সরকারি সম্পত্তি। অথচ সেই সম্পত্তি দখল করে বেপরোয়া তোলাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হাওড়া স্টেশন এলাকায় দফতরের জমি-সম্পত্তি পরিদর্শনে গিয়ে এই তথ্য জানতে পেরে চোখ কপালে উঠেছে কেএমডিএ-র (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি) কর্তাদের। সংস্থার কর্তারা এত দিন পর জানতে পেরেছেন হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন গঙ্গাতীরে তাঁদের সংস্থার যে জমি রয়েছে তা ভোগদখল করছে অন্য লোকজন। এ জন্য কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে কেএমডিএ।
কেএমডিএ সূত্রে খবর, ১৯৮৬ সালে চাঁদমারি ঘাটের পাশে সংস্থার চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের থাকার জন্য একটি দোতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। অভিযোগ, কর্মীরা কয়েক বছর ভাড়া দিয়ে থাকার পরে বাড়িটির সাতটি ঘর ক্রমাগত বেদখল হয়ে যায়। ভাড়া দেওয়াও বন্ধ করেন ভাড়াটেরা।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেএমডিএর ওই বাড়িটি ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুষ্কৃতী সাম্রাজ্য। প্রতিটি ঘরে চলত নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। চোলাই মদ, চরস, গাঁজা বিক্রির ঠেক হয়ে উঠেছিল বাড়িটি। এমনকী হাওড়া স্টেশনের চোরাই মালপত্রও ঘরগুলিতে রাখা হতো। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমরা দু’বছর ধরে কেএমডিএর কাছে ওই বাড়িটি চাইছিলাম পুলিশ-ব্যারাক তৈরি করার জন্য। কেএমডিএ বলার পরে আমরা দখলদারদের হটিয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ ব্যারাক করছি। এতে এলাকায় দুষ্কৃতী কার্যকলাপও কমবে।”
সম্প্রতি কেএমডিএ কর্তারা বিষয়টি জেনে ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে জানা যায়, সংস্থারই এক কর্মী প্রতি মাসে সাতটি ঘর চার হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে ২৮ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করতেন। কেএমডিএ সূত্রে খবর, হাওড়া সিটি পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে ওখানে পরিদর্শনে যান সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিমাদ্রি রায়। তিনি সংস্থার পদস্থ অফিসার ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে নিজেদের জমিতে গড়ে ওঠা বেআইনী নির্মাণ ও দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি দেখেন। পরে তিনি বলেন, “বাড়িটি দখল হয়ে ছিল এটা ঠিক। খবরটা জেনেই পুলিশ দিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্টেশন এলাকায় কেএমডিএর অন্য যে সব জায়গা দখল হয়ে আছে তা মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
কিন্তু কী ভাবে বেদখল হয়ে গিয়েছে কেএমডিএর এই সব সম্পত্তি?
সংস্থার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, “সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। আমাদের কয়েক জন কর্মী এই সব জায়গা ভাড়া দিয়ে তোলাবাজি করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত হলেই সব বোঝা যাবে।” কেএমডিএ সূত্রে খবর, শুধু এই বাড়িই নয় সংস্থার বহু জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দোতলা অফিস, ট্র্যাভেল এজেন্সি, সুলভ কমপ্লেক্স, দুধ বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি। এমনকী কেএমডিএর জমিতে লাগানো হয়েছে বড় বড় হোর্ডিং, ব্যানার। এ সব থেকে কে ভাড়া আদায় করছে কে অনুমতি দিয়েছে তার কোনও নথি সংস্থার হাওড়ার অফিসে না থাকায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে সম্প্রতি এই সব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে ওই জমি-সম্পত্তি দখল মুক্ত কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন কেএমডিএ-র পদস্থ কর্তারা। কী ভাবে ওই সব জমি-সম্পত্তি বেদখল হল এবং এত দিন ধরে দফতরের কোষাগারে রাজস্ব জমা না পড়ে অন্য তা অন্য কারও পকেটে গেল তা জানতেও বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy