Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Tripura

যন্ত্রণার বিদেশ-জীবন শেষে ফেরার পরেও অসহায় যুবক

গত কয়েক বছর জীবিকার সন্ধানে ছিলেন শারজায়। বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর দোকানে চাকরি করছিলেন। 

বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরে সইফুল আলি। নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরে সইফুল আলি। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৩
Share: Save:

বিদেশ থেকে এসে অচেনা শহরে নেমে সাহায্যের জন্য পাশে পেয়েছিলেন এক নিরাপত্তারক্ষীকে। আবার অনেকে যে সাহায্য করার কথা বলেও মুখ ঘুরিয়ে নেন, তারও সাক্ষী থেকেছেন তিনি।

চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। কথা বলতে বলতে চোখ মুছছিলেন। বৃহস্পতিবার শুনশান বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বিভীষিকাময় দু’মাসের গল্প শোনাচ্ছিলেন ত্রিপুরার কৈলাশহরের বাসিন্দা, বছর চব্বিশের সইফুল আলি। বাবা-মাকে ছেড়ে গত কয়েক বছর জীবিকার সন্ধানে ছিলেন শারজায়। বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর দোকানে চাকরি করছিলেন।

লকডাউনের মুখে দোকান বন্ধ করে বাংলাদেশে ফিরে যান মালিক। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সইফুলের। বহু চেষ্টাতেও দেশে ফেরার টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। রাস্তায় ঘুরে কার্যত ভিক্ষে করে দিন কাটছিল। অধিকাংশ দিন থাকতেন অভুক্ত।

মাস দেড়েক আগে শারজার একটি পার্কে পানীয় জল বিক্রি করার সময়ে স্থানীয় পুলিশ সইফুলকে তুলে নিয়ে যায়। ঠিকানা হয় জেল। সইফুলের কথায়, ‘‘দিনে একটা, রাতে একটা করে রুটি দিত জেলে। দুপুরে সামান্য খাবার। পেট ভরত না। অনেক ভারতীয় এখন ওখানকার জেলে আছেন। তাঁদের মধ্যে বাঙালিও আছেন অনেকে।’’

বুধবার শারজার পুলিশ তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেয়। এর পরে কোনও ব্যাগ ছাড়াই সইফুলকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে বেঙ্গালুরু হয়ে কলকাতা ফেরার টিকিট। বুধবার রাতে পৌঁছন কলকাতায়। মোবাইল বন্ধ। কী করে ত্রিপুরার বাড়িতে ফিরবেন, জানেন না ওই যুবক।

বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল থেকে শারজায় বন্ধুকে ফোন করে কলকাতা-আগরতলা উড়ানের টিকিট কাটিয়ে তা নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইলে আনিয়ে নেন তিনি। ওই রক্ষী টিকিটের প্রিন্ট আউট বার করে দেন সইফুলকে। এমন এক সহৃদয় ব্যক্তির পাশাপাশি এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গেও দেখা হয়েছে সইফুলের, যিনি তাঁকে জানান, তিন হাজার টাকা পেলে তিনি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। সইফুল জানান, তাঁর কাছে অত টাকা নেই। অভিযোগ, তখন সেই ট্যাক্সিচালক তাঁকে প্রায় মারতে আসেন।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষীকে সইফুল সে কথা জানালে তাঁকে বিমানবন্দরের বাইরে চেয়ারে বসতে বলা হয়। বুধবার সারা রাত সে ভাবে কেটেছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন, সারা রাত বিমানবন্দরে থেকে আজ শুক্রবার ভোরে উড়ে যাওয়ার কথা আগরতলায়। সইফুল বলেন, ‘‘সঙ্গে ১২০০ টাকা আছে। কী ভাবে আগরতলা থেকে বাড়ি পৌঁছব জানি না।’’

বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে বেশ কিছু যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। লকডাউনে সব উড়ান বন্ধ। তাঁরা সকলেই আজ শুক্রবারের উড়ান ধরবেন বলে ২৪ ঘণ্টা আগে পৌঁছে গিয়েছেন। বেশির ভাগ যাত্রীই প্রথম বিমানে উঠছেন। কেউ এসেছেন উত্তর দিনাজপুর থেকে, কেউ মালদহ, কেউ ঝাড়খণ্ড থেকে। তাঁরা সকলেই যাচ্ছেন কাজে। কেউ কেরলে, কেউ বা বেঙ্গালুরু, কেউ আবার হায়দরাবাদে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Sharjah Kolkata Airport Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE