Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পার্কে লোহার ব্যবসা, প্রশাসন দেখছেই

অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে মানিকতলা ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের পুরসভার পার্কটিতে হাজির হয়ে দেখা গেল, ভিতরে কোনও বসার জায়গা নেই। খেলাধুলোর সরঞ্জাম নেই। সদর দরজা পুরো খোলা। সেখানে লোহার ছাঁট বাছাইয়ে ব্যস্ত কয়েক জন শ্রমিক।

জবরদখল: নামেই উদ্যান।শনিবার, মানিকতলায়। নিজস্ব চিত্র

জবরদখল: নামেই উদ্যান।শনিবার, মানিকতলায়। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

এত দিন অভিযোগ ছিল, ফুটপাথ দখলের, রাস্তা দখলের। এ বার অভিযোগ, গোটা পার্ক দখলের। শুধু দখলই নয়। সেখানে চলছে ব্যবসাও।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে মানিকতলা ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের পুরসভার পার্কটিতে হাজির হয়ে দেখা গেল, ভিতরে কোনও বসার জায়গা নেই। খেলাধুলোর সরঞ্জাম নেই। সদর দরজা পুরো খোলা। সেখানে লোহার ছাঁট বাছাইয়ে ব্যস্ত কয়েক জন শ্রমিক। কাজের সুবিধায় পার্কের ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে লোহা ভর্তি ভ্যানরিকশা। তাঁদেরই এক জনকে প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, ‘‘পার্ক তো আগে ছিল! এখন লোহার ব্যবসা হয়!’’ পার্কের সদরের উপরে নীল-সাদা হরফে নামটা লেখা না থাকলে বোঝার উপায় ছিল না যে ওটা পার্ক!

মানিকতলা মেন রোড থেকে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড বরাবর খালপাড় জুড়ে পরপর তৈরি হয়েছে পার্কগুলো। মানিকতলা থানা সংলগ্ন একটি স্কুলের বিপরীতে রয়েছে একটি পার্ক। নাম লোকনাথ উদ্যান। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় আট বছর আগে পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই পার্ক তৈরি হয়েছিল। সেখানে এখন লোহা ছাঁটের মুক্ত কারখানা। বাসিন্দাদের মতে, সৌন্দর্যায়নের জন্য সে সময়ে খালপাড়ে একের পর এক পার্ক তৈরি হলেও এখন সেগুলির বেহাল দশা। কোনওটিতে দখল করে ব্যবসা চলছে, কোনওটি আবার অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে গিয়েছে। অথচ যে জন্য এই পার্ক, তার চিহ্ন নেই। বয়স্করা হাঁটতে পারেন না। ছোটরা খেলতে পারে না। উপরন্তু এলাকাবাসীর মাথাব্যথার অন্যতম কারণ এগুলো। স্বপন হাজরা নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘নামেই লোহার ফেন্সিং দেওয়া। এ ছাড়া পার্ক বোঝার উপায় নেই। লোকনাথ উদ্যান তো এখন লোহার কারখানা হয়ে গিয়েছে! কাউন্সিলর এবং মানিকতলা থানায় অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।’’

দু’নম্বর বরো অফিস সূত্রের খবর, ২০১০ সালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকাকালীন লোকনাথ উদ্যান তৈরি করান তৎকালীন কাউন্সিলর সাধন সাহা। বর্তমানে তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যানও বটে। সাধনবাবু বলেন, ‘‘আমি পার্কটা বানিয়েছিলাম। পরে যিনি এসেছেন তিনি নজর রাখেননি।’’ কিন্তু তিনি নিজেই তো বরোর চেয়ারম্যান! তবুও কেন পার্কের দখলদার হঠাতে পারলেন না? সঙ্গে সঙ্গে অন্য সুর বরো চেয়ারম্যানের গলায়। ‘‘আসলে ওই ব্যবসা পাড়ার ছেলেদের। তাই কিছু বলা যাচ্ছে না। এখনের কাউন্সিলরও একই কারণে বলতে পারছেন না।’’ বর্তমান কাউন্সিলর তৃণমূলের শুক্লা হোড়ের দাবি, ‘‘আমার আসার আগে থেকেই পার্ক দখল হয়ে পড়ে রয়েছে।’’

এ দিকে ওই পার্কে লোহার ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যবসায়ীর গলায় পুনর্বাসনের দাবি, ‘‘নতুন জায়গা না পেলে যাব কোথায়?’’ সব শুনে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, ‘‘কারওর ব্যক্তিগত কাজে পুরসভার পার্ক দখল হয়ে থাকলে সেটা অন্যায়। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE