Advertisement
E-Paper

আর কত প্রাণ নেবে একটা উড়ালপুল

বছর আড়াই ধরে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের উপরে তৈরি হচ্ছে একটি উড়ালপুল। এই উড়ালপুলটির কাজের জন্য জিঞ্জিরাবাজার থেকে বাটা মোড়, প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তার চরম বেহাল অবস্থা।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১১
মরণফাঁদ: বিপজ্জনক বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের সরকারপোল।—নিজস্ব চিত্র।

মরণফাঁদ: বিপজ্জনক বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের সরকারপোল।—নিজস্ব চিত্র।

বেহাল রাস্তায় একের পর এক দুর্ঘটনা। এর জেরে মৃত্যুও হচ্ছে। অন্য দিকে, রাস্তা সারাইয়ের ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে ঘুরছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। গত আড়াই বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। অথচ নরককুণ্ড থেকে মুক্তির কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না মহেশতলা-বজবজ এলাকার বাসিন্দারা।

বছর আড়াই ধরে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের উপরে তৈরি হচ্ছে একটি উড়ালপুল। এই উড়ালপুলটির কাজের জন্য জিঞ্জিরাবাজার থেকে বাটা মোড়, প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তার চরম বেহাল অবস্থা। এই মুহূর্তে রাস্তার ছবিটা অনেকটা এরকম— রাস্তার পাশেই নিকাশি নালা, মাঝখানে পানীয় জলের লাইন। সব মিলিয়ে সরু হতে হতে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা। ৪০ ফুট চওড়া রাস্তা এখন মেরেকেটে ১৫ ফুটে ঠেকেছে। মহেশতলা পুরসভা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, উড়ালপুল নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তা দেখভালের দায়িত্বও ওই ঠিকাদার সংস্থারই।

এলাকাবাসীর কথায়, বেহাল রাস্তার কারণে গত আড়াই বছরে দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত তিন মাসে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। বেহাল রাস্তা সারাইয়ের বিষয়ে পুরসভা, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার সমন্বয় বৈঠকও হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একের পর এক বৈঠক হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতির বাণী ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। অথচ খারাপ রাস্তার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুমিছিল এগিয়েই চলেছে।

সম্প্রতি স্বামীর সাইকেলের পিছনে বসে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। রাতের অন্ধকারে একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন থেকে সাইকেলে ধাক্কা মারলে পড়ে যান ওই মহিলা। লরির চাকা মহিলাকে পিষে দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার জেরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরোধ ওঠাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় পুলিশকেও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই উড়ালপুল তৈরি করার জন্য রাস্তা থেকে বাতিস্তম্ভও সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এক দিকে বেহাল রাস্তা, তার উপর কোনও আলো নেই। রাতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের পরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আলো লাগানো হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্ত নগণ্য বলেই দাবি করছেন পথচারী এবং স্থানীয়েরা।

বুধবার রাতে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডে গিয়ে দেখা গেল, রামপুর থেকে সরকারপোল এলাকার রাস্তায় বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হওয়ায় গর্তগুলি জলে টইটম্বুর হয়ে রয়েছে। আক্রা ফটক ও মেমানপুর এলাকার রাস্তারও করুণ অবস্থা। রাস্তা দিয়ে একের পর এক বড় লরি ও বাস চলাচল করছে। ছোট গাড়ি বা মোটরবাইক চালানো মানে এক অর্থে মৃত্যুপথযাত্রীর তালিকায় নাম লেখানো।

সাড়ে সাত কিমি রাস্তার অধিকাংশ খন্দে ভরে রয়েছে। কোথাও কোথাও টিমটিম করে জ্বলছে সদ্য লাগানো আলো। সরকারপোল এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাস্তা থেকে বাতিস্তম্ভ তো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতারাতি সাড়ে সাত কিমি রাস্তায় আলো লাগানো তো আর সম্ভব নয়! সব সময় মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে আছি বলেই মনে হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিনের শেষে ঠিকঠাক ফিরব কি না জানি না। অথচ এই রাস্তা ছাড়া কলকাতায় যাওয়ার আর কোনও গতি নেই।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও সম্প্রতি রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘ঠিকাদার সংস্থার উপর ভরসা নেই। সরাসরি কেএমডিএ-র সঙ্গে কথা বলেছি। অবিলম্বে রাস্তা সারাইয়ের ব্যবস্থা করতে বলেছি। কেএমডিএ রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও পুরসভার আশ্বাসে ভরসা করতে পারছেন না স্থানীয়েরা। মেমানপুরের এক ব্যবসায়ীর কথায়, এ যেন নরবলি দিয়ে উড়ালপুল তৈরির মতো ঘটনা। তৈরির আগে এক উড়ালপুল আর কত প্রাণ নেবে!’’

Flyover Budge Budge Trank road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy