Advertisement
E-Paper

ভাঙা সেতু থাকবে কি, প্রশ্ন কমিটির

বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানতে চেয়ে গত জুন মাসে আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্নের খবর, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তাদের সুপারিশ সংবলিত সেই রিপোর্ট সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির হাতে তুলে দিতে পারে বিশেষজ্ঞ কমিটি।

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৯
ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল। ফাইল চিত্র

ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল। ফাইল চিত্র

ইস্পাতের তৈরি কাঠামো অক্ষত রেখে পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুলকে ভেঙে নতুন করে তৈরি করা যেতেই পারে। তবে এই কাজ খুবই কঠিন। ব্যয়সাপেক্ষও বটে। তা় ছাড়া, গত কয়েক বছরে কলকাতা শহরে যানবাহনের চাপ অনেকটাই বেড়েছে। এই উড়ালপুল সেই চাপ নিতে অপারগ। তাতে কোনও লাভও হবে না। খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটি এই সুপারিশই করতে চলেছে রাজ্য সরকারের কাছে। এমতাবস্থায় কী করা যায়, তা-ও চূড়ান্ত রিপোর্টেই জানিয়ে দেবে কমিটি।

বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানতে চেয়ে গত জুন মাসে আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্নের খবর, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তাদের সুপারিশ সংবলিত সেই রিপোর্ট সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির হাতে তুলে দিতে পারে বিশেষজ্ঞ কমিটি। তার পরে রাজ্যকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটির তিন সদস্য (শ্রীমান ভট্টাচার্য, স্বপন মজুমদার এবং এ কে গুপ্ত) তাঁদের সমীক্ষার কাজ শেষ করেছেন। এখন রিপোর্ট লেখার কাজ চলছে।

বাম আমলের প্রায় শেষের দিকে ২০০৮ সালে পোস্তায় উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। পরের বছরই উড়ালপুল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ কাজ চলাকালীন সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়ে। তাতে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। অনেকে আহত হন। ওই ঘটনার পরে উড়ালপুলের কাজ বন্ধ করে দেয় সরকার। কেন উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ল, ভবিষ্যতে এই উড়ালপুল আর রাখা যাবে কি না, এমন বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে নিয়োগ করে সরকার।

এর পাশাপাশি, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরি করে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কমিটিতে পূর্তসচিব, মুখ্য বাস্তুকার, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং কেএমডিএ-র পদস্থ কর্তাদের রাখা হয়।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুল নিয়ে আগে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন রাইট্স এবং আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা। তাতে বলা হয়, মূলত নকশায় ত্রুটি এবং নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণেই উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়েছে।

এর পরেই সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি উড়ালপুল কতটা নিরাপদ, গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত কি না, উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে — তা জানতে আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যের পূর্ত দফতর এবং রাইট্স-এর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মত হল, গত ন’বছরে শহরে গাড়ির সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। দিনদিন তা আরও বাড়বে, যা ওই উড়ালপুলের বর্তমান ধারণক্ষমতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে ফের ওই উড়ালপুলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ বিষয়ে দেশের ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হয়।

এ বার খড়্গপুরের ইঞ্জিনিয়ারেরা যে রিপোর্ট দিতে চলেছেন, তাতে কার্যত উড়ালপুলের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের এক জন জানান, দীর্ঘ সেতুটির একটি অংশ ভাঙলেও গোটা সেতুটি বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। তাই সেটা যে ইস্পাতের কাঠামোর উপরে দাঁড়িয়ে, তা অক্ষত থাকলেও গোটা সেতুর উপরের সিমেন্টের চাদর ভেঙে ফেলে নতুন করে গড়তে হবে। এই কাজ বেশ কঠিন ও ব্যয়সাপেক্ষ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। উপরন্তু, যানবাহনের প্রসঙ্গ তুলে সেতু রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও ঘুরিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

প্রশাসনের অন্দরমহলের অনেকের বক্তব্য, বহু কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালপুলটি গড়ে উঠেছে। খরচের একটি অংশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা থেকে পাওয়া। এই অবস্থায় সেতু ভেঙে দিলে অনেক টাকা লোকসান। আবার অনেকের মতে, ভেঙে ফেলা ছাড়া গতি নেই। কারণ, যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করে সেতু চালু করাও সহজ কাজ নয়। বিশেষত, ওই সেতু নিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ওই সেতুর ফলে তাঁদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের কোনও সিদ্ধান্তে আসা বেশ কঠিক কাজ। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তাঁদের কাজ পরামর্শ দেওয়া। সেতু রাখা হবে, না কি ভাঙা হবে, তা ঠিক করবে সরকার।

Vivekananda flyover collapse Committee IIT Kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy