্যন্ত রিহারসাল হলেও তাঁরা কখনও আপত্তি করেন না।

এ পাড়ায় ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। রয়েছে বেশ কিছু গাছগাছালি। সকালের স্নিগ্ধতা বেলা বাড়ার সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যস্ততায় বদলে যায়। পাড়ার মুখেই রয়েছে কর্পোরেশনের অফিস। ডায়মন্ড হারবার রোডে মেট্রোর কাজ চলায় যানজট হচ্ছে এখন। এক-এক সময়ে তো পাঁচ মিনিটের পথ গাড়িতে আধ ঘণ্টা লেগে যায়। কাজ শেষ হলে আশা করা যায় যানজট সমস্যা মিটবে।

আগে পাড়ায় মূলত বাড়ি থাকলেও সময়ের প্রভাবে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু বহুতল। সেগুলির বেশির ভাগই কিনেছেন পাড়ার ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষ। তাই পাড়ার চরিত্রটা খুব একটা বদলায়নি।

পাড়ার পুজো মানেই ‘বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নার’-এর পুজো। তাতে আজও আছে এক ঘরোয়া আবহাওয়া। এক সঙ্গে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, দেদার আড্ডা, হই হুল্লোড় সবই আছে। পুজোর সময়ে কখনও আমারা মেতে উঠি ধুনুচি নাচে, কখনও বা সৌরভের ঢাকের তালে। হারিয়ে যায়নি বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো কিংবা দোলের সময়ে একে অপরেকে রাঙিয়ে তোলার অনাবিল আনন্দ।

রাস্তায় খেলাধুলো আগের তুলনায় কমেছে। আগে বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাটায় খেলত অনেকে। তা-ও আজকাল চোখে পড়ে না। অনেকেই অবশ্য প্রশিক্ষণের জন্য ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে যায়।

কত রঙিন স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে। এখানেই থাকতেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী দিপালী নাগ। মনে পড়ছে আমার ও সৌরভের বিয়ের দিন দিপালীদির ছাত্র-ছাত্রীরা গান করতে করতে সৌরভকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। পাড়াতেই রয়েছে ‘দীক্ষা মঞ্জরি’ নাচের স্কুল।

পাড়ার মোড়ে কিছু মানুষকে সকাল-সন্ধ্যায় এক সঙ্গে গল্প করতে দেখা যায়। তবে পুজোর ক’টা দিন অনেকেই আড্ডায় সামিল হন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে সারা বছরের জমে থাকা গল্প।

বাইরে গেলে কেন জানি না মনে হয়, কবে পাড়ায় ফিরব। পাড়া ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কথা শুনলেই কেন জানি না মনটা খারাপ হয়ে যায়। নাড়ির টান? হয়তো সেটাই আঁকড়ে ধরে রেখেছে এখানে। পাড়াটা কখনও পুরনো হয় না। সম্পর্কের উষ্ণতায় যে সদাই রঙিন।

লেখক নৃত্যশিল্পী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE