Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

১০০ ডায়ালে কুকথা, কঠোর হচ্ছে লালবাজার

আইনি ব্যবস্থা নিলে সবাই জব্দ। শুধু চোর-ডাকাত নয়, ১০০ ডায়ালে ফোন করে সাহায্য চাওয়ার বদলে পুলিশকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা লোকজনও। পুলিশ একটু কড়া হতেই তাই কিছুটা হলেও কমেছে এ ধরনের ফোনের সংখ্যা।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

আইনি ব্যবস্থা নিলে সবাই জব্দ। শুধু চোর-ডাকাত নয়, ১০০ ডায়ালে ফোন করে সাহায্য চাওয়ার বদলে পুলিশকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা লোকজনও। পুলিশ একটু কড়া হতেই তাই কিছুটা হলেও কমেছে এ ধরনের ফোনের সংখ্যা।

তবু কুকথার তোড় ছোটানো ফোন থামেনি। ব্যতিব্যস্ত লালবাজারের কন্ট্রোল রুম। কী রকম?

ফোন বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে রিসিভার তুললেন পুলিশ কনস্টেবল। ১০০ ডায়ালের ফোন বাজছে বলে কথা! ওই পুলিশকর্মী ভাবলেন, হয়তো কেউ বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছে বা কেউ ফোন করেছেন কোনও জরুরি খবর দিতে। কিন্তু রিসিভার কানে নিয়ে ‘নমস্কার কলকাতা পুলিশ’ বলতে না বলতেই তাঁর মুখ বিকৃত হয়ে গেল। অন্য প্রান্ত থেকে শোনা গেল অশ্রাব্য গালিগালাজ, পুলিশের উদ্দেশে।

অশ্রাব্য কথা ছুটছে তুবড়ির মতো। একটু থামতে কনস্টেবল বললেন, ‘আপনি অযথা গালাগাল করছেন কেন?’ ব্যস, ফের ছুটল কুকথার বন্যা। এ বার উত্তেজিত পুলিশকর্মী ভাবলেন, পাল্টা কড়া কিছু বলবেন তিনিও। কিন্তু পুলিশ ছুঁলে যেমন আঠারো ঘা, আবার গাল খেয়ে উল্টে গাল দিতে গেলে পুলিশকেই শেষে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই কোনও মতে নিজেকে সংযত করে নিলেন ওই কনস্টেবল।

লালবাজার সূত্রে খবর, বহুকাল ধরেই এ রকম অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে রোজ ফোন আসে লালবাজারের ১০০ ডায়ালে। বিরক্ত হন পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা। কেউ কেউ মেজাজ হারিয়ে পাল্টা খারাপ কথা বলেন বা হুমকি দেন। কিন্তু বাকিরা তখন তাঁকে এই বলে সামলান যে, শেষমেশ পুলিশকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।

লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে ১০০ ডায়ালের জন্য ১০টি রিসিভার। ১০ জন কনস্টেবল সর্বক্ষণ রয়েছেন ওই ফোন ধরার দায়িত্বে। ফলে তাঁদেরই ‘শিকার’ হতে হচ্ছে এই গালিগালাজের ফোনের।

এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে অবস্থা কিছুটা পাল্টেছে। গালিগালাজের ফোন পেলে লালবাজারের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশে এখন জেনারেল ডায়েরি করছে লালবাজার। কোন পুলিশকর্মী সেই ফোন ধরেছিলেন, কোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সবেরই উল্লেখ থাকছে জেনারেল ডায়েরিতে। পরে গোয়েন্দা বিভাগ নম্বর ধরে বার করছে, সেটি কার নামে নথিভুক্ত এবং আসলে কে সেই ফোন ব্যবহার করছেন।

লালবাজারের এক সহকারী কমিশনার জানাচ্ছেন, উপরতলা থেকে নির্দেশ আসার পরে প্রথম ক’দিন গালিগালাজের ফোনের নম্বরগুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, নিয়মিত যতগুলি নম্বর থেকে এ ধরনের ফোন আসছে, তার সংখ্যা গোটা দশেক। ওই সব নম্বর থেকে দিনে অন্তত এক বার পুলিশকে কুকথা ‘উপহার’ দিতে ১০০ ডায়ালে ফোন করা হয়। তাই মূলত জেনারেল ডায়েরি করা হচ্ছে ওই সব নম্বর থেকে ফোন এলেই। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এর বাইরেও বহু নম্বর থেকে আমাদের অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে ফোন আসছে। কিন্তু এই নম্বরগুলি থেকে ফোন আসে দু’-এক বার। আমরা জেনারেল ডায়েরি করছি ওই ১০টি নম্বর থেকে ফোন পেলে।’’

লালবাজার সূত্রে খবর, ওই ১০টি নম্বরই কিন্তু মোবাইলের। গালিগালাজের ফোন আপাতত কোনও ল্যান্ডলাইন থেকে আসছে না।

একটা সময়ে লালবাজারের কন্ট্রোল রুমের ২২১৪-৩২৩০ নম্বরে অকথ্য গালাগাল দিয়ে একটি মাত্র নম্বর থেকে নিয়মিত ফোন আসত। টিটাগড়ের সেই ব্যক্তিকে খুঁজে লালবাজারে নিয়ে আসা হয়। মামলাও রুজু করা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে জামিন পেতে বেশি সময় লাগেনি। এ সব ক্ষেত্রে আইনের ধারা এমনই।

এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গালিগালাজের ফোনের কথার রেকর্ড করে রাখারও নির্দেশ গিয়েছে কন্ট্রোল রুমে। মাস খানেক যাবৎ ওই রেকর্ডিং সংরক্ষিত থাকছে।

লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে ওই নম্বরে ফোন করে বলছি, আপনি তো ভদ্র মানুষ। পাড়ায় খোঁজ নিয়ে আমরা আপনার সম্পর্কে সেই রকমই জেনেছি। তা-ও এই ধরনের ফোন করে পুলিশকে বিরক্ত করছেন কেন? সতর্ক হোন।’’ এতে যে সবার ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে, তা নয়। সে সব ক্ষেত্রে স্থানীয় থানার পুলিশ সেই ব্যক্তির কাছে যাচ্ছেন অথবা তাঁকে ডাকা হচ্ছে।

এতেই কিছুটা হলেও এ ধরনের ফোন আসা কমেছে। আগে যেখানে দিনে সাত-আটটি জেনারেল ডায়েরি করতে হত কন্ট্রোল রুমকে, এখন সেখানে তিন-চারটির বেশি নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lalbazaar Slang phone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE