গত কয়েক বছরে রাজ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ও নৌকাডুবির ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছিল। এ বার যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া রৌনক সাহার গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর নির্দেশে তাই সড়কের মতো জলপথ পরিবহণেও সব যানের নিরাপত্তা বাড়াতে উদ্যোগী হল রাজ্য পরিবহণ দফতর। গঙ্গায় নৌকার নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ির পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেটি এবং ভুটভুটির সুরক্ষাতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে রাজ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চডুবি এবং নৌকাডুবি হয়েছে। তাই সড়কের মতো জলপথ পরিবহণের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ইতিমধ্যেই সড়ক পরিবহণে নিরাপত্তা বাড়াতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু হয়েছে। একই ভাবে জলপথেও ওই প্রকল্প শুরু করতে চান তিনি।’’ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই ‘রোড সেফটি’র মতো ‘রিভার সেফটি’ নিয়েও রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
কী হবে ওই প্রকল্পে? পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রকল্পে তিনটি দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে— এক, জেটির নিরাপত্তা বাড়ানো। দুই, ভুটভুটি এবং নৌকার মতো জল-পরিবহণ মাধ্যমগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো। যাতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এড়ানো যায়। তিন, লঞ্চ এবং ভেসেলে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তপোক্ত করা।
এ রাজ্যে কয়েকশো জেটি রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রতিটি জেটির জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর (এসওপি) চালু করা হবে। তার মধ্যে পর্যাপ্ত আলো, মাইক, লাইফ জ্যাকেট এবং বয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনই আছে প্রতিটি জেটিতে একটি বড় গেট করার ভাবনা। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশির ভাগ জেটিতেই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয় অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়। সে কারণে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ওঠার পরে যাতে প্রবেশ আটকে দেওয়া যায়, সে জন্যই প্রত্যেক জেটিতে গেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে— সুন্দরবন অঞ্চলে যে শতাধিক জেটি আছে, সেগুলির এসওপি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হবে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরকে। অন্য দিকে, হুগলি নদীর উপরে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩০টি জেটিতে প্রাথমিক ভাবে পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রতি জেটির পরিকাঠামো উন্নয়নে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য জেলার বিভিন্ন জেটির সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির ভার দেওয়া হবে জেলাশাসকদের। বেসরকারি জেটির ক্ষেত্রে এসওপি তৈরির তত্ত্বাবধানে থাকবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা।
পাশাপাশি ভুটভুটির নিরাপত্তা বাড়ানোর উপরে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবহণ দফতর। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ রাজ্যে প্রধান জলযান ভুটভুটি। কিন্তু সেখানেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। তাই, তার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’’ ওই কর্তা জানান, কয়েক বছর আগে ভুটভুটির নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে আইআইটি খড়্গপুরের একটি দল সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কলকাতা পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তপন রুদ্র একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই ভুটভুটির নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রতিটি ভুটভুটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
এত টাকা কোথা থেকে আসবে? দফতর সূত্রের খবর, এ জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য। ঠিক হয়েছে, টাকা পেলে হলদিয়া-ত্রিবেণী জলপথের ভুটভুটির সংস্কার দিয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
ভুটভুটির পাশাপাশি, লঞ্চ এবং ভেসেলের নিরাপত্তা নিয়েও কঠোর হবে রাজ্য। এ ক্ষেত্রে সমস্ত লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট, বয়া এবং আলো পর্যাপ্ত রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রী সংখ্যা যাতে কখনওই বেশি না-হয়, সে দিকে বিশেষ নজরদারি করা হবে। এ জন্য প্রতিটি লঞ্চকেই সামনে বড় বড় করে সর্বাধিক যাত্রী-সংখ্যা লিখে রাখার নির্দেশ দিতে চলেছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy