বাহারি: পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায়।
চাইনিজ় আলোর বাজারে এ বার ‘অন্ধকার’!
আগে কালীপুজো ও দীপাবলিতে বাংলার ঘরে ঘরে সাজানো হত মাটির প্রদীপ। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই মাটির প্রদীপের বাজার দখল করেছিল চাইনিজ় আলো। অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার কাটাতে বহুতল থেকে একতলা বাড়ির ছাদ— সব জায়গায় ঝুলতে শুরু করেছিল বাহারি এলইডি বা রাইস আলোর মালা। শেষ কয়েক বছরে কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে বিভিন্ন নামে সেই সব আলো আসতে শুরু করত কলকাতার বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু সেই আলোর বাজারেই এ বছর বেচাকেনা তেমন নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
তাঁদের দাবি, বাজার একেবারে শেষ। এ বছর নতুন কিসিমের আলো আসেনি। উল্টে পুরনো আলোর উপরে কর চেপে দাম এতই বেড়েছে যে বিক্রি করে লাভ হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা। কলকাতায় চাইনিজ় আলো বিক্রির সব থেকে বড় জায়গা চাঁদনি মার্কেট। কয়েক বছর ধরে কালীপুজোর আগের ৬-৭টা দিন বিকেল থেকে রাত ওই বাজারে হাঁটাই কার্যত দায় হয়ে উঠত। এলাকা জুড়ে চোখ ধাঁধানো আলো, সেগুলির হরেক রকমের নাম বলে হাঁকাহাঁকি করে ক্রেতাদের ডাকতেন বিক্রেতারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল সেই বাজারের ছবিটা অন্য রকম। অস্থায়ী দোকানের সংখ্যাও হাতে গোনা।
এ বছর আলোর নতুন নাম দিয়ে ডাকাডাকি নেই। রাস্তার ধারে যে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান বসেছে, তারই একটির মালিক মনসুর আলম বলেন, ‘‘সবই তো কয়েক বছরের পুরনো আলো। নতুন কিছু না এলে কী বলে আর চেঁচাব। মানুষ এমনিই এসে দেখছেন।’’ আলোর বাজারে এমন অন্ধকার ঘনিয়ে আসার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, প্রতিটি আলোর দাম ৪০-৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যেমন, গত বছর যে রাইস আলো ২৫ টাকায় বিকিয়েছে এ বছর তার কেনা দাম পড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খুব বেশি হলে ৫ টাকা লাভ রেখে সেই আলো বিক্রি করছেন বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। মহম্মদ কলিম নামের এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘রাইস আলো বেশি দিন ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। আবার বেশি দাম চাইলেও খদ্দের মিলবে না। তাই সামান্য লাভ রেখে বেচে দিচ্ছি।’’
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, বেশি দামে আলো কেনার ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। আর তাতেই খদ্দেরের সংখ্যা কমছে। যেমন, গত বছর ৮০ ফুটের এলইডি আলোর ফিতে বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৪০ টাকায়। এ বছর সেই আলোরই দাম হয়েছে ২০০ টাকা। ৪০ ফুটের এলইডি গত বছর বিকিয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়। তার দাম এ বার ৮০-৯০ টাকা চাওয়া হচ্ছে বলেই জানালেন বিক্রেতা মহম্মদ আক্রম। তিনি বলেন, ‘‘আলোর জোগানও কম। ফলে দামটা চড়েছে। ৭০ টাকায় এলইডি কিনে আর কত বেশি দামেই বা বিক্রি করব!’’
চাঁদনি মার্কেটে ২০ বছর ধরে আলোর দোকান রয়েছে নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুদের। তিনি বলেন, ‘‘শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র না মেলায় চিন থেকে আলো এসে খিদিরপুর বন্দরে আটকে রয়েছে। কলকাতার এক হোলসেল ব্যবসায়ী আগে কিছু আলো তুলে রেখেছিলেন। তাঁর থেকেই সকলকে জিনিস নিতে হচ্ছে। যত দিনে বন্দর থেকে আলো মার্কেটে বেরোনোর ছাড়পত্র পাবে, তত দিনে কালীপুজো শেষ।’’ তিনি আরও জানান, বাজারে এলইডি মিললেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে রাইস আলোর জোগানে। লাল, হলুদ, বেগুনি ছাড়া আর কোনও রঙের রাইস আলো পাওয়া যাচ্ছে না। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেলা কিংবা শহরতলি থেকে ব্যবসায়ীরাও এ বছর কম এসেছেন বলে জানাচ্ছেন চাঁদনির আলো বিক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy