বিতর্কিত: চাঁদার বিলে নেই ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, কর্মকর্তাদের নাম। নিজস্ব চিত্র
সরকারি ভাবে অনুমোদিত নয়। উদ্যোক্তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু ‘সামাজিক কাজ’ তথা পুজোর আয়োজনে খামতি নেই। পুজোর অনুমতি মিলেছে প্রশাসনের থেকেও। দেদার কাটা হচ্ছে চাঁদার বিল। সল্টলেকে গণেশ পুজোর প্রাক্কালে এমনই একটি ক্লাবের চাঁদা আদায় ঘিরে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ওই ক্লাবের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রাখা হয়েছে শহরের মেয়র, বিধায়ক-সাংসদের নামও। আজ, মঙ্গলবার পুজোর উদ্বোধন।
বিধাননগরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে গণেশ পুজো করছে ‘যুবক সঙ্ঘ’ নামে একটি ক্লাব। বিতর্ক শুরু হয়েছে তাদের চাঁদা তোলার জন্য এলাকায় বিলি হওয়া ‘মানি রিসিট’ অথবা বিল নিয়ে। সেই বিলে না রয়েছে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, না আছে কর্মকর্তাদের নাম। কিন্তু পুজোর হোর্ডিংয়ে জ্বলজ্বল করছে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমার, বিধায়ক-মন্ত্রী সুজিত বসু, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না ভৌমিকের নাম। শুধু তা-ই নয়, ক্লাবের তরফে পুজোর সহকারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিধাননগর পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের নামও!
ঘটনাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলেও তা নিয়ে ভাবিত নন পুজোর উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে কাউন্সিলর। পুজোয় এ ভাবে সরকারি সংস্থার নাম ব্যবহার করা যায় কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে রত্নার দাবি, ‘‘পুরসভার তরফে সাফাই-সহ নানা ধরনের পরিষেবা দেওয়া হয়। সেই হিসেবেই ক্লাবের তরফে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডকে সঙ্গে রাখা হয়েছে।’’ যদিও অনেকে বলছেন, পুজোর সময়ে জল সরবরাহ, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো পরিষেবাগুলি তো সর্বত্র পুরসভার তরফেই দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের পুজোর সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে একটি ক্লাবের ঘোষণা করার ঘটনা সাধারণত চোখে পড়ে না।
চাঁদার বিনিময়ে যে বিলটি দেওয়া হচ্ছে, সেটিতে দেখা যাচ্ছে ক্লাবের ঠিকানা লেখা রয়েছে এএ-২৫২, সেক্টর-১। পুজোর সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, ক্লাবটি রেজিস্ট্রিকৃত নয়। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘এখানে এমন অনেক ক্লাবেরই রেজিস্ট্রেশন নেই। আমরা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছি। তবে আমাদের পুজো বহু পুরনো। হিসাবপত্রেরও অডিট হয়। কোনও অনিয়ম নেই।’’
কিন্তু বিধাননগর পুরসভাকে সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে ঘোষণা করা হল কেন? পার্থের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা তথা ৪১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমরা সব ধরনের পরিষেবা পাই। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আসলে বিষয়টি বলতে চেয়েছি। লেখার ক্ষেত্রে শব্দ বাছাই ভুল হয়েছে।’’
কিন্তু রেজিস্ট্রেশন ছাড়া একটি ক্লাবের পুজোর অনুমতি দেওয়া হল কী ভাবে?
কারণ জানতে বিধাননগর পুরসভার কমিশনার সুজয় সরকারকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি। এই পুজোয় প্রধান অতিথি হিসেবে নাম রয়েছে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর। তিনি পুজোর সঙ্গে পুরসভার নাম জড়ানো নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কৃষ্ণা শুধু বলেন, ‘‘অনেক পুজোতেই না জানিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। সে ভাবেই হয়তো আমার নাম রাখা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের নাম। কাকলি বলেন, ‘‘আমার এত বড় এলাকা। কোন ক্লাব, কখন, কোথায় আমার নাম ছাপাচ্ছে, সব কি জানা সম্ভব? খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ যাঁকে পুজোর মুখ্য উপদেষ্টা (চিফ প্যাট্রন) হিসেবে রাখা হয়েছে, সেই দমকলমন্ত্রী তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজেরও জবাব দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy