বিপাকে: মীরপুরের সেই বৃদ্ধাবাসের এক আবাসিক। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
দরজায় কড়া নাড়তেই নারী কণ্ঠে ভেসে এল, “কে?” পরিচয় শুনে ওপারে মিনিটখানেকের নিস্তব্ধতা। এক জনকে ফোন করে আশ্বস্ত করার পরে খুলল দরজা। করিডর পেরিয়ে বসার ঘর। চেয়ারে বসে তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা মোড় থেকে বারুইপুর রোড ধরে কিছুটা এগোলে মিলবে মীরপুরের এই সরোজ নলিনী হোম। গাছ আর পুকুরে ঘেরা কয়েক বিঘা জায়গায় মধ্যে ওই হোমে রয়েছে দু’টি বৃদ্ধাবাস। তারই একটি সায়াহ্ন। ন’জন আবাসিকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। এখন রয়েছেন তিন জন।
তিন আবাসিকের এক জন, বছর আশির হৃদ্রোগী গোপালকুমার সিংহ বলেন, ‘‘দিন চারেক আগে কলকাতা থেকে কয়েক জন লোক ও বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ আসে হোমে। এই হোম চালায় যে সংস্থা, তারাই পাঠিয়েছিল। কিছু দিন আগেই বৃদ্ধাবাসটি বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়ে সংস্থা চিঠি দেয়।’’ অন্য এক আবাসিক, বছর বিরাশির শোভা রক্ষিত বলেন, “আমরা তো পঞ্চাশ হাজার টাকা এককালীন দিয়ে এখানে থাকতে ঢুকেছিলাম। প্রতি মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিই। লাভ-ক্ষতির দায় তো আমাদের নয়!’’
গত মাসেই এই বৃদ্ধাবাস থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন এক আবাসিক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত চলতি বছরের জুলাই থেকে। সংস্থার পক্ষ থেকে ট্যাংরার বাসিন্দা এক ব্যক্তি এসে আবাসিকদের খাওয়া থেকে যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বুঝে নেন। তখনই দুধ বন্ধ হয়ে যায়, খাবার নিম্ন মানের হয়। চিকিৎসা পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই গত মাসে চলে যাই।”
আবাসিকদের অভিযোগ, সমস্যার কথা বারবার সরোজ নলিনী দত্ত মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষকে বলতে চেয়েও লাভ হয়নি। ১৩ অগস্ট একটি চিঠি দেওয়া হয়। বলা হয়, ৩০ অগস্টের মধ্যে বৃদ্ধাবাস খালি করে দিতে হবে। পরিষেবা অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ থাকবে। আপাতত বন্ধ থাকবে কর্মীদের বেতনও। গচ্ছিত টাকার চেক ফেরত পাওয়া যাবে হোমের বালিগঞ্জের অফিস থেকে। আবাসিকদের দাবি, তাঁরা প্রতিবাদ করলে সংস্থার অন্য হোমে রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলে সেখানে যেতে চাননি আবাসিকেরা। অভিযোগ, এর পরেই সংস্থার প্রতিনিধি এবং পুলিশ আসে তাঁদের সরিয়ে দিতে। স্থানীয় একটি ক্লাব পাশে দাঁড়ালে সে দিনের মতো মিটমাট হয়। ওই ক্লাবের তরফে কুন্তল হালদার বলেন, ‘‘এই সংস্থা অনেক সেবামূলক কাজ করেছে এলাকায়। যতটুকু জানি, এটি ব্যবসায়িক সংস্থা নয়। শুধু লাভ না হওয়ায় বয়স্ক মানুষদের সরিয়ে দেওয়াটা অমানবিক।’’ সম্প্রতি বিষ্ণুপুর থানায় আবাসিকেরা লিখিত ভাবে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন।
সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমিতা সান্যাল বলেন, ‘‘আবাসিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সমস্যা হতে পারে মনে করে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বৃদ্ধাবাসের জন্য বাড়িটি দোতলা করা হবে বলে স্থির হয়েছে। কিন্তু ওঁরা যদি না যেতে চান, থাকবেন। কাজ চলবে তার মধ্যেই।’’ লাভ-ক্ষতির প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেননি। খাবারের নিম্নমান এবং চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ সব কিছুর জন্য দায়ী ম্যানেজার প্রহ্লাদ ঘোষ,
রাঁধুনি শান্তি মণ্ডল এবং মালি সমীর ঘাটু। ওঁরা আবাসিকদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছেন।” অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই তিন জন বলেন, ‘‘আমাদের জন্য সমস্যা হলে সরিয়ে দেওয়া হোক। আবাসিকদের চলে যেতে বলা হল কেন? সংস্থা অন্য যে হোমে পাঠানোর কথা এখন বলছে, সেটির পরিকাঠামো খারাপ।” আবাসিকদের অবশ্য বক্তব্য, সংস্থার মূল অফিস থেকে কেউ খোঁজ নেন না। প্রহ্লাদ, সমীর আর শান্তিই তাঁদের দেখভাল করেন।
বিষ্ণুপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, ওখানে গোলমাল চলছে। গিয়ে কোনও গোলমাল দেখিনি। তখনই জানতে পারি আবাসিকদের সরানোর কথা। তাই চলে আসি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy