Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবাসিকদের ঘর ছাড়ার নোটিস, বিতর্কে ওয়াইএমসিএ

উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে বহু পুরনো ইয়ং মেন্স ক্রিশ্চান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমসিএ)-এর বিশাল বাড়ি।

বিবেকানন্দ রোডের এই পুরনো হস্টেলের আবাসিকদেরই উঠে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বিবেকানন্দ রোডের এই পুরনো হস্টেলের আবাসিকদেরই উঠে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

হস্টেলের আবাসিক তাঁরা। কেউ চাকরি করেন, কেউ ব্যবসা। কেউ আবার ছাত্র। প্রায় ৪৩ জন এমন আবাসিককে অবিলম্বে ঘর খালি করে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে। সে সবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন আবাসিকেরা। আর, সেই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন পাড়ার লোকেরাও। দীর্ঘদিন ধরে থাকতে থাকতে এই আবাসিকেরাও এখন পাড়ারই লোক।

উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে বহু পুরনো ইয়ং মেন্স ক্রিশ্চান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমসিএ)-এর বিশাল বাড়ি। এক সময়ে সেখানে টেবিল টেনিসের প্রশিক্ষণ হত। বিলিয়ার্ডস খেলাও হত। গত কয়েক বছর ধরে সে সবই বন্ধ। এখন সেখানে বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানের জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়। জামাকাপড়ের প্রদর্শনীও হয়। একটি অংশ ‘স্পা’-এর জন্যও ভাড়া দেওয়া হয়।

ওই বাড়ির পাশেই চারতলা পুরনো বাড়ি। আবাসিকদের হস্টেল। ১৮৯৪ সালে তৈরি ওই ছাত্রাবাস এখন কলকাতা পুরসভার ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ এর তালিকায়। এক সময়ে কবি জীবনানন্দ দাশও ওই বাড়িতেই থাকতেন। ৭ বাই ১১ ফুটের এক একটি ঘরে দু’জন করে আবাসিকের গাদাগাদি বসবাস। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই রক্ষণাবেক্ষণ তেমন হয় না। অযত্নের ছাপ যত্রতত্র। অভিযোগ, উত্তর কলকাতার এমন জমজমাট এলাকায় এতটা জমিতে প্রোমোটিং করতে চাইছেন ওয়াইএমসিএ কর্তৃপক্ষ। সেই

কারণে, খালি করে দিতে চাওয়া হচ্ছে ওই বাড়ি।

গত ২০ বছর ধরে সেখানে থাকেন অসমের বাসিন্দা বাবুল দত্ত। কলকাতায় এসেছিলেন ব্যবসা করতে। তাঁর মতো মূলত ভিন্‌ রাজ্য বা দূরের জেলা থেকে কলকাতায় আসা লোকজনের সস্তায় থাকার সুবিধা রয়েছে ওয়াইএমসিএ-র হস্টেলে। শুধু কলকাতায় নয়, অন্য অনেক রাজ্যেও ওয়াইএমসিএ-র এ রকম হস্টেল রয়েছে। অনেকে বেড়াতে গিয়েও থাকেন।

বাবুলবাবু জানান, গত দু’ বছর ধরে সেখানে আবাসিক নেওয়া বন্ধ রয়েছে। যাঁরা পুরনো তাঁরাই আছেন। ৪৬টি ঘরের প্রায় বেশির ভাগই খালি পড়ে রয়েছে। মাসে ১৪০০ টাকা করে ভাড়া। এ ছাড়া খাওয়ার খরচ আলাদা। অগস্ট মাসে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে হস্টেল খালি করে দিতে। কিন্তু, সেই নোটিসের বিরোধিতা করেছেন আবাসিকেরা। সঙ্গে জুটছেন পাড়ার লোকজনও। আবাসিকদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে ওয়াইএমসিএ কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেও লাভ হয়নি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

আবাসিকদের পাশে দাঁড়ানো পাড়ার বাসিন্দা ভাস্কর চক্রবর্তীর কথায় — ‘‘এত দিন পাশাপাশি থেকে একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিছু দিন আগে আমাদের পাড়ায় হিন্দু হস্টেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে যাঁরা কলকাতায় পড়তে বা চাকরি করতে আসেন, তাঁরা কোথায় যাবেন?’’

ওয়াইএমসিএ-র সাধারণ সম্পাদক নীলাদ্রি রাহার দাবি, কোনও আবাসিককেই উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু, বাড়িটির অবস্থা খারাপ। সেটা সারানো দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘যে হেতু হেরিটেজ ভবন, তাই কী ভাবে সেটি সারানো যায় তা পুরসভার কাছে জানতে চেয়েছি। পুরসভা দল পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করে জানাবে।’’

পুরসভার হেরিটেজ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কী ভাবে নথিভুক্ত সংস্থাকে দিয়ে ওই হেরিটেজ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সারানোর কাজ তাঁরা করবেন, তা অবিলম্বে ওয়াইএমসিএ কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Heritage Building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE