কোনও দিন ঝিরঝিরে, কোনও দিন মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া। কোনও দিন আবার বৃষ্টি না হলেও গুমোট আবহাওয়ায় দিনভর আকাশের মুখ ভার। চড়া রোদ তো দূর, বর্ষার মেঘ কেটে সূর্যের দেখা প্রায় মিলছেই না! গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় মন ভাল নেই কুমোরটুলির শিল্পীদের। তাঁদের চিন্তা বাড়িয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সীমান্ত লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে রবিবার দিনভর শহরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আগামী কয়েক দিনেও যে আবহাওয়ার বিশেষ উন্নতি হবে, সেই আশ্বাস দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। যা দেখেশুনে শিল্পীরা বলছেন, মহালয়ার আর এক মাসও নেই। বস্তুত, মহালয়ার পর থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা যেতে শুরু করে। কিন্তু এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে কী ভাবে, সে কথা ভেবেই ঘুম উড়েছে মৃৎশিল্পীদের।
শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক সপ্তাহ সে ভাবে চড়া রোদ না ওঠায় প্রতিমার মাটি শুকিয়ে রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ শুরুই করা যায়নি। কুমোরটুলিতে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, কোনও মতে ত্রিপল জড়িয়ে কাজ চলছে। ‘ব্লু ল্যাম্প’ জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকোচ্ছিলেন শিল্পী তপন পাল। কাজের ফাঁকে বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, চড়া রোদ উঠলে মাটি শুকোব। কয়েক দিন অপেক্ষা করেও ছিলাম। কিন্তু যা অবস্থা চলছে, অপেক্ষাই সার হল।’’
গত কয়েক সপ্তাহ লাগাতার বৃষ্টি চলায় প্রতিমার গায়ের মাটির প্রলেপ কাঁচা রয়ে গিয়েছে। প্লাস্টিক, ত্রিপল দিয়ে প্রতিমা ঢেকে জলে ভেজা কোনও মতে ঠেকানো গেলেও প্রতিমার গায়ের মাটি সে ভাবে শক্ত হয়নি। শিল্পী কার্তিক পালজানালেন, খড়ের গায়ে কাঁচা মাটি শুকোনোর জন্য অন্তত সাত দিন চড়া রোদ প্রয়োজন। এক বার শুকিয়ে গেলে তার উপরে আবার মাটির প্রলেপ দিতে হয়। তার পরে তাতে রং ধরাতে হয়। কিন্তু মাটি কাঁচাথাকায় দ্বিতীয় বারের প্রলেপই এখনও দেওয়া যায়নি। কার্তিক বলেন, ‘‘এই সময়ে আমাদের প্রায় স্নান-খাওয়ার সময় থাকে না। এ বার কোথায় সেই ব্যস্ততা? এই সময়ে প্রতিটা দিন মূল্যবান। কবে যে রঙের কাজে হাত দিতে পারব!’’
শুধু কাজ শেষ করা নিয়ে চিন্তাই নয়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার জন্য খরচ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন শিল্পীদের অনেকে। শিল্পী পার্থ পাল বললেন, ‘‘এই সময়ে কুমোরটুলিতে বাইরে থেকে বহু কর্মী আসেন, যাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁদের কার্যত বসিয়ে বসিয়ে মজুরি দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি কমলেও শেষ দিকে কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে কাজ শেষ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’
তবে পুজো শুরুর পাঁচ সপ্তাহ আগে আবহাওয়ার ‘মেজাজ’ মাথাব্যথা বাড়ালেও ‘বর্ষাসুর’ বধের আশা ছাড়তে নারাজ শিল্পীরা। নবদ্বীপ থেকে আসা এক শিল্পী উত্তর বীরের কথায়, ‘‘অ-সম লড়াই, তবে শেষ হাসি তো হাসতেই হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)