Advertisement
১১ মে ২০২৪
Bengali New Year

বন্ধ দোকান, ক্রেতা-বরণে বাতিল মিষ্টিমুখ

বড়বাজারের রং ব্যবসায়ী সমীরণ পাল জানালেন, বড়বাজারে নববর্ষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় প্রায় এক মাস আগে থেকে।

মলিন: নববর্ষেও ঝাঁপ বন্ধ। মঙ্গলবার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র

মলিন: নববর্ষেও ঝাঁপ বন্ধ। মঙ্গলবার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

মন খারাপ করা এমন নববর্ষ আগে দেখেননি ওঁরা। নববর্ষের দিন মানেই ওঁদের অনেকের কাছে সকাল থেকে সাজ সাজ রব। দোকান সাজিয়ে, পুজো দিয়ে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করা। তাঁরা এলে হাতে মিষ্টির প্যাকেট এবং ক্যালেন্ডার ধরানো। এ বার করোনা-আতঙ্কের জেরে মিষ্টি খাওয়ানো তো দূর, বেশির ভাগ দোকান ঝাঁপই খোলেনি।

বড়বাজারের রং ব্যবসায়ী সমীরণ পাল জানালেন, বড়বাজারে নববর্ষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় প্রায় এক মাস আগে থেকে। দোকান পরিষ্কার করানো হয়, দেওয়ালে রঙের প্রলেপ পড়ে। দোকানে পুজো হওয়ার পরে প্রত্যেক কর্মচারীকে দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয়। ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টির প্যাকেট। সমীরণবাবু বললেন, ‘‘এ বার কিছুই হয়নি। দোকানই খুলিনি। বাড়িতেই পুজো হয়েছে।’’ তিনি জানান, বড়বাজারের বহু দোকানদার ক্যালেন্ডার উপহার দেন ক্রেতাদের। এ বার হাজার হাজার ক্যালেন্ডার বৈঠকখানা বাজারের ছাপাখানায় পড়ে আছে।

বাগুইআটির মিষ্টি ব্যবসায়ী ইন্দ্রনাথ বাগুই জানান, নববর্ষের দিন যাঁরা তাঁর দোকানে মিষ্টি কিনতে আসেন, তাঁদের লস্যি খাওয়ান তিনি। ইন্দ্রনাথবাবু বললেন, ‘‘এ বার করোনার জন্য দোকানই তো বন্ধ। কর্মীরাও নেই। তাই দোকান খুলতে পারিনি।’’ যাদবপুরের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী জানালেন, দোকান খোলা রেখেছিলেন ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত। কিন্তু কোনও উপহার দেওয়া বা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেননি। কারণ, দোকানে কর্মী খুব কম। এই ক’জনে সব দিক সামলানো সম্ভব ছিল না।

আরও পড়ুন: করোনা দেখাল পুলিশ ‘গান’ ধরে, গানও করে

কাঁকুড়গাছির মুদির দোকানি ভক্তিপদ দাস জানালেন, প্রতি বার নববর্ষের দিন সকাল থেকে দোকানে লাইন পড়ে। যাঁরাই দোকানে আসেন, তাঁদের সরবত আর লাড্ডু খাওয়ানো হয়। ভিড়ের ভয়ে ভক্তিপদবাবু এ বার দোকানে পুজো করেননি। তিনি বলেন, ‘‘মুদির দোকান আমার। দোকান খুললেও পুজোটা এ বার খুব ছোট করে গুদামঘরে করেছি। সরবত, লাড্ডুর ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এমন মন খারাপের নববর্ষ আগে কখনও কাটাইনি। এমনই অবস্থা যে, ক্রেতাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানানো হয়নি।’’

আরও পড়ুন: রমজানের আগে বিবর্ণ ফলপট্টি

হিন্দুস্থান পার্ক এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী অভিজিৎ সাহার তিনটি দোকান আছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও দোকানেই আজ নববর্ষ পালিত হয়নি। কারণ, দোকানই তো খুলিনি। বাড়িতে পুজো হয়েছে। কর্মীদের যে বাড়িতে ডেকে খাওয়াব, তারও উপায় নেই। গাড়ি চলছে না। ওঁরা আসবেন কী ভাবে?’’ বাইপাসের পাটুলির কাছে এক রেস্তরাঁর মালিক অঞ্জনা দত্ত জানান, প্রতি বার নববর্ষে বিশেষ মেনু হয়। এ বার রেস্তরাঁই বন্ধ।

বৌবাজারের সোনার দোকানের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর নববর্ষের দিন কিছু পুরনো ক্রেতা আসেন। গয়না কিনুন বা নাকিনুন, তাঁদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প হয়। কুশল বিনিময় হয়। মিষ্টি খাওয়ানো হয়। এ বার দোকান বন্ধ। তাই কেউই আসেননি। তবে অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ফোন করে শুভ নববর্ষ জানিয়েছেন।কুশল বিনিময় করেছেন। তাঁদের আশা, এই দুঃসময় কেটে যাবে দ্রুত। আগামী বছরে ফিরে আসবে নববর্ষের চেনা ছবি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali New Year West Bengal Lockdown Sweets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE