গঙ্গাসাগরের অস্থায়ী শিবিরে কাঠ জ্বালিয়ে রান্নার ধোঁয়া। এর জেরে পুরো এলাকাই ভরেছে দূষণে। রবিবার সন্ধ্যায়, বাবুঘাট এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ
মাঠের দু’পাশে সার দিয়ে অস্থায়ী শিবির। দিন কয়েক ধরে সেখানেই থাকছেন তাঁরা। রবিবার সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছতেই যেন দমবন্ধ আসে। কোথাও কাঠের উনুনে ফুলকপির তরকারি ও লুচি হচ্ছে, আবার কোথাও কাঠের আগুনে শীতের সঙ্গে লড়াই করছেন গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীরা। কিন্তু মাঠে উনুন জ্বালিয়ে রান্না? এ তো বেআইনি! প্রশ্ন করতেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হেসে এক পুণ্যার্থীর জবাব, ‘‘পুণ্য অর্জনের জন্য যা করছি, সবই ঠিক। এতে দোষ নেই।’’
কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবিদ থেকে চিকিৎসক, সকলেই। হাইকোর্ট ও পরিবেশ আদালতের রায় অনুযায়ী, কলকাতার কোথাও পাতা বা কাঠ জ্বালানো যাবে না। কিন্তু বাবুঘাটের অস্থায়ী শিবিরে যেন নিষেধই নিয়ম। একাধিক জায়গায় কাঠ ও পাতা জ্বালিয়ে চলছে রান্না। তা যে বেআইনি, মানতেই চান না অধিকাংশ মানুষ। কেউ জানাচ্ছেন, পুণ্য করতে এসে নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াই নিয়ম। আবার কেউ বলছেন, পুণ্যার্থীর শিবিরের রান্নার ধোঁয়ায় দূষণ হবে না। আর এই সব কিছু চলছে কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভার কর্তব্যরত কর্মীদের সামনেই।
মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান উপলক্ষে দিন কয়েক ধরেই বাবুঘাট, ময়দান চত্ত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। রবিবার অনেকেই চলে গিয়েছেন সাগরে, কেউ আবার স্নান সেরেছেন বাবুঘাটেই। কিন্তু সেই শিবিরে অসচেতনতা দেখে প্রশ্ন উঠল, শহরে দূষণ কি কখনও কমবে?
শ্বাসকষ্ট বা নাকের নানা রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে বায়ুদূষণের কথা বারবার উঠে আসছে। কিন্তু তার পরেও কালীপুজো কিংবা বর্ষবরণের মতো উৎসবে বায়ুদূষণ যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই তালিকায় জুড়ল মকর সংক্রান্তিও। এ দিন মার্কিন দূতাবাসের তথ্য দেখাচ্ছে শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা দিল্লিকে বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে। এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ কলকাতার বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৪০২। যেখানে দিল্লির সূচক ১৭৪। পরিবেশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতার সূচক ‘বিপজ্জনক’ মাত্রা ছুঁয়েছে।
বায়ুদূষণের পাশাপাশি বাবুঘাট আর বাজে কদমতলা ঘাটের আর্বজনার স্তূপ, শৌচকর্মের জেরে গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফুল, মালা, এঁটো পাতার স্তূপে ভরে গিয়েছে বাবুঘাট চত্বর। কিন্তু তার মধ্যেই নানা বয়সের মানুষ পুণ্যস্নান সারলেন। দূষণ রোধের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফুল, মালা, চাল গঙ্গায় ফেলে পুজো করলেন। কয়েক পা এগিয়ে বাজে কদমতলা ঘাটে দাঁড়াতেই দুর্গন্ধে দমবন্ধ হয়ে আসে। চারপাশে একাধিক অস্থায়ী শৌচালয় থাকলেও রেললাইনের পাশেই শৌচকর্ম সারতে দেখা গেল কিছু পুণ্যার্থীকে।
বাবুঘাট বা অস্থায়ী শিবির, সর্বত্রই রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী। শিবিরে নিয়মিত যাতায়াত করছেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। কিন্তু তার পরেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কী ভাবে থাকছেন পুণ্যস্নানে আসা মানুষ? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পুলিশ কিংবা পুরসভা থেকে। তবে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সব ব্যবস্থা রয়েছে। ঘোষণাও করা হচ্ছে। তার পরেও যদি সচেতন না হয়, কী করব? জন পিছু নজরদারি সম্ভব নয়।’’
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার অবশ্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গার মানুষ এসেছেন। সকলের সচেতনতার মাত্রা সমান নয়। তবে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুণ্যার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কি সৌজন্যের!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy