E-Paper

প্রশিক্ষণ ছাড়াই পুর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞপ্তি ঘিরে প্রশ্ন

জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল পুরসভার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পুর বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তির নীচে ‘মিউনিসিপ্যাল কমিশনার’ বলে উল্লেখ থাকলেও তাঁর সই নেই।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৩
কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

স্কুলপড়ুয়াদের জন্য বর্ষাতি কেনা ঘিরে অনিয়ম, পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার সংস্কারে বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয়ের পরে এ বার দুর্নীতির অভিযোগ একাধিক পুর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে! কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে চুক্তিভিক্তিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। তাতে পাশ করা ১০০ জন শিক্ষককে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। কিন্তু অভিযোগ, ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ওই শিক্ষকেরা ডিএল এড-এর প্রশিক্ষণ নেননি। অথচ, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়মানুযায়ী, নিযুক্ত হওয়ার দু’বছরের মধ্যে শিক্ষকদের ডিএল এড বা বি এড ডিগ্রি পেতেই হবে।

সেই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষক-প্রশিক্ষণের কোনও উল্লেখ নেই।

সেই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষক-প্রশিক্ষণের কোনও উল্লেখ নেই।

পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল পুরসভার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পুর বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই অভিযোগ ওঠে, বিজ্ঞপ্তির নীচে ‘মিউনিসিপ্যাল কমিশনার’ বলে উল্লেখ থাকলেও তাঁর সই নেই। নিয়মমতো বিজ্ঞপ্তির শেষে তদানীন্তন পুর কমিশনারের নাম, সই, তারিখ উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু তা-ই নয়। বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের প্রশিক্ষণের কথা বলা তো হয়ইনি। বরং বলা হয়েছিল, তাঁদের অন্তত ছ’মাসের কম্পিউটার সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পুর শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার ফল ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বেরিয়েছে বলা হলেও ওই তারিখে ওয়েবসাইট খুলে কোনও তালিকা চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। অথচ ১৬ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সফল পরীক্ষার্থীদের শংসাপত্র যাচাইয়ের সাইট সার্চ করলে সেই তথ্য মিলছে। আবার ওই বছরের ৮ মার্চের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফল প্রার্থীদের চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বার বার খুঁজেও কোনও মেধা তালিকা মেলেনি।

গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি বলে অভিযোগ করে বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘‘পুর কমিশনার ওয়েবসাইটে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন। অথচ বিজ্ঞপ্তির নীচে তাঁর নাম বা কোন তারিখে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা নেই! এতেই প্রমাণিত, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে হয়নি।’’ কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ‘‘স্থায়ী হন বা অস্থায়ী, যে কোনও শিক্ষক নিয়োগে তাঁদের অবশ্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (ডিএলএড বা বিএড) হতে হবে। নিয়োগের সময়ে যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সেই প্রশিক্ষণ নেই, তা হলে দু’বছরের মধ্যে তাঁকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে হবে।’’

এ ব্যাপারে পুরসভার বর্তমান মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেন, ‘‘সেই সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। খোঁজ নিতে হবে।’’ নিয়োগের সময়ে দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে রাস্তা বিভাগের মেয়র পারিষদ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা (শিক্ষক) তো অস্থায়ী। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের দরকার নেই।’’

বাম প্রভাবিত ‘কলকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিনা প্রশিক্ষণে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো ঘোরতর অনিয়ম। অবিলম্বে যাতে ওই শিক্ষকদের ডিএল এড প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, সে বিষয়ে মেয়রকে চিঠি লিখব।’’

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন মেয়র ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তা বন্ধ ছিল। বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Municpal Corporation KMC School Teachers Municipal School

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy