Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Night Shelter

হাসপাতালে রাত্রিবাস মিলিয়ে দিচ্ছে উদ্বিগ্ন পরিজনেদের 

সঙ্কটের মুহূর্তে সেই পরিচয়েই এক পরিবারের পরিজন হয়ে উঠছে অন্য পরিবার।

 একসঙ্গে: এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের সামনে প্লাস্টিক পেতে বসে রোগীর আত্মীয়েরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

একসঙ্গে: এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের সামনে প্লাস্টিক পেতে বসে রোগীর আত্মীয়েরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

এক ঝলক দেখে মনে হতে পারে উদ্বাস্তু শিবির। হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পলিথিনের বিছানা। দু’টি ইটের ফাঁকে প্লাস্টিকের পাইপ, বাঁশ গোঁজা রয়েছে। খোলা আকাশের নীচে রাতে শিশির, মশা আর পোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে এমন অস্থায়ী ছাউনি গড়েছেন চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজনেরা। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ভবনের সামনে ঘরছাড়া পরিবারগুলি আদতে হাসপাতালবাসী। সঙ্কটের মুহূর্তে সেই পরিচয়েই এক পরিবারের পরিজন হয়ে উঠছে অন্য পরিবার।

শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন নদিয়ার ঘোড়াইক্ষেত্রের বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তারক দেবনাথ। বাইক দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান তারকবাবু। মঙ্গলবার থেকে তিনি এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ভবনে চিকিৎসাধীন। তাঁর পরিবারের পাশেই রয়েছে হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় জখম ছাত্র দিব্যাংশু ভগতের বাবা-মা। দিব্যাংশুর পরিবার ন’দিন ধরে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছে। রবিবার দুপুরে একাই সেখানে ছিলেন দিব্যাংশুর বাবা গোপীনাথ ভগৎ। ক্লান্ত বাবাকে তারকবাবুর মা বললেন, ‘‘বাবা আমাদের সঙ্গে দুটো ভাত-ডাল খেয়ে নাও। সকলে একসঙ্গে আছি, অল্প করে হলেও খাও।’’ অন্য এক রোগীর পরিজনকেও প্রধান শিক্ষকের মা বলে ওঠেন, ‘‘দাদা, আপনিও খেয়ে নিন। কম পড়বে না, সার জন্যেই আছে।’’ প্লেটে একে একে সকলের জন্যে ভাত বেড়ে থালা এগিয়ে দিলেন তিনি।

খোলা আকাশের নীচে এমন অসংখ্য আত্মীয়তা ছড়িয়ে রয়েছে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ভবন চত্বরে। শনিবার ঋষভ সিংহের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেই আত্মীয়তার টানেই প্রতিটি পরিবারের সদস্যেরা বাবা সন্তোষকুমার সিংহের শোকে শামিল হন।

হাসপাতাল চত্বরের এই সহাবস্থানে বিহারের বাসিন্দা সুরিন্দর সাহু এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপ্রিয়া মুদির মধ্যে পরিচয় হয়েছিল রোগীর পরিজন হিসেবে। ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন রামনন্দন সাহুর আত্মীয় সুরিন্দর জানান, হোটেলে থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করানোর আর্থিক ক্ষমতা নেই। এ দিকে, অস্ত্রোপচারের পরে রামনন্দন কবে সুস্থ হবেন তাও চিকিৎসকেরা নিশ্চিত ভাবে বলেননি। তাই বৃহৎ পরিবারের বাকিদের সঙ্গে পলিথিনের চাদর বিছিয়ে তাঁরাও হাসপাতালবাসী। বিষ্ণুপ্রিয়ার ১২ বছরের কিশোরী কন্যা লাবণি মুদি বাঁকুড়ার ভগবানপুর গ্রাম থেকে পুরুলিয়ার বকদিশা গ্রামে বরযাত্রীর সঙ্গে যাচ্ছিল। বাসের জানলা দিয়ে মুখ বাড়ানো লাবণীর মাথায় এসে লরির শিকল খুলে লাগে। দু’সপ্তাহ ধরে মেয়ের সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় মা।

এই অপেক্ষা পর্বের শরিক খানাকুলের কেকা জানাও। পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে কেকার আত্মীয় সুকুমার সাঁতরা (৬০) গত সোমবার থেকে চিকিৎসাধীন। পর্বতারোহণের সময়ে অভিযাত্রীরা যে তাঁবু ব্যবহার করেন, হাসপাতাল চত্বরে দিব্যাংশুর পরিবারের মতো তেমনই তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন সুকুমারবাবুর আত্মীয়েরা। কেকা জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীর পরিজনেরা এখানে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে ফাঁকা জায়গায় শুতে ভয় লাগে। জরুরি বিভাগের সামনে যেমন থাকার ব্যবস্থা আছে, তেমনই ট্রমা কেয়ারের সামনেও একটা ব্যবস্থা করে দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’’ এরই মধ্যে আগামিকাল, মঙ্গলবার বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন বিষ্ণুপ্রিয়া। কেকা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘চিন্তা করো না। আমাদের তাঁবু রয়েছেই।’’

এসএসকেএমের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘ট্রমা কেয়ারের রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য উডবার্ন এবং ইউরো-নেফ্রোলজি ভবনের মাঝে একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কাজের জন্যে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানও হয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE