Advertisement
১১ জুন ২০২৪
Recruitment Case

মশার কামড় খেয়েই রাত কাটল ধর্নারত চাকরিপ্রার্থীদের

চাকরিপ্রার্থী পায়েল রায়, ছন্দা বিশ্বাস, সুমা নস্করেরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের জন্য বায়ো-টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই। যদিও এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল।

ত্রিপল খাটিয়ে কোনও রকমে শীতের রাত কাটালেন ধর্নারত চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার রাতে, সল্টলেকের বিকাশ ভবনের কাছে।

ত্রিপল খাটিয়ে কোনও রকমে শীতের রাত কাটালেন ধর্নারত চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার রাতে, সল্টলেকের বিকাশ ভবনের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২২
Share: Save:

খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন। শেষ রাতে ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ শীত শীত ভাব। কিন্তু কম্বল নেই প্রায় কারও কাছেই। সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রব। সব মিলিয়ে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্না অবস্থানের প্রথম রাতটা বিনিদ্রই কাটল ইন্টারভিউ-বঞ্চিত উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের।

ময়দানে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে ইন্টারভিউ-বঞ্চিত এই চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না অবস্থান চলছে ৫২৬ দিন ধরে। এই ধর্না অবস্থানের পাশাপাশি বিকাশ ভবনের কাছে সৌরভ অ্যাকাডেমির সামনের রাস্তায় বুধবার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্না অবস্থান করছেন উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ-বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে ধর্না অবস্থান চলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে সল্টলেকের এই ধর্না অবস্থান তিন দিন ধরে টানা চলছে। গেজেটের নিয়ম মেনে উচ্চ প্রাথমিকের আসন আপডেট করে তাঁদের ইন্টারভিউ নেওয়ার দাবিতে এই অবস্থান করছেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা।

কিন্তু ময়দানে তো ধর্না অবস্থান চলছেই। তা হলে বিকাশ ভবনের কাছে ফের ধর্না অবস্থান কেন? চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, স্কুলে কত শূন্য পদ রয়েছে, তা স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাঠায় শিক্ষা দফতর। তাদেরই দায়িত্ব আসন আপডেট করে শূন্য পদ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাঠানো। ২০১৪ সালে উচ্চ প্রাথমিকের বিজ্ঞপ্তিতে যে শূন্য পদের কথা বলা হয়েছিল, তার পরে গত দশ বছরে উচ্চ প্রাথমিকের স্কুলে আরও অনেক শূন্য পদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই শূন্য পদ আপডেট করা হয়নি। তাই তাঁরা ইন্টারভিউ-বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন।

এ দিকে, উচ্চ প্রাথমিকের একাংশের কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। তাই তাঁরা এ বার শিক্ষা দফতর বা বিকাশ ভবনের সামনেই বিক্ষোভ আন্দোলন করে কর্তাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন।

হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০০ জনেরও বেশি চাকরিপ্রার্থীরা এসেছেন। তাঁদের মধ্যে দেড়শো জনের মতো মহিলা। হুগলির গুড়াপ থেকে আসা চাকরিপ্রার্থী সোমা কয়াল বলেন, ‘‘রাতটা জেগেই কাটল। খুব ভোরে তন্দ্রা মতো এসেছিল। কিন্তু মশার কামড়ে ঘুম হল না। মশার ধূপ জ্বালিয়েছিলাম। কিন্তু খোলা আকাশের নীচে তা কাজে আসেনি।’’ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী জানান, আন্দোলন করতে গিয়ে মশার কামড় খেয়ে ডেঙ্গির আতঙ্কও বাড়ছে।

কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী জানালেন, শেষ রাতে যে ঠান্ডা বেশি লাগবে, অনেকেরই তা খেয়াল ছিল না। তাই তাঁরা কম্বল আনেননি। এক চাকরিপ্রার্থী হাবিব শেখ বললেন, ‘‘খোলা আকাশের নীচে হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। মাথার উপরে কেউ কেউ ত্রিপল দিতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। যাঁরা কম্বল এনেছেন, তাঁরা অন্যদের সঙ্গে তা ভাগ করে গায়ে দিয়েছেন।’’ হাবিব জানান, তাঁদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থাও করেনি প্রশাসন।

চাকরিপ্রার্থী পায়েল রায়, ছন্দা বিশ্বাস, সুমা নস্করেরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের জন্য বায়ো-টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই। যদিও এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। সোমা বলেন, ‘‘মেয়েদের জন্য করুণাময়ীতে একটিই সাধারণ শৌচালয় আছে। সেটি আবার রাত ১১টায় বন্ধ হয়ে যায়, খোলে ভোর সাড়ে ৪টেয়। তা হলে রাত ১১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টের মধ্যে শৌচালয়ে যেতে হলে মেয়েরা কী করবেন? আমাদের রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এটুকু সহানুভূতি নেই প্রশাসনের?’’

বিধাননগর পুরসভার এক কর্তা বললেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীরা বায়ো টয়লেটের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেননি। আদালত থেকেও কোনও নির্দেশ আসেনি।’’ যদিও চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ৭২ ঘণ্টা ধর্না অবস্থানে বসার জন্য আদালত থেকে অনুমতি পেয়েই তাঁরা প্রশাসনের কাছে বায়ো টয়লেট, পানীয় জলের ব্যবস্থা করার আবেদন করেছিলেন।

এ দিকে, শহরে এসএফআইয়ের মেডিক্যাল ছাত্র কনভেনশন শুরু হয়েছে এ দিন। সেই উপলক্ষে মৌলালিতে সভা সেরে করুণাময়ীতে অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে যান এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর-সহ অন্য নেতারা। সেখানে গিয়েছিল বিজেপির একটি দলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Case Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE