যথা পূর্বং: লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার প্রথম দিনেই শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উপচে পড়া ভিড়। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
আসল পরীক্ষা শুরু আজ, সোমবার। রবিবার ছিল তার ‘ওয়ার্ম-আপ’ ম্যাচ। কিন্তু সেখানেই যে দৃশ্য চোখে পড়ল, তাতে আজ, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে রেলে যাতায়াতের বিধি কতটা মেনে চলা যাবে, সেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বরং করোনা সংক্রমণ আরও লাগামছাড়া হবে কি না, বড় হয়ে উঠছে সেই প্রশ্নটাই। যদিও রেল চালু করার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে তৃণমূলের একাংশের দাবি, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে কিছুটা সুরাহা করতে পারে রেলপথ। সেই ভাবনা থেকেই আপাতত লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ছ’মাস বন্ধ থাকার পরে রবিবার থেকে রেলের চাকা গড়ালেও গত কয়েক মাসে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছে স্টেশনে স্টেশনে। খাতায়-কলমে ‘স্টাফ স্পেশ্যাল’ হলেও সেই ট্রেনে উঠেছেন সবাই। তাই প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির উপরে রেলে যাতায়াতের প্রভাব তেমন পড়ছে না দেখেই আপাতত লোকাল চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কামরায় দূরত্ব-বিধি মানা কোনও ভাবেই নিশ্চিত করতে না পারার বিষয়টি চিন্তায় রেখেছে প্রশাসনের বড় অংশকে।
এ দিন কলকাতা ও হাওড়া থেকে শহরতলি বা জেলায় যাওয়া-আসার ট্রেনে দূরত্ব-বিধি না মানার ছবিই সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে। ছুটির দিন হলেও সকালে সোনারপুর থেকে শিয়ালদহগামী ট্রেনে ছিল ঠাসা ভিড়। গেটে ঝুলে গিয়েছেন অনেক যাত্রী। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার কিছু ট্রেনে অনেকেরই মুখে মাস্ক ছিল না বলে অভিযোগ। মাস্কহীন অবস্থায় ধরলেই যে জরিমানা করার কথা রেল পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল, তা-ও কার্যত বেশির ভাগ জায়গায় কার্যকর হয়নি বলে দাবি। দীর্ঘ দিন ঘুরপথে যাতায়াত করা এক রেলযাত্রী এ দিন বললেন, ‘‘সরকারই বাঁচিয়ে দিল। জ্বালানির যা দাম, তাতে গাড়ি বা বাসে যাতায়াত করতে গেলে কত গচ্চা দিতে হতে পারে, ভেবেই ভয় পাচ্ছিলাম।’’
ট্রেন বন্ধের জেরে এক সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া, ডানকুনির বাসিন্দা সুধীর দত্ত বললেন, ‘‘ট্রেন চালু হচ্ছে জেনেই আমার সংস্থার মালিককে ফোন করেছিলাম। তিনি কাজে চলে আসতে বলেছেন।’’ বিধাননগর থেকে বারাসত পর্যন্ত ট্রেনে করে গিয়ে দেখা গেল বিধিভঙ্গের ছবি। দু’টি আসনের মাঝে কাটা জায়গায় এক যাত্রীকে বসতে দেখে আর এক যাত্রীর মন্তব্য, ‘‘কয়েক দিন বসে নিন, কালীপুজোর উপহার হিসেবে ট্রেন চলছে। পরে কী হবে, কেউ জানে না।’’ শিয়ালদহ স্টেশনে নামার সময়ে কয়েক জন আবার বললেন, ‘‘এত দিন সরকারি ঘোষণা ছাড়া যে ট্রেন চলছিল, তার সংখ্যা কম হওয়ায় এত ভিড় হচ্ছিল যে, তাস খেলার জায়গা থাকছিল না। এ বার সরকার ছাড়পত্র দেওয়ায় ট্রেন বাড়বে, শান্তিতে তাসও খেলা যাবে।’’
শিয়ালদহ রেল পুলিশের এক কর্মী অবশ্য দিনের শেষে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘৫০ শতাংশ যাত্রীর নিয়ম বাস-অটোর মতো ছোট গণপরিবহণেই করা যায়নি, আর এ তো ভারতীয় রেল!’’ তাই বিধিনিষেধ মেনে চলা যাত্রী, না কি জনতার বেপরোয়া মনোভাব— কার পাল্লা ভারী, তা স্পষ্ট করে দেবে সোমবার সকালের আবহাওয়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy