ক্ষোভ: রেহানা বেগমের (ইনসেটে) বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
মাঝবয়সি ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। পাল্টা অভিযোগ করেছিল অন্য পক্ষও। এই অবস্থায় বিষয়টি মিটিয়ে নিয়ে থানা থেকে বাড়ি ফিরে গেল দু’পক্ষই। ঘটনার ছ’দিনের মাথায়, গত শুক্রবার মৃত্যু হল ওই ব্যক্তির স্ত্রীর। অভিযোগ, গর্ভপাত হল পুত্রবধূরও। তার পরে মামলা রুজু হল পুলিশে! গ্রেফতার হলেন তিন জন।
তিলজলার জি জে খান রোডের ওই ঘটনার পরে অভিযোগকারীদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকাও। যদিও তদন্তকারীদের দাবি, বাদী-বিবাদী দু’পক্ষই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থাকছে, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশ কেন নিজে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করল না?
গত ২ ফেব্রুয়ারি মদ্যপান করাকে ঘিরে ইএম বাইপাসের পঞ্চান্নগ্রাম এলাকায় মহম্মদ আমানত নামে এক যুবক ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বিবাদ হয় মহম্মদ আজহার নামে আর এক যুবকের। আমানত ও আজহারের বাবা দীর্ঘদিন ধরে প্রোমোটিং ব্যবসায় একে অপরের সঙ্গী বলে খবর। জি জে খান রোডে একই আবাসনের পাঁচতলায় দু’টি আলাদা ফ্ল্যাটে তাঁদের পরিবার থাকে। মদ্যপান নিয়ে বিবাদের কথা ২ তারিখ রাতে আমানতের বাবা মহম্মদ কাজিমকে জানাতে যান আজহারের বাবা গুলাম ওমর। অভিযোগ, তখন কাজিম এবং তাঁর ছেলেরা গুলামকে মারধর করেন। বাধা দিতে এলে গুলামের পুত্রবধূ তানাজ ইকবালের পেটে লাথি মারা হয় বলেও অভিযোগ। তানাজ ছ’সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বামী তথা গুলামের পুত্র মহম্মদ ইমরান। কাজিম ও তাঁর ছেলেরা তানাজকে লাথি মারছেন দেখে বাধা দিতে যান তাঁর শাশুড়ি রেহানা বেগম। সে সময়ে রেহানাকে পাঁচতলার সিঁড়ি থেকে নীচে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ওই রাতে দু’পক্ষই থানায় গেলেও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ইমরান বলেন, ‘‘ওঁরা মিথ্যে অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে থানায় গিয়েছিলেন। আমরা হাসপাতালে যাওয়ার সময়টুকু পাইনি। শুধু দেখলাম, পুলিশ আমাদের এবং ওঁদের— দু’পক্ষ থেকেই গ্রেফতার করতে চাইছে। বাবা ভয় পেয়ে যান। দু’পক্ষের লোককেই গ্রেফতার করা হচ্ছে দেখে তিনি বিষয়টি মিটিয়ে নেন। পুলিশও বলল, মিটিয়ে নেওয়া ভাল। তখন বুঝিনি মায়ের চোট এত গুরুতর।’’ পরের দিন অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে রেহানার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। অস্ত্রোপচারের পরেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। গত শুক্রবার দুপুরে মারা যান তিনি। এর পরে ফের থানার দ্বারস্থ হয় রেহানার পরিবার। তখনই অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো, প্রসূতিকে জোর করে গর্ভপাত করানো-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়।
আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষা না করে পুলিশেরই উচিত ছিল ঘটনার গুরুত্ব বুঝে মামলা রুজু করে তদন্ত করা। শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রসূতিকে জোর করে গর্ভপাত করানোর মতো অভিযোগ যেখানে আছে, সেই মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করা উচিত ছিল পুলিশের।’’ আর এক আইনজীবীর অবশ্য দাবি, ‘‘বাদী-বিবাদী পক্ষের অভিযোগ না থাকলে সাক্ষী মজুত করার সময়ে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। সে কারণে অনেক সময়ে পুলিশ অভিযোগ দায়ের হওয়ার অপেক্ষা করে। তবে গুরুত্ব বুঝে এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।’’ লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে বধূর গর্ভপাতের বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। রেহানা নামে ওই মহিলা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কিন্তু পুলিশ বিষয়টিতে নজর রেখেছিল কি? উত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy