Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রতারিতকে ৩২ লক্ষ দিতে নির্দেশ কোর্টের

কামারহাটির বাসিন্দা অনাথবন্ধু মুখোপাধ্যায় এবং ঝুমা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে অদ্রিজা গত বছর সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পরীক্ষায় বসেছিলেন। কিন্তু তাঁর র‌্যাঙ্ক পিছনের দিকে থাকায় এ রাজ্যে ভর্তির সুযোগ হয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সঞ্চিত অর্থের পুরোটাই একমাত্র মেয়ের উচ্চশিক্ষায় খরচ করেছিলেন বাবা। বিজ্ঞাপন দেখে মেয়েকে কর্নাটকের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানোর জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ হয়নি মেয়ের। উল্টে খোয়া গিয়েছে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ওই বেসরকারি সংস্থার কাছে একাধিক বার দরবার করেও টাকা ফেরত না পেয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। ৩১ অক্টোবর আদালত অভিযুক্ত বেসরকারি সংস্থাকে সাড়ে বত্রিশ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

কামারহাটির বাসিন্দা অনাথবন্ধু মুখোপাধ্যায় এবং ঝুমা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে অদ্রিজা গত বছর সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পরীক্ষায় বসেছিলেন। কিন্তু তাঁর র‌্যাঙ্ক পিছনের দিকে থাকায় এ রাজ্যে ভর্তির সুযোগ হয়নি। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন মারফত এক বেসকারি সংস্থার খোঁজ পেয়ে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল বিল্ডিংয়ে তাদের অফিসে যান। অনাথবন্ধুর কথায়, ‘‘গত বছরের অগস্টে মেয়েকে মেডিক্যালে ভর্তি করানোর জন্য ওই সংস্থার প্রতিশ্রুতি মতো তাদের সাতাশ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সংস্থার কথা মতো স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে কর্নাটকে এক সপ্তাহ হোটেলে থাকি। তখনই বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কর্নাটকে ওই সংস্থার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিশ্রুতি মতো কর্নাটকে ভর্তি করতে না পারায় ওঁরা তখন মেয়েকে বিদেশে ভর্তি করার কথা বলতে থাকেন। কিন্তু আমরা ওঁদের কথায় বিশ্বাস না করে কলকাতায় ফিরে আসি।’’

বর্তমানে ওই সংস্থার অফিস হাজরা মোড়ের কাছে। অনাথবন্ধুর অভিযোগ, ‘‘সাতাশ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংস্থার অফিসে বারবার দরবার করি। চারটি কিস্তিতে বাইশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলেও সব চেক বাউন্স করে।’’ তাঁর আরও দাবি, সংস্থা তাঁকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিলেও বাকি টাকা ফেরত দেয়নি। এর পরে বাধ্য হয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন অনাথবন্ধুর স্ত্রী ঝুমা মুখোপাধ্যায়।

গত ৩১ অক্টোবর রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত বাবা তাঁর একমাত্র কন্যার উচ্চশিক্ষায় সঞ্চয়ের পুরো টাকা খরচ করা সত্ত্বেও ভর্তি করাতে পারেননি।

উল্টে সংস্থার পাঠানো চেকও বাউন্স করে। অভিযুক্ত সংস্থার এমন অসাধু ব্যবসা হাল্কা ভাবে নেওয়া যায় না।’’ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত রায় বেরোনোর চল্লিশ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত সংস্থাকে বাইশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও দশ লক্ষ টাকা অভিযোগকারিণীকে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই রায় প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সংস্থার কর্ণধার নির্মাল্য নাগ বলেন, ‘‘আমরা অনাথবন্ধুবাবুকে পুরো টাকাই ফেরত দিচ্ছিলাম। সেই সময়ে উনি মামলা করেন। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’’ এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারিণীর আইনজীবী সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার মক্কেল অভিযুক্ত সংস্থার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।’’ রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের অনেক ভুয়ো সংস্থার হাতে অজস্র তরুণ-তরুণী প্রতারিত হচ্ছেন। এই ধরনের সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ জমা পড়ছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Education Consumer Forum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE