Advertisement
E-Paper

পরীক্ষার খাতা-সহ উধাও স্কটিশের ছাত্র, নিগ্রহ প্রধান শিক্ষককে

শনিবার প্রি-টেস্টের খাতা নিতে এসে স্কুল থেকে উধাও হয়ে যায় দশম শ্রেণির ছাত্র। সেই থেকে দু’দিন খোঁজ নেই তার। থানায় নিখোঁজ ডায়েরিতে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন তার বাড়ির লোকেরা। সঙ্গে পরিজনদের আরও অভিযোগ, এই ঘটনায় দায় রয়েছে স্কুল-কর্তৃপক্ষেরও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
(ডান দিকে) বিশ্বেশ্বর পাল ও তার মা (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র

(ডান দিকে) বিশ্বেশ্বর পাল ও তার মা (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র

শনিবার প্রি-টেস্টের খাতা নিতে এসে স্কুল থেকে উধাও হয়ে যায় দশম শ্রেণির ছাত্র। সেই থেকে দু’দিন খোঁজ নেই তার। থানায় নিখোঁজ ডায়েরিতে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন তার বাড়ির লোকেরা। সঙ্গে পরিজনদের আরও অভিযোগ, এই ঘটনায় দায় রয়েছে স্কুল-কর্তৃপক্ষেরও। তাই সোমবার, শিক্ষক দিবসেই স্কুলে ঢুকে ক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। অভিযোগ, ছাত্রের অভিভাবক-সহ বহিরাগত কিছু লোকের হাতে নিগৃহীত হন প্রধান শিক্ষক-সহ বেশ কয়েক জন শিক্ষক। বিক্ষোভের মুখে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক বিভাস সানিয়েল। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি উত্তর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের।

নিখোঁজ ওই ছাত্রের নাম বিশ্বেশ্বর পাল। বাড়ি কাঁকুড়গাছির উপেন্দ্রচন্দ্র ব্যানার্জি রোডে। পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে বাবার সঙ্গে স্কুলে এসেছিল বিশ্বেশ্বর। বিকেলে বাড়ি নিয়ে যেতে আসেন তার জ্যেঠু। তখনই জানা যায়, খোঁজ মিলছে না ওই পড়ুয়ার। এর পরেই বড়তলা থানায় অভিযোগ করা হয়।

স্কুল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সোমবার নিখোঁজ ছাত্রের অভিভাবক-সহ বাইরের অনেকেই প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকে মারধর করেন এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। যার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক। অবশেষে পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজে। ছাত্রের অভিভাবকেরা যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শুক্রবার প্রি-টেস্টের পদার্থ বিজ্ঞানের খাতা দেওয়া শুরু হয়েছিল। শনিবার বিশ্বেশ্বর তা নিতে স্কুলে আসে। স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানান, স্কুলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করার অপরাধে কয়েক মাস আগেই ক্লাস করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বেশ্বরের। কেবল পরীক্ষায় বসার অনুমতি ছিল তার। খাতা নেওয়ার পরে সে কোথায় গিয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বেশ্বরের জ্যেঠু অরুণ পাল জানান, ছোট ভাই শঙ্কর পাল রোজ বিশ্বেশ্বরকে স্কুলে নিয়ে আসেন এবং ফেরত নিয়ে যান। ওই দিনই শুধু তাকে নিতে গিয়েছিলেন অরুণবাবু। শনিবার দু’টোয় স্কুল ছুটি হয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দে়ড়টা থেকে স্কুলের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু তার দেখা পাইনি। ওর বন্ধুরা জানায়, ওরা ওকে দু’টো নাগাদ স্কুলের বাইরে দেখেছে।’’

অরুণবাবুর অভিযোগ, ‘‘স্কুলের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় অঙ্কের খাতায় কালি পরিবর্তন করে নম্বর বাড়ানোর অভিযোগে বিশ্বেশ্বরকে ক্লাস থেকে বরখাস্ত করা হয়। চার মাস আগে ঘটনাটি ঘটলেও বিষয়টি আমাদের জানাননি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ওর নিশ্চয়ই মানসিক অস্থিরতা ছিল। এত দিনে শুনলাম, ওকে ক্লাস করতে দেওয়া হত না। যদি ক্লাস করতে না-ই দেওয়া হয়, তা হলে সে রোজ স্কুলে আসত কেন, সেই ব্যাপারেও ধারণা স্পষ্ট নয়। বোধহয় বিশ্বেশ্বর নিজেও ভয় পেয়ে বিষয়টি বাড়িতে জানায়নি।’’

বিশ্বেশ্বরের বাবা শঙ্কর পাল বলেন, ‘‘স্কুল-কর্তৃপক্ষ তাকে ক্লাস করতে না দিয়ে প্রি টেস্টে কী করে বসতে দেন? এই বিষয়টি প্রমাণ করে ছেলেটিকে কী ভাবে হেনস্থা করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ।’’

স্কুল-কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, নিয়মানুযায়ী দশম শ্রেণির টেস্ট ছাড়া বাকি সব পরীক্ষার খাতা ছাত্রদের দেখানো হয়। সেগুলি দেখে তারা স্কুলে খাতাগুলি ফেরত দেয়। বিশ্বেশ্বর দশম শ্রেণির ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় অঙ্কে ২৭ নম্বর পেয়েছিল। কালির রং পরিবর্তন করে সেই নম্বরটি সে ৩১ করে ফেরত দেয় বলে অভিযোগ। তার এই দোষ প্রমাণিত হয় বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রটির অভিভাবকদের জানান। স্কুলের নিয়ম মেনেই এই ছাত্রকে শাস্তি দেয়। তাকে আর ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাকে স্কুলে আসতে বারণ করার পরেও সে কী করে স্কুলে আসে, তা বলা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বরখাস্ত হলে পরীক্ষায় কী করে বসতে অনুমতি পেল?

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ছেলেটি দশম শ্রেণির ছাত্র। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই প্রি-টেস্ট এবং টেস্টে বসার অনুমতি দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষক সুব্রত দাস বলেন, ‘‘শিক্ষক দিবসে স্কুল চত্বরে এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ছাত্রটি যে ভুল করেছে এবং সেই কারণেই যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা বারবার বলা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা শোনেননি।’’ বরং এই সব ঘটনা শুনে বিশ্বেশ্বরের আত্মীয়দের দাবি, তার উপরে মানসিক চাপ বাড়াচ্ছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

abduction scottish church
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy