Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ট্যাংরা

ফের গণপ্রহারে হত যুবক

ফের চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটল শহরে। রবিবার, ট্যাংরা থানার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ভোরে একটি ভ্যাট থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ সোনু (২০) নামে ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। ওই অবস্থায় তাঁকে প্রথম দেখতে পান শেখ মোতি নামে এক ভ্যানচালক। সোনুকে এনআরএসে ভর্তি করা হলে পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত সোনু

মৃত সোনু

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

ফের চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটল শহরে। রবিবার, ট্যাংরা থানার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ভোরে একটি ভ্যাট থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ সোনু (২০) নামে ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। ওই অবস্থায় তাঁকে প্রথম দেখতে পান শেখ মোতি নামে এক ভ্যানচালক। সোনুকে এনআরএসে ভর্তি করা হলে পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সোনুর পরিবার ট্যাংরা থানায় খুনের অভিযোগ করলে ঘটনাস্থল থেকেই কার্তিক পাসি নামে এক যুবককে ধরে পুলিশ। আরও দুই অভিযুক্ত পলাতক। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সোনুর পায়ে লোহার শিকের আঘাতের চিহ্ন ও পাঁজরেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সোনু প্লাস্টিক, রবারের জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। রবিবার ভোরে সেই কাজেই বেরোন। প্রতিবেশীদের দাবি, সেই সময়ে কিছু যুবকের সঙ্গে ঝামেলা বাধলে তারাই সোনুকে মারধর করে ফেলে রেখে যায়। পুলিশের দাবি, স্থানীয়েরা জানান, ওই যুবক এলাকারই এক বাড়িতে চুরি করতে ঢুকছিল। পাড়ার কয়েক জন তা দেখায় মারধর করা হয় সোনুকে। তাঁদের সন্দেহ ছিল, নেশার টাকা জোগাড় করতে সোনু চুরি করতে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সোনু মাঝেমধ্যে নেশা করতেন। তবে প্রতিবেশী গোলিহার বেগম বলেন, “নেশা করে নিজের মায়ের কাছে টাকা চেয়ে মাঝেমধ্যে অশান্তি করলেও পাড়ায় কোনও দিন ঝামেলা করেনি সোনু।” তবে প্রতিবেশীদের বক্তব্য, নেশা করার অপরাধে পিটিয়ে মারার কোনও যুক্তি নেই। নেশামুক্তি সংগঠনের হাতেও সোনুকে তুলে দেওয়া যেতে পারত।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দেড় বছর বিবাহিত সোনুর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। ওই যুবকের বাবা রিকশা চালানোর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসেবে কাজ করেন। সোনুর মা সালিয়া বিবি বলেন, “সকালে ছেলের দেহ উদ্ধারের খবর পাই। ও কোনও ঝামেলায় থাকত না। কী যে হল, বুঝতে পারছি না।” বাকরুদ্ধ সোনুর বাবা শেখ সালিমেরও।

গত ১৬ নভেম্বর এনআরএসের হস্টেলে চোর সন্দেহে জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা কোরপান শা নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের। সেই ঘটনায় ২২ দিন পরেও কেউ ধরা পড়েনি। উল্টে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্যভবনেরই একাংশের বিরুদ্ধে।

শনিবারও কালীঘাটে মোবাইল-চোর সন্দেহে এক যুবককে পেটায় কয়েক জন। ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে বেঁধে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করে।

পরপর এমন ঘটনা ভাবাচ্ছে মনোবিদদের। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, “মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজের সৃজনশীলতা হারিয়ে অন্যকে শাসনের মাধ্যমে নিজের রাগ, ক্ষোভ ও হতাশারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। অনেকে মিলে অপরাধ করলে পার পাওয়া যেতে পারে— এই ভাবনা থেকেই এ ভাবে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে মানুষ। তার ফলেই ঘটছে এ রকম হিংস্রতার প্রকাশ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE