Advertisement
E-Paper

বাকি দিনগুলো কেমন যাবে, বুঝিয়ে দিল চতুর্থীর মহানগর

কেনাকাটা শেষ হল না। শুরু হয়ে গেল উৎসব! রবিবার থেকেই শহরের রাস্তায় দর্শনার্থীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে ছোটখাটো লাইনও পড়ে গিয়েছে। কোথাও আবার উদ্বোধনে আসা তারকাদের দেখতে ভিড়। মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি হয়ে গিয়েছে উদ্বোধনের মুহূর্ত। পুজোর আগে শেষ রবিবার। কেনাকাটার ফাইনাল ল্যাপে পা মেলাতে সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছিলেন মানুষ। হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাট, দোকান-বাজার-শপিং মলে শুধুই ঠাসাঠাসি ভিড়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৯
আলোয় মোড়া। রবিবার, ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আলোয় মোড়া। রবিবার, ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

কেনাকাটা শেষ হল না। শুরু হয়ে গেল উৎসব!

রবিবার থেকেই শহরের রাস্তায় দর্শনার্থীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে ছোটখাটো লাইনও পড়ে গিয়েছে। কোথাও আবার উদ্বোধনে আসা তারকাদের দেখতে ভিড়। মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি হয়ে গিয়েছে উদ্বোধনের মুহূর্ত।

পুজোর আগে শেষ রবিবার। কেনাকাটার ফাইনাল ল্যাপে পা মেলাতে সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছিলেন মানুষ। হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাট, দোকান-বাজার-শপিং মলে শুধুই ঠাসাঠাসি ভিড়। যা সামলাতে ভরদুপুরেই নিউ মার্কেট চত্বরে গার্ডরেল বসিয়েছিল পুলিশ।

পাঁজি মেনে পুজো শুরু হতে এখনও বাকি এক দিন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, চতুর্থীর রাত থেকেই লোকজন রাস্তায় নেমে পড়ছেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুজোর চরিত্র যে পাল্টাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছে পুলিশও। গত কয়েক বছরের হিসেব থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর আজ, সোমবার পঞ্চমী থেকেই পুরোদস্তুর রাস্তায় নামছে লালবাজার। তবে ভিড়ের দাপট আঁচ করে এ দিন থেকেই রাস্তায় বহু পুলিশকর্মীর দেখা মিলেছে। ভিড় সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছেন তাঁরাও।

সকাল থেকেই এমন ভিড়ে ট্রেন-মেট্রো ছিল ঠাসা। এসি মেট্রোতেও অনেকে রীতিমতো হাসফাঁস করেছেন। শোভাবাজার, এসপ্ল্যানেড, কালীঘাট স্টেশনে ভিড় উগরে দিয়েছে মেট্রো। ভরদুপুরে কাতারে কাতারে লোক বেরিয়েছেন স্টেশনগুলি থেকে। তবে রাত পর্যন্ত মেট্রোয় কোনও বিভ্রাট না ঘটায় বড় ধরনের অসুবিধা পোহাতে হয়নি। শনিবার তৃতীয়ার রাতের ভিড়টা রবিবার দুপুর গড়াতেই ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণে।

চতুর্থীর দিনেও এমন ভিড়?

বাজারে আসা লোকজন বলছেন, কেনাকাটা প্রায় শেষ। এ দিন ছিল ‘ফাইনাল টাচ’। বরাহনগর থেকে আসা এক স্কুলশিক্ষিকা বলছেন, এ দিন শুধু বাজার নয়, আগেভাগে পুজো দেখাটাও অন্যতম কারণ। তাঁর কথায়, “রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচাটাও হয়ে যাবে।”

রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচার এই ভিড় ভালই টের পেয়েছে মহানগরী। বিকেল থেকেই হরিদেবপুর, দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর কলকাতার বিভিন্ন পুজোয় ঢল নেমেছে। সন্ধ্যা যত গড়িয়েছে, ভিড়ও তত বেড়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটাতেই সেলিমপুর পল্লির পুজোকর্তা পার্থ রায় বলছিলেন, “চতুর্থীতেই এত ভিড়! ভাবতে পারিনি।” কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের ভিড় চলে গিয়েছে বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, ৬৬ পল্লি, সংঙ্ঘশ্রী ছাড়িয়ে রূপচাঁদ মুখার্জি লেন পর্যম্ত। ভিড়ের অন্য দিকটা গিয়েছে লেক রোডের দিকে। দক্ষিণের আর এক নামী পুজো শিবমন্দির এ বার তুলে এনেছে বাঙালির ব্যবসাকে। আর মাশরুম, নানা রকমের শুকনো ফল-পাতায় মুদিয়ালিতে অরণ্যের হাতছানি।

অজেয় সংহতি, ৪১ পল্লি, বিবেকানন্দ অ্যাথলেটিক প্রতি বারই সমানে সমানে টক্কর দেয়। এ বার উৎসব কাপের ইনিংস শুরুতেই তাঁদের প্রতিযোগিতা শুরু। অজেয় সংহতির পুজোকর্তা হিল্লোল বসু ভিড় দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। বললেন, “চতুর্থীতেই যদি এত লোক হয়, তা হলে অষ্টমীতে কী হবে!” কম যায় না প্রতিবেশী পুজো ৪১ পল্লিও। ইনিংস শুরুতেই ভিড়ের ‘বাউন্সারে’ রীতিমতো নাজেহাল পুজোকর্তা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। বিবেকানন্দ অ্যাথলেটিক পার্কের থ্রি-ডি পেন্টিং দেখতেও ভিড় জমেছে। পশ্চিম পুটিয়ারির পল্লিমঙ্গল সমিতির দেশ-বিদেশের মুদ্রার মণ্ডপ দেখতেও ঢল নেমেছে।

পুজোর ভিড়ে এক দশক ধরেই গন্তব্য বেহালা। ওই এলাকার বড়িশা ক্লাব, বেহালা নূতনদল, বেহালা ক্লাবে এ দিন বিকেল থেকেই যাতায়াত শুরু হয়েছে। রাতের দিকে ধীরে ধীরে বেড়েছে জনসমাগম। নূতন দল পুজো কমিটির কর্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “সবে তো শুরু। খেলার শেষে জিতব আমরাই।”

হাতিবাগান ফেরত মানুষের ঢল নেমেছে ওই এলাকার ‘ফাইভ স্টারে’। শিকদারবাগান, হাতিবাগান সর্বজনীন, নবীনপল্লি, কাশী বোস লেন, নলিন সরকার স্ট্রিটে বাজার ফেরত মানুষের ঢল দেখার মতো। লোকজন বলছেন, ওই এলাকার সব পুজোই একে অন্যকে টেক্কা দেয়। হাতিবাগান যদি তালপাতার এচিং শিল্প দেখায় তো নলিন সরকারের মণ্ডপে আয়নার ছবি। নবীনপল্লির মণ্ডপে বিষ্ণুপুরের লণ্ঠনও তারিফ কুড়িয়েছে। নলিন সরকারের পুজোকর্তা সিদ্ধার্থ সান্যাল বলছেন, “এ বারে আমাদের কাজই এই এলাকায় সেরা। চতুর্থীতে ভিড় দেখে সেটাই মালুম হচ্ছে।” ভিড় দেখে কিছুটা অবাক নবীনপল্লির কর্তা অমিতাভ রায়ও। তাঁর অবশ্য দাবি, নতুন ধরনের কাজ দেখতেই বাজার ফেরত মানুষের ঢল নেমেছে তাঁদের মণ্ডপে।

চতুর্থীতে রাজডাঙা নব উদয়-সহ শহরের বেশ কয়েকটি মণ্ডপের উদ্বোধনে হাজির ছিলেন তারকারাও। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাজডাঙার পুজোয় হাজির হন চিত্রতারকা তথা সাংসদ দেব। তাঁকে ঘিরে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার মহিলা, শিশু মায় বৃদ্ধরাও! আর একটু দক্ষিণে ৯৫ পল্লির মণ্ডপে তখন বৃন্দাবন থেকে আসা বৃদ্ধাদের দলটি মানুষের ভালবাসায় আপ্লুত।

উৎসব কাপ শুরু হয়ে গেলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত শহরের বহু মণ্ডপেই কাজ চলেছে। শেষ মুহূর্তে কাজ শেষ হওয়ায় হাঁফ ছেড়েছেন সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের কর্মকর্তারা। বিকেলে সন্তোষপুর লেকপল্লির মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন দুই উদ্যোক্তা রানা দাশগুপ্ত ও সোমনাথ দাস। ওড়িশা থেকে আসা বালুশিল্পীরা ভিতরে বালি দিয়ে মূর্তি গড়ছিলেন। তার মধ্যেই দু’-তিন জন দর্শনার্থী ঢুকে পড়েন। কেউ কেউ শিল্পীর কাজের পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইলে নিজস্বী (সেলফি)-ও তুলেছেন।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা। কসবা কানেক্টর দিয়ে বন্ধুর মোটরবাইকে চেপে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দিকে যাচ্ছিলেন এক তরুণী। সিগন্যালে দাঁড়াতেই কসবা বোসপুকুরের পুজোর আলো চোখে পড়ল তরুণীর। উঁকি মারতে গিয়ে রীতিমতো সিটের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি।

ভিড়ের দাপটে উত্তর, দক্ষিণ, বেহালাকে টক্কর দিয়েছে পূর্ব কলকাতাও! উল্টোডাঙার তেলেঙ্গাবাগান, যুববৃন্দ, সংগ্রামী ঘিরে ভিড়। অন্য একটা ভিড় স্বপ্নার বাগানে সৃষ্টি স্থিতি লয়, মিতালির চড়কির মতো থ্রি-ডি মণ্ডপ, কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের রথ, পূর্ব কলকাতা সর্বজনীনের ছিমছাম পরিবেশ ঘিরে। তেলেঙ্গাবাগানের রানা দাস বলছেন, গত কয়েক বছর থেকেই চতুর্থীতে পুজো শুরু হয়ে যাচ্ছিল। এ বার চতুর্থী রবিবার হওয়ায় ভিড়ের দাপট আরও বেড়েছে। ভিড় জমতে শুরু করেছে উত্তর শহরতলির দমদম পার্ক ভারতচক্র, তরুণ দল, প্রদীপ সঙ্ঘ, প্রতিরোধ বাহিনীর মণ্ডপেও।

চতুর্থীর ভিড়েই শুরু উৎসব কাপ। আজ, পঞ্চমীতে খুলে যাবে আরও কয়েকটি মণ্ডপ। আগেভাগে ঠাকুর দেখতে ভিড় জমাবেন মানুষও। বোধনের আগের সন্ধ্যায় সেই ভিড় কী বলে, সেটাই দেখার!

pujo kuntak chattopadhyay kolkata news online kolkata news kolkata city durga puja chaturthi heavy crowed festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy