রাস্তায় মিছিল আর পাতালের ট্রেনে যান্ত্রিক সমস্যা। এই জোড়া বিপত্তিতে শুক্রবার দুপুরে অচল হল চৌরঙ্গি, ধর্মতলা-সহ শহরের একটি বড় অংশ, নাকালের একশেষ হলেন রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষ।
এ দিন দুপুরে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে একটি মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলা পেরিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে যায়। এর তৈরিই ছিল পুলিশ। জানাই ছিল, এর জেরে দক্ষিণ কলকাতা থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে ধর্মতলার দিকে যাওয়া যানবাহন ধীর গতিতে চলবে। ভূগর্ভে ওই পথেই বিস্তৃত কলকাতার মেট্রো রেল। মিছিলের জেরে যখন প্রধানত দক্ষিণ থেকে ধর্মতলামুখী যানবাহনের উপর চাপ চলছে, ঠিক তখনই বিপত্তি দেখা দিল মেট্রোয়। বন্ধ হয়ে গেল টালিগঞ্জ থেকে ময়দান পর্যন্ত আপ লাইনে ট্রেন চলাচল। ফলে উত্তর দিকে যেতে চাওয়া যাত্রীরা উঠে আসেন রাস্তায়। তখন দুপুর ১টা ২০ মিনিট।
একেই ‘আশা’ (জেলা স্তরের স্বাস্থ সহায়িকা) কর্মীদের মিছিলের জেরে ততক্ষণে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শম্বুক গতিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড দিয়ে এগোচ্ছে বাস, গাড়ি, ট্যাক্সি। এর মধ্যে পাতালের যাত্রীরা রাস্তায় উঠে আসায় যানবাহনের চলাচলের পথ আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে গেল। এ দিকে, ইতিমধ্যেই পুজোর জন্য তৈরি বাঁশের ব্যারিকেড রাস্তা সরু করে দিয়েছে। সঙ্গে পুজোর বাজারের ভিড়। ফলে সব মিলিয়ে একটা সময়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় কালীঘাট, হাজরা, ভবানীপুরে। বেশির ভাগ বাস তখন ভিড়ে ঠাসা।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘মিছিলের জন্য তৈরি ছিলাম। রাস্তায় বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট নামানো হয়েছিল। কিন্তু মেট্রো না চলায় সব পরিকল্পনা দফারফা হয়ে গেল।’’
কী হয়েছিল মেট্রোয়? শুক্রবার সকাল থেকে কার্যত একের পর এক বিভ্রাটে থমকে যাচ্ছিল মেট্রো। শেষে দুপুর সওয়া একটা নাগাদ যতীন দাস পার্ক স্টেশনে বিগড়েই গেল একটি এসি রেক। প্রায় ১৫ মিনিট দরজা বন্ধ অবস্থায় রেকটি ঠায় দাঁড়িয়েছিল যতীন দাস পার্ক স্টেশনে, কোনও রকম ঘোষণাও হয়নি। যাত্রীদের অনেকেই তখন আতঙ্কিত, কান্নাকাটি করছে শিশুরা। পরে দরজা অবশ্য খুলল এবং ঘোষণা করা হল, রেকটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। তখনই টালিগঞ্জ থেকে ময়দান পর্যন্ত আপ লাইনে বন্ধ হল ট্রেন চলাচল।
গড়িয়াহাট এলাকা দিয়ে আসা বহু মানুষের অবশ্য অভিযোগ, সেখানে মেট্রো রেল বিভ্রাট না থাকলেও তাঁদের যানজটে ভুগতে হয়েছে। তাঁদের দাবি, ট্রাফিক পুলিশ ততটা তৎপর ছিল না। পুলিশ অবশ্য তা মানছে না। এ দিন পার্ক সার্কাস, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ হয়ে গোলপার্ক গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, যানজটের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তাঁকেও, ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তিনি।