E-Paper

ভেসেছে দোকান, আমপানের থেকেও বড় ক্ষতির মুখে বইপাড়া

কলেজ স্ট্রিটের বই বিক্রেতা ও প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আমপানে যা ক্ষতি হয়েছিল, সোমবার সারা রাতের তুমুল বৃষ্টিতে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৪
কলেজ স্ট্রিটের একটি বইয়ের স্টলে ভাসছে বই।

কলেজ স্ট্রিটের একটি বইয়ের স্টলে ভাসছে বই। —নিজস্ব চিত্র।

জমা জলে ভেসে যাচ্ছে দামি দামি নতুন বই, পুজোবার্ষিকী, পত্রপত্রিকা। জলে প্রায় ডুবে আছে বইয়ের দোকানের কম্পিউটার, বই রাখার তাক।

কলেজ স্ট্রিটের বই বিক্রেতা ও প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আমপানে যা ক্ষতি হয়েছিল, সোমবার সারা রাতের তুমুল বৃষ্টিতে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁদের। তুমুল বৃষ্টিতে তাঁদের দোকান ও অফিসঘর লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, বই ভিজে যাওয়ায় তাঁদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

প্রকাশকদের অনেকেই জানালেন, কলেজ স্ট্রিট এলাকায় বেশি বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমে যায়। তখন বইপত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু বই প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা হয়। তা হলে বই নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে না। কিন্তু সোমবার রাতে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কিছু করার ছিল না। তাঁদের মতে, নিকাশির উন্নতি হলে এই সমস্যার খানিকটা সমাধান হতে পারে।

মারুফ হোসেন নামে এক প্রকাশক জানালেন, সোমবার রাতের বৃষ্টির পরে মঙ্গলবার সকালে দোকানে এসে তাঁর মাথায় হাত। মারুফ বলেন, ‘‘সকালে দোকানে এসে দেখি, ভিতরে রাখা প্রায় সব বই-ই জমা জলে ভাসছে। তার মধ্যে আমার নিজস্ব প্রকাশনার বই যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অন্যান্য প্রকাশনার বই, পুজোসংখ্যা। কয়েক লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল।’’

পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। ত্রিদিব বলেন, ‘‘আমার প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার বই নষ্ট হয়েছে। এখন অনেকেই অনলাইনে বই অর্ডার দেন। অর্ডার দেওয়া বই যাতে খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়, তার জন্য আমরা সেগুলি দোকানের নীচের তাকে বা মাটিতে রেখে দিই। সোমবার রাতেও এমন প্রচুর বই মাটিতে ছিল। সেগুলি সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজোর মুখে আমাদের খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ গিল্ডের আর এক কর্তা সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘‘আমপানে ঝড় হয়েছিল বেশি। এ বার বৃষ্টি বেশি হয়েছে। আমপানের থেকেও বেশি বই নষ্ট হয়েছে এ বার। গভীর রাতে বৃষ্টি নামায় কোনও ব্যবস্থাও নিতে পারিনি। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁদের, যাঁরা ফুটপাতের ছোট ছোট স্টলে ব্যবসা করেন। এই বৃষ্টিতে তাঁদের প্রায় সব বই-খাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতের কয়েক জন বই বিক্রেতা জানালেন, রাতে বাড়ি ফেরার আগে বইপত্র সব প্লাস্টিকে মুড়ে রেখে যান তাঁরা। সোমবার রাতেও তা-ই করেছিলেন। কিন্তু সেই প্লাস্টিকও বইপত্র রক্ষা করতে পারেনি। সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কয়েক জন জানালেন, যে কাঠের টেবিলে বই রেখে তাঁরা বিক্রি করেন, এ দিন সকালে সেই কাঠের টেবিলও জলের উপরে ভাসছিল। পুজোর আগে এই ক্ষতি কী ভাবে তাঁরা সামাল দেবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

কলেজ স্ট্রিটের আর এক প্রকাশক শান্তনু ঘোষ জানালেন, সূর্য সেন স্ট্রিটে তাঁদের মূল দোকানে জল না ঢুকলেও ওই এলাকায় তাঁদের আর একটি দোকানের প্রায় সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শান্তনুর মতে, ‘‘যে সব বই ভিজে গিয়েছে, সেগুলি শুকিয়েও আগের অবস্থায় ফিরবে না। ফলে, সে সব বই পুরো দামে বিক্রি হবে না। কিন্তু বইপ্রেমীদের কাছে আবেদন, ভেজা বই শুকিয়ে যাওয়ার পরে যদি সেগুলি পাঠযোগ্য থাকে, তা হলে কম দামে কিনে নিন। এই বিপর্যয়ে প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের পাশে এ ভাবে দাঁড়াতে পারেন তাঁরা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

College Street Heavy Rain Books

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy