Advertisement
E-Paper

লকডাউনে মানুষ থেকে পশু-পাখী, সবার খাবার পৌঁছচ্ছে পুলিশ

এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘চাকরির শুরু থেকে এ রকম অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। যখন সবাই ঘরবন্দি তখন, এই অভিজ্ঞতা একদম নতুন।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ১৯:৩৬
খাবার তুলে দিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। —নিজস্ব চিত্র

খাবার তুলে দিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। —নিজস্ব চিত্র

সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার পাশে খাঁচায় পাখি পোষা হয়েছিল। কিন্তু এই লকডাউনের সময়ে সেই পাখিদের খাবার পৌঁছে দেবে কে?

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জানবাজার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে সেই পাখিদের একটা বন্দোবস্ত করার আর্জি জানান এক বাসিন্দা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই দিন রাতেই পুলিশ এবং চিড়িয়াখানাকর্মীরা খাঁচা বন্দি কয়েকশো পাখিকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন আলিপুর চিড়িয়াখানায়। পাখিদের মতো শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পথ কুকুররাও যাতে অনাহারে না থাকে তাঁর জন্যও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে খাবার পৌঁছতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি চলছে দুঃস্থ মানুষদের খাওয়ানোর কাজও। প্রতিটি থানার আধিকারিকরাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দু’বেলা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন সেই সমস্ত মানুষদের কাছে যাঁরা সম্বলহীন।

নিউমার্কেট থানা এলাকার মট লেন। সেখানে ৬ নম্বর মট লেনে রাস্তার ধারে রয়েছে ৫টি বড় খাঁচা। প্রত্যেকটি খাঁচাতেই রয়েছে রং-বেরঙের পাখি। সব মলিয়ে কয়েকশো। ২০১৫ সালে স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে এলাকার সৌন্দর্যায়নের জন্য শুরু হয়েছিল পাখি পোষা। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর পাখিকে খাওয়ানোর কেউ নেই। অনাহারে মরতে বসেছে কয়েকশো পাখি। রাতেই লালবাজারের নির্দেশে ওয়াটগঞ্জ থানার আধিকারিক অঞ্জন সেন চিড়িয়াখানার আধিকারিকদের নিয়ে পৌঁছন মট লেনে, উদ্ধার করা হয় পাখি। সমস্ত পাখিকে নিয়ে যাওয়া হয় চিড়িয়াখানায়।

খাবার দেওয়া হচ্ছে পাখিদের খাঁচায়। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে অন্তত ২৩ জনকে সংক্রমিত করেছেন পঞ্জাবের করোনা-আক্রান্ত

পাখির মতোই বেহাল দশা পথ কুকুরেরও। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশেষ করে অফিস পাড়ায় যেখানে বাড়ি নেই, সেখানে এই পশুদের খুব খারাপ অবস্থা। কারণ সমস্ত খাবার-দোকান-অফিস বন্ধ। ফলে কোথাও থেকে খাবার পাচ্ছে না ওই পশুরা।” একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এই সমস্ত পশুদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। ওই শীর্ষ পুলিশ কর্তাকেও দেখা যায় পোষ্যদের খাওয়াতে।

এর পাশাপাশি প্রশাসনের নির্দেশে কলকাতার প্রতিটি থানা নিজেদের এলাকায় সম্বলহীন মানুষদের দু’বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। মূলত, যাঁরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, যাঁদের লকডাউনের ফলে রোজগার বন্ধ এবং যাঁরা ভবঘুরে— তাঁদের সবাইকে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলি‌শ কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই উল্টোডাঙা, বেলেঘাটা, মানিকতলা-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকর্মীরা স্থানীয় ব্যবসায়ী বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় দুঃস্থ মানুষদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। ডিসি (পূর্ব শহরতলি) অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘এলাকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাঁরা একা থাকেন, তাঁদেরও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। তাঁদের কোনও জিনিস প্রয়োজন হলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমরা।”

খাবার পাচ্ছে পথ-কুকুররাও। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: জ্বর না থাকলেও করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধের চিকিৎসা চলছে ভেন্টিলেশনে রেখে

শহর জুড়ে চোর-ডাকাত ধরে যাঁদের প্রতিটা মুহূর্ত কাটত এত দিন, তাঁরাই এখন অন্য ভূমিকায়। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘চাকরির শুরু থেকে এ রকম অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। যখন সবাই ঘরবন্দি তখন, এই অভিজ্ঞতা একদম নতুন।”

যদিও তার মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কালীঘাট থানা এলাকার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ কয়েকটি বাড়ি থেকে একাধিক বিড়াল খাঁচা বন্দি করে নিয়ে গিয়েছে। বিড়ালগুলি বিভিন্ন বাড়ির পোষ্য। যাঁদের পোষ্য, তাঁদের অনুমতি ছাড়াই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওই বিড়ালগুলিকে। যদিও কালীঘাট থানার দাবি, ওই এলাকার মানুষ থানায় লিখিত অভিযোগ করায়, পশুপ্রেমী সংস্থার সহযোগিতায় ওই বিড়ালগুলি খাঁচাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বিড়ালগুলি কারও পোষ্য হলেও, প্রাণীগুলি এলাকায় নোংরা করছে। তাই অন্যন্য রোগের সংক্রমণ রুখতেই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।

Coronavirus Coronavirus in India Lockdown Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy