ঢুকতে হয় এ ভাবেই। বেহালায়, রবিবার। ছবি: অরুণ লোধ।
আবাসনের গেটের সামনে জল থইথই। সেই জলের উপরে ইট পেতে তার উপর দিয়ে সন্তর্পণে ফ্ল্যাটে ঢুকতে হচ্ছে আবাসিকদের। কোথাও জলের উপরে বালির বস্তাও দেওয়া হয়েছে।
আবাসনের ভিতরে যে রাস্তা, কয়েক পশলা বৃষ্টিতে সেই রাস্তায় জল জমে যাচ্ছে। তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নর্দমার জল। টানা কয়েক দিন সেই জল নামার কোনও নামগন্ধ নেই। নোংরা সেই জলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা।
বেহালা শীলপাড়ার পরেই কদমতলা বাসস্টপ। বড় রাস্তার পাশেই পশ্চিম বড়িশা সরকারি আবাসন। ডেঙ্গি-সহ মশাবাহিত অন্য রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি তরফে যখন লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে, তখন এমনই চিত্র এই সরকারি আবাসনের। আবাসিকদের অভিযোগ, সরকারকে নিয়মিত টাকা দিয়ে তাঁরা বসবাস করছেন। অথচ ন্যূনতম পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। আবাসনের বাসিন্দা সঞ্জয় দে বলেন, ‘‘জমা জলে পাতা ইটের উপরে হাঁটতে গিয়ে আমার মা পা পিছলে পড়ে গিয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।’’
কেন এই হাল? মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিম বড়িশার ওই আবাসন নিয়ে বড়সড় কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
রবিবার ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, ডেঙ্গি-র আতঙ্কে অধিকাংশ বাসিন্দা দিনরাত ফ্ল্যাটের জানলা বন্ধ করে রাখছেন। কেবল মশা নয়, আবাসনের নীচের তলায় বাড়ছে সাপের উপদ্রবও। এক আবাসিক প্রিয়াঙ্কা মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা একতলায় থাকি। দিন কয়েক আগে আমাদের ঘরে সাপ ঢুকেছিল। তার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছি।’’ আবাসনের বাসিন্দা দোলা তরফদারের প্রশ্ন, ‘‘পুরসভার তরফে মাইকে করে প্রচার করে বলা হচ্ছে, ‘জল জমতে দেবেন না।’ অথচ সরকারি আবাসনেই দিনের পর দিন জল জমে থাকছে।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর ঘনশ্রী বাগ বলেন, ‘‘সখেরবাজার থেকে জোকা পর্যন্ত যেখানেই জল জমবে, সেই জল সরাতে জোকা ট্রাম ডিপোর কাছে পাম্পিং স্টেশনের কাজ চলছে। ওই কাজ শেষ হতে এক বছর সময় লাগবে। সেই কাজ শেষ হলেই এই সরকারি আবাসনের জল জমা সংক্রান্ত সমস্যা মিটবে।’’
আবাসনের ভিতরে জমে পড়ে থাকা জঞ্জাল নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ বাসিন্দাদের। আবাসনের ভিতরে ময়লা ফেলার যে ভ্যাট রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তা পরিষ্কার করা হয় না। জঞ্জাল জমে পাহাড়। আবাসনের খেলার মাঠ, আশপাশের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গাও জঙ্গলে
ভরে গিয়েছে।
কী বলছেন পুর কর্তৃপক্ষ? কাউন্সিলর ঘনশ্রীবাবু বলেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবার রোডে মেট্রোর কাজ চলছে। সেই জন্য আবাসনের ভিতরে জঞ্জাল নিয়ে যাওয়ার বড় গাড়ি ঢুকতে পারে না। যার জন্য জঞ্জাল নিয়মিত সাফাই হয় না।’’ পুরসভা লোক পাঠিয়ে পরিষ্কার করতে পারে না? কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘এটা সরকারি আবাসন। আবাসনের পরিষেবা দেওয়ার জন্য আবাসন দফতরের কর্মীরাও তো রয়েছেন।’’
আবাসনমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পশ্চিম ব়ড়িশার আবাসনের অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। পশ্চিম বড়িশার ওই সরকারি আবাসনের আবাসিকেরা যাতে নাগরিক পরিষেবা পান, সে বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, আবাসনমন্ত্রীকে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy