প্রতীকী ছবি।
ফাটকা-বাজার শুরু হয়েছে এলাকাভিত্তিক করের আবেদনপত্র পূরণ করার ক্ষেত্রে।
কলকাতা পুরসভার সম্পত্তিকর আদায়ে এপ্রিল থেকে নতুন এই পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে আবেদনপত্র তৈরি করা হয়েছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না পুরকর্মীদেরই। আবেদনপত্র পূরণ করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে করদাতাদের। আর তার সুযোগ নিতে প্রতি বরোয় আসরে নেমে পড়েছে এক শ্রেণির দালাল।
এক-একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে পুরভবনে। গড়িয়াহাটের বাসিন্দা সুকোমল দত্তের কথায়, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছি না। আবেদনপত্র পূরণ করতে দালালদের সাহায্য নিতেই হচ্ছে। না হলে পূরণ করতেই পারব না।’’
কেন এই জটিলতা?
পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে এলাকাভিত্তিক কর আদায় চালু হয়েছে। যদিও আপাতত সম্পত্তিকর আদায়ের ক্ষেত্রে পুরনো পদ্ধতিও চালু রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সবাইকেই নতুন পদ্ধতিতে কর দিতে হবে। এই ব্যবস্থায় কলকাতা শহরকে এলাকাভিত্তিক গুরুত্ব অনুসারে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চল বা জোনের কর মূল্যায়ন এক এক রকম। আর, কর নির্ধারণেও রয়েছে নানা ধরনের জটিল হিসেব। জমি বা বাড়ি কত বছরের, সামনে কত ফুট রাস্তা, জমির পরিমাণ, জমির চরিত্র— এ সবের সঙ্গে আরও কিছু সূচক। গুণ-ভাগ করে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। এই আবেদনপত্রের নাম দেওয়া হয়েছে সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্ম (স্যাফ)।
এই পদ্ধতি এপ্রিলে চালু করার সময়ে পুর প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, দু’মাস সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে কর দেওয়ার জন্য সব করদাতাকে আবেদন করতে হবে। পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় সম্পত্তিকর দাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ। কিন্তু মে মাসের শেষ পর্যন্ত হিসেবে দেখা গিয়েছে, মোট করদাতার এক শতাংশও আবেদন করেননি।
আরও পড়ুন: মুরগির ঠ্যাঙে ব্যাক্টেরিয়া, বিষ ক্ষীরেও
পুরসভার এক আমলার কথায়, ‘‘প্রথমত, আবেদনপত্র কী ভাবে পাওয়া যাবে তা অনেকের কাছেই অজানা ছিল। দ্বিতীয়ত, আবেদনপত্র পাওয়ার পরেও তা পূরণ করতে পারছেন না অনেকে। কারণ, ঠিক ভাবে পূরণ না করতে পারলে করের হেরফের হয়ে যাবে।’’ উদাহরণ দিয়ে ওই আমলা বলেন, ‘‘আবেদনপত্রের এক জায়গায় বলা আছে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সবচেয়ে কাছে বৈদ্যুতিক পোলের নম্বর কত? এটা অনেকেই জানেন না।’’ কেন তা প্রয়োজন, তা-ও বুঝতে পারছেন না অনেকে। এমন নানা কারণেই আবেদনপত্র পূরণে অন্যের সহায়তা চাইছেন করদাতাদের একটা বড় অংশ। এই সুযোগেই টাকার বিনিময়ে আবেদনপত্র পূরণে নেমে পড়েছেন একদল মানুষ। করদাতার ভার বুঝে চড়াচ্ছেন টাকার অঙ্ক।
এই দালাল-চক্র বন্ধে পুরসভা কতটা তৎপর? কর মূল্যায়ন দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘টাকা দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ না করার জন্য করদাতাদের বলা হচ্ছে। আমরা বলছি, আপনারা নিজেরাই আবেদনপত্র ভরুন। আমরা সাহায্য করব।’’
কিন্তু এর জন্য কোনও হেল্প ডেস্ক করছে কি পুরভা? ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘হেল্প ডেস্ক না হলেও কয়েকটি ওয়ার্ডে শিবির করা হয়েছে। সেখানে করদাতাদের ডেকে নতুন এই পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। ভাল সাড়াও মিলছে।’’ কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডেই এমন শিবির করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু প্রথম দু’মাসে প্রতিটি ওয়ার্ড তো দূর অস্ত্, ১৬টি বরোতেই এখনও সেই ধরনের শিবির করা যায়নি।
সদ্য সমাপ্ত পুর অধিবেশনে এ নিয়ে প্রশ্নও তোলেন বিরোধী দলের একাধিক কাউন্সিলর। তাঁদের বক্তব্য ছিল, আবেদনপত্র পূরণের কাজ আরও সরল হোক। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, করদাতাদের সুবিধার্থে সব রকম সহায়তা করবে পুর প্রশাসন। আপাতত আবেদনপত্র পূরণের সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।
যদিও পুরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট করদাতার মাত্র তিন-চার শতাংশ আবেদনপত্র পূরণ করেছেন গত আড়াই মাসে। পুর প্রশাসন এখনই নজর না দিলে সব করদাতাকে এলাকাভিত্তিক করের আওতায় আনা কঠিন হবে। অনেক করদাতা মনে করছেন, আবেদনপত্র পূরণে শহর জুড়ে হেল্প ডেস্কের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। ওয়ার্ডের করদাতাদের সহায়তায় কাউন্সিলরদেরও উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করছেন কর মূল্যায়ন দফতরের আধিকারিকেরা। তা না হলে দালালদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy