Advertisement
E-Paper

সহায়হীন প্রবীণদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন ‘ধনুদা’

ওঁদের কারও আত্মীয়-পরিজন থেকেও নেই। কারও হয়তো নেই ওষুধ কেনার সামর্থ্যটুকুও। আবার ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না কেউ কেউ। কিন্তু, প্রতি মাসের পয়লা তারিখে ওঁরা এসে লাইন দেন আগরপাড়ার একটি ক্লাবের সামনে। চা খেয়ে, খাতায় সই বা টিপছাপ দিলেই তাঁদের হাতে চলে আসে আড়াইশো টাকা!

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৭
‘ধনুদার ভাতা’ নেওয়ার লাইন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

‘ধনুদার ভাতা’ নেওয়ার লাইন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ওঁদের কারও আত্মীয়-পরিজন থেকেও নেই। কারও হয়তো নেই ওষুধ কেনার সামর্থ্যটুকুও। আবার ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না কেউ কেউ।

কিন্তু, প্রতি মাসের পয়লা তারিখে ওঁরা এসে লাইন দেন আগরপাড়ার একটি ক্লাবের সামনে। চা খেয়ে, খাতায় সই বা টিপছাপ দিলেই তাঁদের হাতে চলে আসে আড়াইশো টাকা!

না, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে জমানো টাকার সুদ পেতে ওঁরা এই লাইন দেন না। সরকারি দফতর থেকে ভাতা পেতেও এই লাইন নয়। এ হল ‘ধনুদার ভাতা’ পাওয়ার লাইন। ‘ধনুদা’, অর্থাৎ পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত।

অনুপমবাবুর প্রচেষ্টাতেই তিন বছর ধরে প্রতি মাসে স্থানীয় ক্লাব থেকে ৪০ জন অসহায় প্রবীণের হাতে তুলে দেওয়া হয় আড়াইশো টাকা। কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘ক্লাব-সদস্যেরা প্রতি মাসে তহবিলে সামর্থ্য মতো টাকা জমা দেন। তা থেকেই ওই সব মানুষের হাতে ২৫০ টাকা করে তুলে দেওয়া যায়।’’

সম্প্রতি ওই ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা গেল, ভাতা নেওয়ার লাইনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। তাঁদেরই এক জন, মিনতি ভাদুড়ী লাঠিতে ভর করে এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘কেউ দেখার নেই। টাকা পেয়ে চা, বিস্কুট কিনব। এই ক’টা টাকাই বা কে দেয়!’’

এর মধ্যেই অনুপমবাবু এবং ক্লাবের সদস্যেরা এসে টাকা দেওয়া শুরু করলেন। ক্লাবের কাছে একটি খাতায় প্রত্যেক প্রাপকের নাম-ঠিকানা লেখা। খাতায় সই করে বা টিপছাপ দিয়ে ২৫০ টাকা হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সেরিব্রালে আক্রান্ত শিপ্রা বিশ্বাস। বছর দুই আগে একটি স্কুলে পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে কিছু করতে পারেন না। শিপ্রাদেবী বললেন, ‘‘চাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ একটু চাল, পাউরুটি কিনতে পারব।’’

শুধু মিনতিদেবী বা শিপ্রাদেবীই নন। বিবেকানন্দ পল্লির ভুবন রায় বললেন, ‘‘চার ছেলের কেউ ভাত দেয় না। বাড়িতে সবই আছে, শুধু আমি ছাড়া। ধনু এই টাকা না দিলে হয়তো বাঁচতাম না।’’

হঠাৎ এমন ভাবনা? অনুপমবাবু জানালেন, ২০১৩ সালে কালীপুজোর দিন কয়েক জন গরিব মানুষ এসে ভাতার আবেদন করেন। কিন্তু তাঁদের কাগজ ঠিক না থাকায় সেই বন্দোবস্ত করা যায়নি। তখনই ক্লাবের তরফে আলোচনা করে ঠিক করা হয়, যাঁরা লাল ফিতের ফাঁসে আটকে ভাতা পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য কিছু করা হোক। এর পরেই স্থানীয় গরিব মানুষদের তালিকা তৈরি করা হয়। অনুপমবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা এখন সরকারি ভাতা পাচ্ছেন, তালিকা থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু এই টাকা বিলোতে গিয়ে তো কটাক্ষও শুনতে হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে হাসলেন অনুপমবাবু। বললেন, ‘‘ভাল কাজের সমালোচনা তো থাকবেই। তবে মাসের পয়লা তারিখে দরিদ্র মানুষগুলোর মুখে হাসি দেখে সব ভুলে যাই।’’

Anupam dutta Poor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy