এ ভাবেই পাইপ বেয়ে চারতলায় উঠে আগুন নেভান শ্যামল পুরকায়েত।—নিজস্ব চিত্র।
দমকল নয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের গ্রাস থেকে আস্ত একটা ফ্ল্যাট এবং তার চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা পোষ্যকে বাঁচালেন বছর তিরিশের এক যুবক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেহালার বসাক বাগান রোডের বাসিন্দারা হঠাৎই দেখতে পান, একটিআবাসনের চারতলার কোণার দিকের ফ্ল্যাট থেকে কালো ধোঁয়া বার হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা দমকলে খবর দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চারতলার যে ফ্ল্যাটে আগুন লাগে, সেটি তালাবন্ধ ছিল। তাপস দাস নামে এক ব্যক্তি একাই থাকেন ওই ফ্ল্যাটে। তিনি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলে তালাবন্ধ ফ্ল্যাটে থাকে তাঁর একমাত্র পোষ্য।
পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ঘরের সমস্ত আসবাব।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগেই সংরক্ষণ বিলে চ্যালেঞ্জ, সুপ্রিম কোর্টে রুজু জনস্বার্থ মামলা
এ দিন সকালেও তাপসবাবু অফিস বেরিয়ে যান। পোষ্যটি একাই ছিল। আগুন লাগার পর সে চিৎকার করতে থাকে। প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে কুকুরটিকে বার করে আনার চেষ্টা করেন। তার মধ্যেই ফ্ল্যাটের রাস্তার দিকের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দমকল এলেও তাঁরা ফ্ল্যাটের দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না এতটাই গরম ছিল। ফলে পোষ্যটি আটকে পড়ে।
যে বাড়িতে আগুন লেগেছে তার তিনটে বাড়ি পরেই থাকেন শ্যামল পুরকায়েত। পেশায় ট্যাক্সিচালক। স্ত্রীর কাছে আগুন লাগার খবর পেয়েই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তার পর পাইপ বেয়ে উঠে আগুন নেভান।
পরে শ্যামল বলেন,“আমি তখন এক্সাইড মোড়ে ছিলাম। স্ত্রী ফোন করে বললেন,পাশের ফ্ল্যাটে বড় আগুন লেগেছে। পাড়াতে বাড়ির কাছে আগুন লেগেছে। তাই বসে থাকতে পারলাম না। সোজা বাড়ি রওনা দিলাম।” বাড়ি ফিরে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে ফ্ল্যাট। সামনে দাঁড়িয়ে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। দমকলকর্মীরা চেষ্টা করছেন, কিন্তু রাস্তার দিকে আগুন নেভাতে পারছেন না। ভিতরের তাপও কমছে না। ঢুকতেও পারছিলেন না ওঁরা।
ওই অবস্থায় দরকার ছিল সোজা রাস্তার দিকের জানালায় বাইরে থেকে জল দেওয়া। সবাই দমকল কর্মীদের বলছিলেন পাশের বাড়ির ছাদ থেকে জল দিতে। কিন্তু ওই বাড়ির ছাদের দরজা ছিল তালা বন্ধ। বাড়ির মালিক বাইরে। সেই অবস্থায় পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে উঠছিল। শ্যামল বলেন, “ওই অবস্থায় বসে সময় নষ্ট করার অর্থ আরও বিপদ। আগুন ছড়াচ্ছিল। সরু গলিতে দমকলের ল্যাডারও ঢুকবে না। তাই আমি পাশের বাড়ির পাইপ এবং কার্নিশ বেয়ে ওঠা শুরু করলাম।”
আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সমকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়, জানালেন সেনাপ্রধান
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্যামল কখনও রেন ওয়াটার পাইপ, কখনও জানলার গ্রিল ধরে পাশের বাড়ির চার তলার ছাদে পৌঁছন দমকলের ওয়াটার জেট নিয়ে। তারপর ছাদ থেকে জ্বলন্ত ফ্ল্যাটের জানলা লক্ষ্য করে জল দিতে থাকেন। আগুন নেভানোর কোনও প্রশিক্ষণ না থাকলেও শুধু মনের জোরে চার তলা বেয়ে উঠে জল দিয়ে ওই ঘরের আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। তাতে ফ্ল্যাটের ভিতর তাপ কমে। দমকল কর্মীরা ভিতরে ঢুকে পুরো আগুন নেভান। উদ্ধার হয় তাপসবাবুর পোষ্য।
শ্যামলের স্ত্রী ছাড়াও বাড়িতে আছে ১২ আর সাড়ে ন’বছরের দুই ছেলে। আছেন মা-ও। তিনি স্বীকার করেন,“ওঠার আগে একটু ভয় লাগছিল। কিন্তু, তার পরে ভয় কেটে যায়।”
বাইরে থেকে জানলায় জল দিচ্ছেন শ্যামল পুরকায়েত।—নিজস্ব চিত্র।
পুরো আগুন নেভানোর পর দেখা যায়, রাস্তার দিকে ঘরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে সমস্ত আসবাবপত্র। দমকল আধিকারিকরা এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কী ভাবে আগুন লেগেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলের এক আধিকারিক বলেন,“রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ায় সেখানে দমকলের ল্যাডার নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আমাদের কর্মীরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে গেলেও ফ্ল্যাটের ভিতর তাপমাত্রা বেশি থাকায় ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিল। পাশের বাড়িতে উঠে ওই যুবকের জল দেওয়ায় নিসন্দেহে আমাদের কাজের সুবিধা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy