Advertisement
E-Paper

সমাবেশের জেরে ট্যাক্সির নৈরাজ্য, ভুগল শহর

ট্যাক্সি গ্যারাজে রেখে শহর উজাড় করে চালকেরা গেলেন বিক্ষোভ দেখাতে। হুমকি দিলেন আন্দোলনের ধার বাড়ানোর। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিল সরকারও। আর এর মাঝে পড়ে দিনভর খাবি খেলেন উলুখাগড়া আম-নাগরিক। মওকা বুঝে তাঁদের থেকে তিন-চারগুণ ভাড়া হেঁকে পকেট ভরাল কিছু ট্যাক্সি আর প্রাইভেট। যা দেখেও পুলিশ চোখ বুঝে ছিল বলে অভিযোগ। সংক্ষেপে এই হল সোমবারের কলকাতায় ট্যাক্সি-আন্দোলনজনিত পথ-চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৮
ট্যাক্সির দেখা নেই। শিয়ালদহ স্টেশনে ভোগান্তি যাত্রীদের।-নিজস্ব চিত্র

ট্যাক্সির দেখা নেই। শিয়ালদহ স্টেশনে ভোগান্তি যাত্রীদের।-নিজস্ব চিত্র

ট্যাক্সি গ্যারাজে রেখে শহর উজাড় করে চালকেরা গেলেন বিক্ষোভ দেখাতে। হুমকি দিলেন আন্দোলনের ধার বাড়ানোর। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিল সরকারও। আর এর মাঝে পড়ে দিনভর খাবি খেলেন উলুখাগড়া আম-নাগরিক। মওকা বুঝে তাঁদের থেকে তিন-চারগুণ ভাড়া হেঁকে পকেট ভরাল কিছু ট্যাক্সি আর প্রাইভেট। যা দেখেও পুলিশ চোখ বুঝে ছিল বলে অভিযোগ।

সংক্ষেপে এই হল সোমবারের কলকাতায় ট্যাক্সি-আন্দোলনজনিত পথ-চিত্র।

আশঙ্কা সত্যি করে প্রতিবাদী চালকেরা এ দিন ট্যাক্সি বার করেননি, ধর্মতলার সমাবেশে যোগ দিতে যাবেন বলে। যার জেরে মহানগর সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে কার্যত ট্যাক্সিহীন হয়ে রইল। আন্দোলন ব্যর্থ করতে শাসকদলের সংগঠনের যে চালকেরা গাড়ি নামিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে আবার অসহায় যাত্রীদের উপরে ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যা শুনে তৃণমূল-সমর্থিত প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা শম্ভুনাথ দে’র পাল্টা কটাক্ষ, “পুলিশ তো ছিল! তাদের সামনেই চালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইলে আমরা কী করব!” পুলিশকর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, “আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতাম।”

এ সবের মাঝে আগামী দিনগুলোয় ট্যাক্সি-বিরোধের পারদ আরও চড়ারই ইঙ্গিত মিলেছে। এক দিকে ধর্মতলার সমাবেশ থেকে ঘোষণা হয়েছে, সরকার নমনীয় না-হলে আন্দোলন তীব্রতর হবে। এমনকী, ট্যাক্সিচালকদের নিয়ে আগামী ২৮ অগস্ট পরিবহণ ভবন ঘেরাওয়ের ডাকও দিয়েছে প্রতিবাদীরা। অন্য দিকে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানিয়েছেন, সরকারের আরও কড়া অবস্থান নেবে। প্রসঙ্গত রাজ্য আগেই বলেছিল, ধৃত ২১ চালকের জামিন খারিজের আর্জি নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবে। এক ধাপ এগিয়ে এ দিন মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, পথে না-এলে চালকদের লাইসেন্স বাতিলের কথাও ভাবা হবে। “ট্যাক্সিচালকেরা বিনা নোটিসে পরিষেবা না-দিলে কিংবা যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে মোটর ভেহিক্লস আইনের ১৯ নম্বর ধারা মোতাবেক সরকার তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। নোটিস ছাড়াই যাঁরা দিনের পর দিন ধর্মঘট করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার ওই আইন অনুযায়ী কড়া হবে।” মন্তব্য মদনবাবুর। কলকাতা পুর-এলাকায় নিয়মবিরুদ্ধ পার্কিং করলে ট্যাক্সির বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও তিনি জানিয়েছেন।

কিন্তু ট্যাক্সিচালকদের একাংশের এই সরকার-বিরোধী আন্দোলন বজায় রাখতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত এ দিনের সমাবেশে দিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। যেমন সিটু-র দীপক দাশগুপ্ত বলেছেন, “একুশ জন ট্যাক্সিচালককে ফের জেলে পুরলে ফল ভাল হবে না। সমস্ত সংগঠনের নেতারা এখানে আছেন। আমরা গিয়ে জেলের তালা ভেঙে ওঁদের বার করে আনব।” এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে এবং ধৃত ট্যাক্সিচালকদের মুক্তির দাবিতে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

গত বুধবার রাতে খিদিরপুরের ওয়াটগঞ্জে ট্যাক্সিচালক মহম্মদ সাজ্জাদের অপমৃত্যু হয়। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, পুলিশি জুলুমে অবসাদগ্রস্ত হয়েই উনি আত্মহত্যা করেছেন। ওই প্রসঙ্গ তুলে এআইটিইউসি নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব এ দিন বলেন, “মদন মিত্রের লজ্জা হওয়া উচিত! আমরা চাঁদা তুলে সাজ্জাদের পরিবারকে এক লাখ টাকা দেব।” ক’মাস আগে মধ্যমগ্রামে এক ট্যাক্সিচালকের মেয়েকে গণধর্ষণের প্রসঙ্গটিও সমাবেশে টেনে এনেছেন নেতারা। তাঁদের আক্ষেপ, “ওর বাবাকে বিহার সরকার চাকরি দিয়েছে। মদন মিত্র এক বারের জন্যও শোক প্রকাশ করেননি।”

এ হেন উত্তপ্ত আবহের প্রেক্ষাপটে ট্যাক্সি-জট কাটার আশু সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না। এবং সঙ্কট মোকাবিলায় প্রশাসনিক তৎপরতার অভাবও প্রকট। গত ৭ অগস্ট আচমকা ট্যাক্সি ধর্মঘটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে সরকারি কর্তারা যুক্তি দিয়েছিলেন, আগাম খবর না-থাকায় তাঁরা তৈরি ছিলেন না। কিন্তু তার পরে তিন দিন ট্যাক্সিচালকেরা আগাম ঘোষণা করে পরিষেবা বন্ধ করা সত্ত্বেও প্রশাসন যাত্রী-হয়রানি আটকাতে পারেনি বলে অভিযোগ। যদিও পরিবহণমন্ত্রীর দাবি, হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন ও বিমানবন্দরে প্রচুর পরিমাণে বাস চালিয়ে এ দিন তাঁরা পরিস্থিতি সামলেছেন। তিনি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগও এনেছেন। “ওঁরা গুন্ডামি করেছে। ট্যাক্সি ভাঙচুর করেছে। যার জেরে অনেক মালিকই গাড়ি বার করতে পারেননি।” বলেন মন্ত্রী।

বস্তুত এ দিন আন্দোলন ভেঙে গাড়ি বার করার ‘অপরাধে’ এক ট্যাক্সিচালককে মারধরের অভিযোগ পুলিশও পেয়েছে। যার ভিত্তিতে দুই ট্যাক্সিচালক গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের নাম শেখ মনসুর এবং স্বরূপ সরকার। ঠাকুরপুকুরের কদমতলার ঘটনা। ট্যাক্সিচালকদের নেতারা অবশ্য বলেছেন, “আমরা তো সমাবেশে এসেছি! ভাঙচুর করলাম কখন!”

kolkata taxi strike taxi problem kolkata news online kolkata news heavy problem daily passengers city huge suffer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy