চিংড়িঘাটায় আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে কমলা লাইন (নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর)-এর মেট্রোর বকেয়া কাজ। এই নিয়ে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়ে দিল, এই কাজ কী ভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে ৬ জানুয়ারির মধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে জানিয়ে দিতে হবে রাজ্য এবং ট্রাফিক পুলিশকে। আদালতের রায়ের উপর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল স্থগিতাদেশ চাইলেও তা খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এর আগের শুনানিতে হাই কোর্ট জানিয়েছিল, জানুয়ারির মধ্যেই শেষ করতে হবে চিংড়িঘাটায় মেট্রোর বকেয়া কাজ। আদালতের সেই নির্দেশ এখনও ফলপ্রসূ না হওয়ায় মঙ্গলবার আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পাল এবং বিচারপতি গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের বৈঠকে কাজের ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়ার পরেও সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এমনকি, গত বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর আবার সব পক্ষকে বৈঠকে বসে কাজের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
এর পরেই মঙ্গলবার হাই কোর্টের নির্দেশ, রাজ্য এবং ট্রাফিক পুলিশকে এই কাজের পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কী ভাবে, কী করা হবে, তা ২০২৬ সালের ৬ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বকেয়া কাজ।
রাজ্যের তরফে আগের শুনানিতে জানানো হয়েছিল, এই মুহূর্তে রাস্তা বন্ধের অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। জানুয়ারি মাসেও তা সম্ভব নয়। ফেব্রুয়ারির আগে চিংড়িঘাটা মেট্রোর কাজ করা যাবে না। সেই নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘এখন বিভিন্ন উৎসবের সময়। এটা কোনও অজুহাত নয়। ভারতবর্ষ উৎসবের দেশ। একটা উৎসব শেষ হলেই অন্য আর একটি উৎসব শুরু হয়। মেট্রোরেলের কাজে বৃহত্তর জনগণের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের মনোভাবে আমরা সন্তুষ্ট নই। বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও সেটা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা নির্দেশ দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা রাজ্য এবং ট্রাফিক পুলিশকে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিচ্ছি।’’
নিউ গড়িয়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো লাইনের সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে চিংড়িঘাটায়। মাত্র ৩৬৬ মিটার অংশে কাজ অসম্পূর্ণ। তা শেষ করার জন্য রাস্তা বন্ধ রেখে কাজ করতে হবে। কিন্তু তার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে একাধিক বার চিংড়িঘাটায় মেট্রোর কাজ নিয়ে রাজ্য, কেন্দ্র, নির্মাণকারী সংস্থা আরভিএনএল-সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতিনিধিদের সদর্থক বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। বলা হয়েছিল, জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এই জটিলতার সমাধানসূত্র বার করতে হবে। কিছু দিন আগেও বৈঠক হয়। রাজ্যের যুক্তি ছিল, চিংড়িঘাটা ব্যস্ত রাস্তা। বাইপাসের দিক থেকে মধ্য ও উত্তর কলকাতায় আসার প্রধান পথ সেটাই। প্রতি দিন বহু গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তা বন্ধ রাখলে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতেও তীব্র যানজটের আশঙ্কা থাকবে। সাধারণ মানুষ এতে সমস্যায় পড়বেন। এমনকি, অ্যাম্বুল্যান্সের যাতায়াতেও সমস্যা হবে।