Advertisement
E-Paper

বিশ কোটির কেঁচো খুঁড়তে হদিস তিনশো কোটির কেউটের

বিশ কোটি টাকা জালিয়াতির তদন্তে নেমেছিল সিআইডি। কিন্তু তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই রহস্যের জাল কেটে বেরিয়ে আসছে অপরাধের নতুন কিস্‌সা! তদন্তকারীরা বলছেন, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের ওই জালিয়াতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে টাকা পাচারের অভিযোগও। টাকার অঙ্কটাও আকাশছোঁয়া। সিআইডির কর্তাদের হিসেবে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা! এবং যে পাচারের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিও জুড়ে রয়েছেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:০০

বিশ কোটি টাকা জালিয়াতির তদন্তে নেমেছিল সিআইডি। কিন্তু তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই রহস্যের জাল কেটে বেরিয়ে আসছে অপরাধের নতুন কিস্‌সা! তদন্তকারীরা বলছেন, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের ওই জালিয়াতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে টাকা পাচারের অভিযোগও। টাকার অঙ্কটাও আকাশছোঁয়া। সিআইডির কর্তাদের হিসেবে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা! এবং যে পাচারের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিও জুড়ে রয়েছেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

এই তথ্যকে সামনে রেখেই গোয়েন্দাদের বক্তব্য, রাজ্য তো বটেই গোটা দেশের নিরিখে এই কেলেঙ্কারি অত্যন্ত বড় মাপের। সিআইডির আইজি সঞ্জয় সিংহ বলছেন, ‘‘এমন বড় মাপের সাইবার জালিয়াতির তদন্ত সিআইডি আগে করেনি।’’ তদন্তকারীরা যে প্রতারণার পাশাপাশি টাকা পাচারকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বোঝা গিয়েছে আদালতের সওয়াল-জবাবেও। সিআইডির সাইবার মামলার উপদেষ্টা-কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় আদালতের সামনেও এই সব

কথা জানিয়েছেন।

সিআইডি সূত্রের খবর, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের একটি বিপিও সংস্থার বিরুদ্ধে জার্মানির নাগরিকদের ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিলেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিশ্বের প্রথম সারির একটি সফটওয়্যার সংস্থার পরিষেবা দেওয়ার নাম করে ওই দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে বহু টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি। ২০১২ সাল থেকে জার্মানির পুলিশও এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছিল। এ দেশে এসে সিআইডি-র তদন্তকারীদের সঙ্গেও দেখা করেছেন তাঁরা।

ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযোগের সারবত্তা পান গোয়েন্দারা। যার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রোহিত কায়ান, রজত কায়ান নামে ওই সংস্থার দুই মালিক মালিক-সহ ছ’জনকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ওই অফিসের বেশ কিছু কম্পিউটার। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরা করে এবং কম্পিউটার ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, জার্মানির পাশাপাশি বেলজিয়াম, কানাডা-সহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশেও এই প্রতারণার জাল ছড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা।

সিআইডি-র এক কর্তার দাবি, সেই সব টাকার হদিস করতে গিয়ে টাকা পাচারের কথা উঠে আসে। দেখা যায়, সংস্থার নামে ইন্টারনেট মারফত টাকা এসেছিল ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ধৃতদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে বেনামে ভিন্ দেশ ও রাজ্যে সেই টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সিআইডির একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন অনলাইন ওয়ালেট এবং হাওয়ালা মারফত টাকা সরানো হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশে টাকা সরানো হয়েছে, এমন সূত্রও মিলেছে। এমনকী, এ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসাতেও এই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে বিহারের একটি ফ্লাই অ্যাশের ইট তৈরির কারখানাও রয়েছে বলে খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

বিদেশে টাকা পাচার হয়ে থাকলে তা অর্থ মন্ত্রকের তদন্তের আওতায় পড়ে। যে ভাবে সারদা কেলেঙ্কারিতে টাকা পাচারের তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। এ ক্ষেত্রেও তেমন ভাবনাচিন্তা রয়েছে। সিআইডির এক কর্তা জানান, এই তদন্তে ইডি বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য লাগলে তা-ও নেওয়া হবে। ধৃতদের কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন বিদেশি নাগরিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের তথ্য মিলেছে। কী কারণে এই সব তথ্য নেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এই তদন্ত নিয়ে অবশ্য সিআইডির অন্দরে গুঞ্জনও রয়েছে। অনেকেই বলছেন, কোটিপতি রোহিত-রজতের সঙ্গে তদন্তকারী দলেরএক অফিসারের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। তার ফলে তদন্তের গতিমুখ বদলে যাবে কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

তবে তদন্তে কোনও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা অবশ্য করছেন না তদন্তকারী দলের কর্তারা। সিআইডির সাইবার অপরাধ মামলার উপদেষ্টা বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, ধৃতেরা কেউই জামিন পাননি। বিচারকের সামনে তাঁদের গোপন জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে। ‘‘তদন্ত শেষ করে খুব শীঘ্রই চার্জশিট দেওয়া হবে,’’ বলছেন সিআইডি-র আইজি।

CBI investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy