Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধ্বংসস্তূপেই হারিয়ে গেল ফেলে আসা পাখিরা

মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বাড়ির মেয়ে পিয়ালী সেন।

বাড়ি ভেঙে পড়ে মারা গিয়েছে এই পাখিগুলিই।

বাড়ি ভেঙে পড়ে মারা গিয়েছে এই পাখিগুলিই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

এর পরে রাস্তা বন্ধ। পুলিশের গার্ডরেলের উপরে মুখ রেখে ভেঙে পড়া বাড়ির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে মহিলা। চোখে জলের ধারা। আশপাশ থেকে পরামর্শ এল, ‘‘হোটেলে ফিরে যান। শরীর খারাপ করবে তো!’’ মুখ না ফিরিয়েই মহিলা বললেন, ‘‘এখনও দেখা যাচ্ছে লেখাটা। ৯ নম্বর সেকরাপাড়া লেন। এর পরে ওটাও হয়তো থাকবে না! চলে গেলে ফিরে এসে আর এটুকুও দেখতে পাব না। ওখানেই আমাদের পাখিগুলো...!’’

মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বাড়ির মেয়ে পিয়ালী সেন। বৌবাজারে মেট্রো প্রকল্পের কাজের জন্য পাড়ার লোকজন কতটা সমস্যায় পড়েছেন, জানিয়ে এসেছেন সেই কথা। তবে এটা বলা হয়নি যে, কোনও মতে পোষ্য কুকুরগুলিকে বার করা গেলেও ওই বাড়িতেই আটকে রয়েছে তাঁদের পোষা অন্তত ৭০টি বিদেশি প্রজাতির পাখি। সেগুলিকে বার করে আনার অনুমতিও চাওয়া হয়নি। বুধবার সেন বাড়ির সকলেরই আক্ষেপ, আর তার দরকার হবে না। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে সেকরাপাড়া লেনের সেই ৯ নম্বর সেন বাড়ি। পিয়ালী বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ফেরার পরের দিন সকালেই যে সব ভেঙে পড়বে, তা ভাবিনি। আর কিছু ফিরিয়ে আনার নেই।’’

৮৫ বছরের ঠাকুরদা, ৭৮ বছরের ঠাকুরমা, মা, বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসারে একমাত্র রোজগেরে চিরঞ্জিত সেন। তিনি একটি অ্যাপ-নির্ভর খাবার আনানোর সংস্থার চাকুরে। সকলেরই এখন ঠিকানা মধ্য কলকাতার একটি হোটেল। রবিবার ভোরে সকলের সঙ্গে বাড়ির পোষ্য পাঁচটি কুকুরকেও বার করে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন চিরঞ্জিত। তবে অন্তত ৫০টি বড় পাখি ও তাদের ছানাদের বার করার সময় পাননি তাঁরা। এর পরে গত কয়েক দিনে বাড়ি দেখতে যখনই বৌবাজারে গিয়েছেন, পাখিগুলিকে বার করে আনার অনুনয় জানিয়েছেন বলে চিরঞ্জিতের দাবি। কিন্তু লাভ হয়নি।

এ দিন চিরঞ্জিত বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে মেট্রোর প্রতিনিধিরা এসে বলে যান, কয়েক দিনের জন্য বাড়ি খালি করতে হতে পারে। তখন সে ভাবে বিশ্বাস করিনি। এর পরে গত ২৮ অগস্ট দেখি, বাড়ি খালি করানোর নোটিস লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে। ২৯ তারিখ আমাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয়। তখন ওঁরা বলছিলেন, কুকুর নিয়ে হোটেলে ওঠা যাবে না। আমি জেদ ধরায় ওঁরা বাধ্য হন।’’ সকলে হোটেলে থাকলেও গত শুক্র ও শনিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে পাখিদের খাইয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন চিরঞ্জিত। তবে রবিবার ভোরে বাড়ির এক দিকের অংশ ধসে পড়ার পর থেকে আর কাউকেই সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

চিরঞ্জিত বললেন, ‘‘ভাবছিলাম, এত দিন না খেয়ে পাখিগুলো কী করে থাকবে! ওদের অনেকগুলো ছানা রয়েছে। আজ সকালে পাড়া থেকে বাড়ি ভেঙে পড়ার ফোনটা পেয়ে বুক উড়ে গিয়েছিল।’’ তত ক্ষণে চাপা পড়ে সব শেষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bowbazar Building Collapse Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE