Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Rajarhat

রাজারহাট এলাকার বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু

সূত্রের খবর, আজ, সোমবার থেকেই সংশ্লিষ্ট বহুতলগুলির মালিক এবং প্রোমোটারদের নোটিস পাঠানো শুরু হবে। এর পরে পুরসভায় এসে ওই সব নির্মাণের পক্ষে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে তাঁদের।

অনিয়ম: দশদ্রোণের নির্মীয়মাণ এই বাড়িতে নোটিস পাঠিয়েছে পুরসভা। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: দশদ্রোণের নির্মীয়মাণ এই বাড়িতে নোটিস পাঠিয়েছে পুরসভা। নিজস্ব চিত্র

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে ইতিমধ্যেই রাজারহাট এলাকার বেশ কিছু বহুতলের মালিক এবং প্রোমোটারদের নোটিস পাঠিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। এ বার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে চলেছে পুর প্রশাসন। সূত্রের খবর, আজ, সোমবার থেকেই সংশ্লিষ্ট বহুতলগুলির মালিক এবং প্রোমোটারদের নোটিস পাঠানো শুরু হবে। এর পরে পুরসভায় এসে ওই সব নির্মাণের পক্ষে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে তাঁদের।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই রাজারহাট এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠছে। এখনও পর্যন্ত পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের দশদ্রোণে ১৫টি এমন বহুতলে পুরসভার তরফে কাজ বন্ধের নোটিস পাঠানো হয়েছে, যেগুলির নকশা জাল বলে অভিযোগ। পুরসভার দাবি, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে দশদ্রোণ ও সংলগ্ন এলাকা থেকেই। এমনকি গণস্বাক্ষর করেও এলাকাবাসীরা পুরসভায় এবং বিধানগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে পুলিশকেও তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, একটি ওয়ার্ড থেকেই যদি ১৫টি বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ ওঠে, তা হলে অন্য ওয়ার্ডগুলিতে আরও কত এমন নির্মাণকাজ চলছে, সেই খবর কে রাখে?

অভিযোগ, এই ১৫টি নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভার (বিধাননগর কর্পোরেশন) সিলমোহর দেওয়া জাল নকশা ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি, কাজ বন্ধের নোটিসও অনেকে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। এই বিষয়গুলি জানার পরেই বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে বিশেষ সেল গড়েন পুর কর্তৃপক্ষ।

আধিকারিকেরা জানান, ওই সব নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার কথা ভাবছে পুরসভা। কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো সেই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমস্ত নকশা পুরনো রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার আমলের। ২০১৮ সালের পরেই সেগুলি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।’’

ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় পুর প্রতিনিধিদের নজরদারি নিয়েও। এলাকাবাসীর অনেকেরই অভিযোগ, তাঁদের চোখের সামনে ওই সব নির্মাণ তৈরি হয়ে এখন প্রায় শেষের পথে। পুরসভায় পাঠানো অভিযোগপত্রে সই থাকা এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘আকাশচুম্বী এই সব বহুতল তো এক দিনে তৈরি হয়নি। শেষ কয়েক মাস ধরে রমরমিয়ে কাজ চলছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণ চলছে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড অফিসের আশপাশেও।

যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তিনি কয়েক মাস হল কাউন্সিলর হয়েছেন। নন্দিনী বলেন, ‘‘আমি তো সবেমাত্র দায়িত্বে এসেছি। ওই সব নির্মাণ আরও আগে থেকে চলছিল। আমার আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বলতে পারবেন।’’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মেয়াদ ফুরনোর পরে ২০২২ সালে পুরভোট হয় বিধাননগরে। তার আগে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর ছিলেন রাজারহাট-নিউ টাউনের বর্তমান বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। বোর্ড ভাঙার আগে তিনি বিধাননগরের ডেপুটি মেয়রও ছিলেন। তাপস বলেন, ‘‘তৎকালীন কোঅর্ডিনেটর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পুরভোট পর্যন্ত কয়েক মাস আমি কোঅর্ডিনেটর ছিলাম। কিন্তু তখন কেউ এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। আর আমাদের নকশা অনুমোদনের অধিকারও ছিল না।’’

স্বাতীর অবশ্য দাবি, ২০২১ সালের মার্চে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তিনি ওই ওয়ার্ডে আর যাননি। স্বাতী বলেন, ‘‘আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরত এলেও পরবর্তী কালে টিকিট পাইনি। তবে আমি যত দিন ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর ছিলাম, তত দিন ওই সব নির্মাণ হয়নি। এখন ওই এলাকার সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই।’’ গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিধি মেনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, পুরসভার তরফে সবই নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajarhat Illegal Construction BMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE